৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ অসম্ভব

প্রকাশ | ০৪ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি রিপোর্ট করোনাভাইরাসের মহামারি থেকে বাঁচতে ব্যাংক থেকে টাকা তোলা শুরু হয়েছে ব্যক্তি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর। ফলে পর্যাপ্ত তহবিল না থাকার কারণে সরকার নির্ধারিত ৯ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়নের সক্ষমতা কমছে ব্যাংকগুলোর। বিশ্লেষকরা বলছেন, এক অংকের সুদে ঋণ বিতরণের জন্য এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে তহবিল সরবরাহ করতে হবে ব্যাংকগুলোতে। চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের সুদ ৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় ২৪ ফেব্রম্নয়ারি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এরই মধ্যে নীতিমালা ও নগদ জমা সংরক্ষণ হার (সিআরআর) কমিয়ে আনলেও ঋণের সুদ কমিয়ে আনার জন্য এটি যথেষ্ট নয়। নগদ জমা সংরক্ষণ হার (সিআরআর) ২৫ পয়েন্টের ভিত্তিতে কমিয়ে ৫ দশমিক ৭৫ করার ফলে ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত তহবিল পেয়েছে ৬ হাজার ৪শ' কোটি টাকা। কিন্তু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো এমন সময় কর্মীদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য বিপুল অংকের অর্থ ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেছেন। যখন তাদের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। একই সময়ে ব্যক্তি আমানতকারীরাও আর্থিক ঝুঁকির বিষয়ে বিবেচনা করে সঞ্চয়ী ও স্থায়ী আমানত নগদায়ন করে টাকা নিয়ে গেছেন। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, 'আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো অন্যান্য দেশের ব্যাংকের মতো তারল্য সংকটের মুখোমুখি হবে। পর্যান্ত তহবিল না থাকলে ব্যাংকগুলো কীভাবে সহজে ঋণ দেবে।' তিনি আরও বলেন, '১ এপ্রিল থেকে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণের প্রস্তুতি হিসেবে চলতি বছরের ফেব্রম্নয়ারি থেকেই ব্যাংকগুলো ৬ শতাংশ সুদে স্থায়ী আমানত নেওয়া শুরু করেছে। কিন্তু অর্থনীতি মন্দার পথে। করোনাভাইরাসের সাধারণ ছুটির পরে আমাদের আমানত সংগ্রহের সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। ৬ শতাংশ সুদে আমানতকারীদের আকর্ষণ তৈরিতে ব্যাংকগুলো বাধার মুখে পড়বে, যা এক অংকের সুদের বাস্তবায়নে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হবে।' পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংক খুব সহজে ঘোষণা দিয়ে ঋণের সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনতে পারে।' আর্থিক মন্দা কাটাতে ব্যাংক ও ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বন্ড কিনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে চলতি বছরের ২২ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'একটি নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে বাজারে কী পরিমাণ সরবরাহ করবে তার একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। অন্যথায় এক অংকের সুদে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না।' এক অংকের সুদে ঋণ পাওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে দেশের বেসরকারি খাত। চলমান সংকটের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের আওতায় বেশি সহায়তা করা প্রয়োজন বলে মত দেন আহসান এইচ মনসুর। ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে অর্থ সরবরাহ করলে মূল্যস্ফীতি হবে না। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ার পরে মূল্যস্ফীতির আভাস পাওয়া যাচ্ছে।' তিনি আরও বলেন, 'ঋণগ্রহীতারা এখন কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছে। তবে এক অংকে ঋণ না দিয়ে আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ অমান্য করতে পারছি না। এর ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে ধীরগতি অবলম্বন করলে বেসরকারি খাতে বিরূপ প্রভাব পড়বে।' ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরানুল হক চৌধুরী বলেন, '৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণে ৬ শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ করলে মুনাফা কমে যাবে ব্যাংকের।' তিনি আরও বলেন, 'ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের ক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। ঋণ-আমানতের সুদের অনুপাত আরও শিথিল করা উচিত।' বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো এ বিষয়ে আগের সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছে। আমরা বৈশ্বিক ও দেশীয় অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। চলমান করোনাভাইরাস সংকট কেটে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেবে।'