করোনা :এয়ারলাইন্স ব্যবসায় ক্ষতি ২৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার

প্রকাশ | ০৪ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দায় ধাক্কার এক যুগ পর করোনাভাইরাসে বড় ধরনের সংকটে পড়েছে বিশ্বের অ্যাভিয়েশন খাত। তবে এ সংকটে ক্ষতির পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (আইএটিএ) বলছে, চলমান পরিস্থিতিতে এয়ারলাইন্সগুলোর ক্ষতির পরিমাণ ২৫০ বিলিয়ন বা ২৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আইএটিএ বলছে, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে আকাশপথে গত তিন মাসে যাত্রী পরিবহণ কমে গেছে প্রায় ৯০ শতাংশেরও বেশি। ২০০৮-০৯ সালের অর্থনৈতিক সংকটের পর এবারই যাত্রী পরিবহণ কমছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে করোনাভাইরাস উৎপত্তির পর পৃথিবীর ২ শতাধিকেরও বেশি দেশে এ ভাইরাস হানা দিয়েছে। পৃথিবীর দেশে লকডাউন চলছে। এ ভাইরাস উলটপালট করে দিয়েছে বিশ্বকে। বিশেষ করে পেস্ননখাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পেস্নন চলাচল বন্ধ থাকায় যোগাযোগে পুরো পৃথিবী এখন বিচ্ছিন্ন। ধস নেমেছে পৃথিবীর নামিদামি এয়ারলাইন্সগুলোর ব্যবসায়। দেশে দেশে বিমানবন্দরগুলোর রানওয়েতে পড়ে আছে পেস্নন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে এ খাতে। কোনো দেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে পেস্নন চলাচল বন্ধ রয়েছে। আবার কোনো দেশে যাত্রী সংকটে ফ্লাইট পরিচালনা সাময়িক বন্ধ রেখেছে এয়ারলাইন্সগুলো। এ ধাক্কা সামলে ওঠা বেশ কঠিন বলে মনে করেন খাত সংশ্লিষ্টরা। প্রধান এয়ারলাইন্সগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য ফ্লাইট স্থগিত করেছে। ফলে এসব সংস্থার আয় অনেক কমে যাওয়ায় প্রচুর লোকসানও গুনতে হচ্ছে। পেস্নন চলাচল কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে, তা বলতে পারছেন না কেউ। আইএটিএ বলছে, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ায় এয়ারলাইন্সগুলোর এ ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ সংকট আরও দীর্ঘায়িত হলে লোকসানের পরিমাণ আরও বাড়বে। বিশ্বের প্রধান এয়ারলাইন্সগুলো যাওয়া-আসার প্রায় সব ফ্লাইট স্থগিত করেছে। বিশ্বের প্রধান যেসব এয়ারলাইন্স ফ্লাইট স্থগিত বা হ্রাস করেছে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- আমেরিকান এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, ডেল্টা, এয়ার কানাডা, এয়ার এশিয়া, নিপ্পন, ক্যাথে প্যাসিফিক, ক্যাথে ড্রাগন, জাপান এয়ারলাইন্স, কোরিয়ান এয়ার, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, সিল্ক এয়ার, কান্তাস, এয়ার নিউজিল্যান্ড, এয়ার ফ্রান্স, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, ভার্জিন আটলান্টিক, লুফথানসা, সুইস অস্ট্রিয়ান এয়ারলাইন্স, টার্কিশ এয়ারলাইন্স, ইতিহাদ, এমিরাটস ও কাতার এয়ারওয়েজ। আইএটিএর এই সতর্কবাণীর প্রতিফলন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে লাভজনক বিমান সংস্থা আমেরিকান এয়ারলাইন্স দেশটির সরকারের কাছে ১২ কোটি ডলার সহায়তা চেয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা কান্তাস এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, করোনা সংকটে এই আর্থিক বছরের দ্বিতীয়ভাগে তাদের কর-পূর্ব মুনাফা ১০ কোটি মার্কিন ডলার কম হতে পারে। এছাড়া এয়ার ফ্রান্স-কেএলএম জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে ফেব্রম্নয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে তাদের আয় ২১ কোটি ৬০ লাখ ডলার কমে যাবে। আইএটিএর মহাপরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আলেকজাঁদ্র দ্য জুনিয়াক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কোভিড-১৯-এর (করোনাভাইরাসে সৃষ্ট রোগ) কারণে চাহিদার তীব্র মন্দায় বিমান সংস্থাগুলোতে। বিশেষ করে চীনা বাজারের সংস্পর্শে আসাদের ওপর অর্থনৈতিক প্রভাব পড়বে। ২০২০ সাল এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য 'খুব কঠিন একটি বছর' বলেও মনে করেন ওই আইএটিএর মহাপরিচালক।