বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিমেন্ট কারখানার ৯০ শতাংশ উৎপাদন বন্ধ :বিসিএমএ

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৩ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

দেশে সিমেন্ট উৎপাদনকারী কারখানার সংখ্যা ৩৪। এর মধ্যে বহুজাতিক পাঁচটি, আর বাকি সবই দেশীয়। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা বছরে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টন। এখন পর্যন্ত বছরে উৎপাদন হয়েছে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন কোটি টন। বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ) বলছে, কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবে বর্তমানে সিমেন্ট কারখানাগুলোতে ৯০ ভাগ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

সিমেন্ট খাতে নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) প্রেসিডেন্ট ও ক্রাউন সিমেন্ট গ্রম্নপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আলমগীর কবির বলেন, চলমান কোভিড-১৯ বা নভেল করোনাভাইরাসের কারণে দেশের যেসব শিল্প খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তার মধ্যে সিমেন্ট শিল্প খাত অন্যতম। সরকার ঘোষিত লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে সিমেন্ট কারখানাগুলোতে ৯০ ভাগ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। অথচ শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য নিয়মিত খরচও প্রতিনিয়ত চালিয়ে যেতে হচ্ছে। অর্থাৎ পরিচালন খরচ কমেনি। তাছাড়া সিমেন্টের কাঁচামাল শতভাগ আমদানিনির্ভর হওয়ায় এ পর্যন্ত যত এলসি খোলা হয়েছে, সেটিও এখন আমাদের জন্য একটি বড় বোঝার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ ছোট-বড় সব ধরনের নির্মাণকাজ এখন ৯০ ভাগই বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ এ অবস্থার পরিবর্তন হবে, তা আমরা কেউই বলতে পারছি না।

বিসিএমএ নেতারা বলছেন, ব্যাংক থেকে যে চলতি মূলধন নেওয়া হয়েছে, তার সুদ ও আসল চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে চলেছে; প্রকল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতির জন্য যে ব্যাংকঋণ রয়েছে, সেগুলোরও ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ উৎপাদন বন্ধ থাকলেও অবচয় হিসাব বন্ধ থাকছে না। অন্যদিকে কাঁচামাল বহনকারী নৌজাহাজ একটি নির্ধারিত সময় অর্থাৎ গন্তব্যে আসার চার দিনের মধ্যে আনলোড বা খালি করতে হবে। আর তা নাহলে উচ্চহারে বিলম্বজনিত জরিমানা বা মাশুল দিতে হবে। আন্তর্জাতিক নৌ-আইন অনুযায়ী সমুদ্রগামী জাহাজগুলোকেও বিলম্বজনিত মোটা অঙ্কের মাশুল দিতে হবে বৈদেশিক মুদ্রায়। এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার আশু সমাধান কারো জানা নেই। আবার সরকারের প্রণোদনার ক্ষেত্রে খাতটি থাকলেও তা অগ্রাধিকারভিত্তিক। এতে বরং ঋণের বোঝা আরও বেড়ে যেতে পারে।

ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত এ ঋণ কোনোভাবেই দিতে পারবে না- এমন মত প্রকাশ করে বিসিএমএ সভাপতি বলেন, কারণ ব্যাংকের যে আমানতের সক্ষমতা রয়েছে তা কমে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে তারল্য সংকট অবশ্যই তৈরি হবে। আমরা আরও আভাস পাচ্ছি যে জিডিপি কমে যাবে, রাজস্ব আহরণ কমে যাবে। ফলে বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতি দেখা দেবে। কারণ দেশে উৎপাদন ও আমদানি পর্যায়ে রাজস্ব আহরণই সবচেয়ে বেশি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া রেমিট্যান্স যেখান থেকে আসে, সেই দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই এক্ষেত্রে ভাটা পড়বে। আর গার্মেন্টস খাত যে পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা সবাই অনুধাবন করতে পারছেন। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার বড় অংশ কমে যেতে পারে। এ অবস্থায় ছোট-বড় সরকারি-বেসরকারি সব প্রকল্প স্থগিত অথবা বিলম্বিত হবে। আর সেই কারণে নির্মাণের অন্যতম উপাদান তথা সিমেন্টের ব্যবহার অনেক কমবে এবং একই সঙ্গে উৎপাদনও কমে যাবে।

বিসিএমএর প্রথম সহসভাপতি ও মেট্রোসেম সিমেন্টের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুহাম্মদ শহীদ উলস্নাহ বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বিপর্যস্ত খাতের মধ্যে অন্যতম হলো নির্মাণসামগ্রী। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য হলো সিমেন্ট। সরাসরি ও পরোক্ষভাবে এ খাতে জড়িত প্রায় ২০ লাখ মানুষ। বিনিয়োগ ৪৫ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা। সিমেন্ট উৎপাদনে ব্যবহ্র্রত কাঁচামালগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্লিংকার, জিপসাম, লাইম স্টোন, স্স্নাগ ও ফ্লাইঅ্যাশ। এর সবই আমদানিনির্ভর। বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল এ মুহূর্তে চট্টগ্রাম বন্দরে বসে আছে, যার ড্যামারেজের পরিমাণও অনেক। মাদার ভেসেল থেকে কাঁচামালগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য লাইটার ভেসেলও নেই। সামগ্রিক সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়েছে।

তিনি বলেন, সিমেন্ট পণ্যের চাহিদার চেয়ে উৎপাদন সক্ষমতা দ্বিগুণ। তাই সিমেন্ট বিক্রি, উৎপাদন, বিপণনের ক্ষেত্রে বড় প্রতিযোগিতা থাকে। সিমেন্ট খাতে একাধিপত্য বা মনোপলির কোনো সুযোগ নেই। করোনা প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে গত মার্চ থেকে সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক উৎপাদনের ২০ শতাংশও করতে পারছে না। যে এলাকাগুলো লকডাউনে নেই বা এখনো প্রভাব পড়েনি, সেখানে এখনো সিমেন্ট সরবরাহ হচ্ছে। তবে তা-ও আর সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। বলা যায় সিমেন্ট উৎপাদন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছে। লে-অফের পরিকল্পনা করছে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও। সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির মেয়াদ নিয়ে সিদ্ধান্তের জন্য অনেকে অপেক্ষা করছে।

বিসিএমএ বলছে, সিমেন্ট উন্নয়নের প্রতীক। কোনো দেশের উন্নয়ন কেমন হচ্ছে, তা ওই দেশের মাথাপিছু সিমেন্টের ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। তাছাড়া এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাখ লাখ নির্মাণশ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা জড়িত। যদি এ শিল্প-কারখানাগুলো চালু রাখা না যায়, তাহলে তারা সবাই বেকার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি সরকার এ খাত থেকে যে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেয়ে থাকে, সেটিও ব্যাহত হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<97077 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1