মার্চেও নিম্নমুখী খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক মূল্যসূচক

প্রকাশ | ০৫ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
চলতি বছরের মার্চে জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের (এফএও) খাদ্যপণ্যের গড় মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১৭২ দশমিক ২ পয়েন্টে। ফেব্রম্নয়ারির তুলনায় যা ৭ দশমিক ৮ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ৩ শতাংশ কম। এ নিয়ে টানা দুই মাস এফএওর ফুড প্রাইস ইনডেক্সে নিম্নমুখী প্রবণতা বজায় রয়েছে। তবে ২০১৯ সালের একই মাসের তুলনায় গত মার্চে বৈশ্বিক খাদ্যপণ্য মূল্যসূচক বেড়েছে ৪ দশমিক ৬ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭ শতাংশ। খবর এফএও। এফএওর খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক মূল্যসূচকে টানা মন্দা ভাবের পেছনে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে বিশ্বজুড়ে নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ। গত মাসে ভোজ্যতেল ও চিনির বাজারে সবচেয়ে বড় দরপতন দেখা দিয়েছে। এছাড়া একই সময়ে অন্য খাদ্যপণ্যের দামেও মন্দা ভাব বজায় ছিল। এফএওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মার্চে খাদ্যশস্যের গড় মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১৬৪ দশমিক ৫ পয়েন্টে, আগের মাসের তুলনায় যা ৩ দশমিক ২ বা ১ দশমিক ৯ শতাংশ কম। তবে তা ২০১৯ সালের একই মাসের তুলনায় অপরিবর্তিত রয়েছে। দুই মাস ধরে চাল বাদে অন্য সব খাদ্যশস্যের রপ্তানি মূল্য কমতির দিকে রয়েছে। এমনকি নভেল করোনাভাইরাসের মারাত্মক প্রকোপের মধ্যেও গমের দামে চাঙ্গা ভাব ফেরেনি। যদিও সংক্রমিত ভাইরাসটির প্রকোপে গমের বাণিজ্যিক কার্যক্রম দ্রততর হয়ে উঠছে। বিশেষ করে উত্তর আমেরিকার দেশগুলোয় খাদ্যপণ্যটির বেচাকেনা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। অন্যদিকে বিশ্বের শীর্ষ গম রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশ পণ্যটির রপ্তানি সাময়িকভাবে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এত কিছুর পরেও মার্চে খাদ্যপণ্যটির বাজার নিম্নমুখী থাকতে দেখা গেছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার গমের বৈশ্বিক উৎপাদন রেকর্ড ছাড়াতে পারে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির সরবরাহ ঘাটতির তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই, যা দাম কমাতে প্রভাব ফেলেছে। অন্যান্য শস্যের মধ্যে ভুট্টার দাম শুধু উদ্বৃত্ত সরবরাহের কারণেই কমেনি, বরং পণ্যটির বৈশ্বিক দুর্বল চাহিদাও এজন্য দায়ী। মহামারীর কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে বায়োডিজেল উৎপাদন। এ খাতে চাহিদা কমে ভুট্টার সামগ্রিক চাহিদা কমে গেছে। তবে চালের বাজারে বিরাজ করেছে বিপরীত চিত্র। টানা তিন মাস ধরে পণ্যটির দাম চাঙ্গা রয়েছে। আপৎকালীন অভ্যন্তরীণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশ সাময়িকভাবে চালের রপ্তানি বন্ধের পরিকল্পনা করেছে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম বেড়ে ২০১৮ সালের জুনের পর থেকে সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠেছে। এছাড়া গত মাসে বড় ধরনের পতন দেখা দিয়েছে ভোজ্যতেলের বাজারে। মার্চে পণ্যটির বৈশ্বিক মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১৩৯ দশমিক ১ পয়েন্ট। আগের মাসের তুলনায় যা ১৯ পয়েন্ট বা ১২ শতাংশ কম। এক মাসের ব্যবধানে পণ্যটির দরপতনের এ হার ২০১৯ সালের অক্টোবরের পর থেকে সর্বোচ্চ। ভোজ্যতেলের দাম কমাতে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে পাম অয়েলের দামে মন্দা ভাব। নভেল করোনাভাইরাস মহামারির জেরে পণ্যটির বৈশ্বিক চাহিদা কমে গেছে। ফলে কমেছে দাম। আর পাম অয়েলের দাম কমার জেরে সয়াবিন ও সরিষা তেলের দামেও নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। একই পরিস্থিতি বিদ্যমান দুগ্ধপণ্যের বাজারেও। মার্চে পণ্যটির বৈশ্বিক মূল্যসূচক কমে ২০৩ দশমিক ৫ পয়েন্টে নেমেছে, আগের মাসের তুলনায় যা ৬ দশমিক ৪ পয়েন্ট বা ৩ শতাংশ কম। টানা চার মাস বৃদ্ধির পর গত ফেব্রম্নয়ারিতে পণ্যটির দাম কমে আসে, যা গত মাসেও অপরির্তিত ছিল। ২০১৯ সালের একই মাসেও পণ্যটির দামে মন্দা ভাব বজায় ছিল। মূলত মার্চে বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় দুগ্ধপণ্যের দাম কিছুটা কমতির দিকে থাকে। এর ওপর নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বৈশ্বিক আমদানি চাহিদা কমে পণ্যটির দাম আরও কমিয়ে দিয়েছে।