বিশ্ব অবরুদ্ধ হলেও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে চীনের অর্থনীতি

প্রকাশ | ২৫ মার্চ ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
করোনাভাইরাসের প্রকোপে প্রায় তিন মাস ধরে থমকে থাকার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি ও ভাইরাসটি বিস্তারের কেন্দ্র চীন। বাকি বিশ্ব করোনায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকি বাড়লেও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত করার সম্ভাবনা নিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছে চীন সরকার। খবর বস্নুমবার্গ। শুক্রবার থেকে মহামারি নিয়ন্ত্রণের সাফল্য ও চীনের আশাবাদী আউটলুকের অংশ হিসেবে অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় শুরুর আভাস দিয়ে আসছেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। উলেস্নখ্য, চীনের অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে একই সময়ে মৃতু্যহার বাড়তে থাকায় ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের কার্যক্রমের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এর প্রভাবে বাহ্যিক চাহিদার পতন ও আরও কর্মসংস্থান হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে চীন। অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছেন, মাও যুগের অবসানের পর চলতি বছর প্রথমবারের মতো সবচেয়ে দুর্বল প্রবৃদ্ধি দেখবে দেশটি। রোববার বেইজিংয়ে সাংবাদিকদের পিপলস ব্যাংক অব চায়নার উপগভর্নর চ্যান ইউলো বলেন, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থনৈতিক সূচকগুলোতে উলেস্নখযোগ্য উন্নতি দেখা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চীনের অর্থনীতি দ্রম্নততার সঙ্গে সম্ভাব্য উৎপাদনপর্যায়ে ফেরত আসবে বলে জানিয়েছেন। গত বছরের শেষ দিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করা ভাইরাসটি রোধে ফেব্রম্নয়ারিতে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করে চীন। ফলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত হয়ে পড়ায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতি সংকুচিত হবে বলে পূর্বাভাস করা হয়েছে। এদিকে সরকার তার বর্তমান মধ্যপন্থি প্রণোদনা নীতিমালা অব্যাহত রাখতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন চ্যান। এখন পর্যন্ত করনীতি সমন্বয়, সুদহার কর্তন, নিম্নসুদের ঋণ ও অতিরিক্ত তারল্যের মতো পদক্ষেপ বহাল রেখেছে দেশটি। কিন্তু চীনের এসব পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে গৃহীত ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের রাজস্ব সহায়তা কর্মসূচি ও ব্যাপক সুদহার কর্তনের মতো পদক্ষেপের একেবারে বিপরীত। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং বলেন, অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা ও কর্মসংস্থানের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সরকার 'অনুকূল' নীতিমালা গ্রহণ করতে পারে। এর আগে তিনি জানিয়েছিলেন, চীনের সিংহভাগ অঞ্চল ভাইরাস বিস্তারের 'কম ঝুঁকি'তে রয়েছে এবং জনগণ স্বাভাবিক জীবন ও কর্মচাঞ্চল্যে ফিরে আসতে পারবে। চীনের বেশ কিছু স্থানে কারখানা ও কর্মস্থলগুলোতে স্বাভাবিকতা ফিরে আসার হার বাড়তে দেখা গেছে। বস্নুমবার্গ ইকোনমিকসের প্রাক্কলন অনুসারে, দেশটিতে ৮৫ শতাংশ কার্যক্রম গতি পেয়েছে। কেবল চীনে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার কেন্দ্র হুবেই প্রদেশ এখনো কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসার বাইরে রয়েছে। বস্নুমবার্গ ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ ডেভিড কু বলেন, জনগণের কাজে ফেরা অব্যাহত থাকলেও তার গতি অনেক ধীর হবে। শিল্পখাতও প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে তৃতীয় স্তরের শিল্প ও ক্ষুদ্র ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠানগুলো মনোযোগে রয়েছে। তবে চাহিদা এখনো নিস্তেজ রয়েছে, বিশেষত সেবাখাতে। গত বৃহস্পতিবার চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, প্রধান রপ্তানি ও আমদানি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ৭০ শতাংশ কাজে ফিরে এসেছে। এ মুহূর্তে উৎপাদন সক্ষমতা ৭০ শতাংশের ওপরে রয়েছে। কিন্তু কর্মীরা এমন একটি সময়ে উৎপাদনে ফিরে আসছেন, যখন উন্নত দেশগুলো একের পর এক অবরুদ্ধ হওয়ায় চাহিদা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উৎপাদনখাতে স্বাভাবিকতা দ্রম্নত ফিরে এলেও রেস্তোরাঁ ও হোটেলের মতো সেবা খাতগুলোর ঘুরে দাঁড়ানোর হার অনেক কম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, খাতটিতে ৬০ শতাংশ স্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে।