রপ্তানিমুখী কারখানা শ্রমিকদের মজুরি

পাঁচ হাজার কোটি টাকা তহবিলের নীতিমালা জারি

প্রকাশ | ০৪ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রপ্তানিমুখী কারখানার শ্রমিকদের মজুরি দিতে ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিলের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার একটি নীতিমালা জারি করেছে। শর্ত অনুযায়ী, কমপক্ষে ৮০ শতাংশ রপ্তানি হয়, এমন কারখানা সচল হিসেবে চিহ্নিত হবে। বিনা সুদে এ তহবিল থেকে ঋণ পাবে তারা। যেসব কারখানা গত ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রম্নয়ারি মাসের শ্রমিকদের নিয়মিত বেতন দিয়েছে, তারাই বিবেচিত হবে সচল প্রতিষ্ঠান হিসেবে। ঋণ পেতে পাশাপাশি ওই তিন মাসের রপ্তানি কার্যক্রমও থাকতে হবে তাদের। বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করে তার মধ্যে যেকোনো একটি ব্যাংক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তিন মাসের বেতন বই পরীক্ষানিরীক্ষা করবে। এর পরই ঋণের জন্য ব্যাংকে আবেদন করতে পারবেন কারখানার মালিকরা। তবে তিন মাসে যা বেতন দেওয়া হয়েছে, গড়ে তার চেয়ে বেশি ঋণের জন্য আবেদন করা যাবে না। ঋণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো সুদ নেবে না, তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ২ শতাংশ পর্যন্ত মাশুল নিতে পারবে। নীতিমালায় বলা হয়, ব্যাংকগুলো ঋণের জন্য আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে থেকে ঋণ নেবে। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানকে দেবে। ২০ এপ্রিলের মধ্যে ঋণের জন্য আবেদন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক তিন দফায় তিন মাসের বেতনের টাকা দেবে। এটা শুরু হবে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে, চলবে জুন পর্যন্ত। নীতিমালা অনুযায়ী, বেতনের টাকা সরাসরি শ্রমিকের ব্যাংক হিসাবে পাঠিয়ে দেবে ব্যাংক। যাদের হিসাব নেই, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ভিত্তিতে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব (এমএফএস) খোলার উদ্যোগ নিতে হবে। শ্রমিকরা চাইলে বিনা মাশুলের ব্যাংক হিসাবও খুলতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে অবশ্যই শ্রমিকদের এনআইডি পরীক্ষা করতে হবে। আরও বলা হয়েছে, এ ঋণের টাকা বাংলাদেশ ব্যাংককে ২ বছরের মধ্যে শোধ করবে ব্যাংকগুলো। এজন্য প্রথম ৬ মাস ঋণ পরিশোধে বিরতি পাবে, পরের ১৮ মাসে ১৮ কিস্তিতে টাকা শোধ দিতে হবে। এদিকে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে এ পর্যন্ত দেশের তৈরি পোশাক খাতের এক হাজার ৯৭টি কারখানায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন কারখানার মালিক ও শ্রমিকরা। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্রতি মুহূর্তে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তাদের ক্রেতারা ক্রয় আদেশ স্থগিত করছেন। তারা বলছেন স্থগিত, তবে আমাদের জন্য এটি স্থগিত নয় বাতিল। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল ১০টা পর্যন্ত দেশের তৈরি পোশাক খাতের এক হাজার ৯৭টি কারখানার ৯৪ কোটি ৫৩ লাখ ১০ হাজারটি পোশাক পণ্যের রপ্তানি আদেশ বাতিল ও স্থগিত করা হয়েছে। যার আর্থিক পরিমাণ ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ৩০১ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ২৫ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা (বিনিময় হার ৮৫ টাকা ধরে)। রপ্তানি আদেশ বাতিল হওয়া এসব কারখানায় ২১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন বলে জানান বিজিএমইএর সভাপতি। এদিকে দেশের রপ্তানি খাতের সিংহভাগ তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরশীল। তাই এ খাতের নেতিবাচক প্রভাব পুরো রপ্তানি বাণিজ্যে আঘাত হানে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রম্নয়ারি) পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ২ হাজার ১৮৪ কোটি ৭৪ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ কম। একই সময়ে রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও কমেছে ৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ। অন্যদিকে, পোশাক ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে আমেরিকা, ইউরোপ ও কানাডা লকডাউন হয়ে আছে। ফলে প্রত্যেক দেশের ক্রয় আদেশগুলো স্থগিত করে বার্তা পাঠাচ্ছে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এতে করে বড় সংকটের মুখে পোশাক খাত। ঝুঁকিতে পড়বে রপ্তানি বাণিজ্য। তাই কঠিন এ সংকটময় মুহূর্তে বায়ারদের ক্রয় আদেশ স্থগিত না করার আহ্বান জানিয়েছেন পোশাক মালিকরা। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তৈরি পোশাক শিল্পে এখনই নেতিবাচক প্রভাব দেখছি। এটা সামনে আরও নেতিবাচক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নিটওয়ারে পাঁচ দশমিক সাত শতাংশ ঋণাত্মক। ওভেনওয়ারের ক্ষেত্রে পাঁচ দশমিক নয় শতাংশ ঋণাত্মক। হোম টেক্সটাইলে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ ঋণাত্মক। এ থেকে সহজেই বুঝতে পারছি করোনার প্রভাবে আগামী কয়েক মাসে এটা আরও ঋণাত্মক হতে পারে।