এপ্রিলে অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়েছে চীনের রপ্তানি

প্রকাশ | ০৯ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
গত এপ্রিলে চলতি বছরে প্রথমবারের মতো চীনের রপ্তানি অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়েছে। নভেল করোনাভাইরাস মহামারিতে চাহিদা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের সাপস্নাই চেইন বিঘ্নিত হওয়ার মধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিটির ওপর থেকে চাপ কিছুটা সরল। খবর এএফপি। গত মার্চে রপ্তানিতে কিছুটা উন্নতির পর এপ্রিলে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ফলাফল দেখেছে চীন। তবে বিশ্বজুড়ে চলমান স্বাস্থ্য সংকটে বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কায় চীনের রপ্তানি সম্ভাবনা খুবই হতাশাজনক-প্রতিকূল। ক্রমহ্রাসমান বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ও ব্যাপক কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে আগামী মাসগুলোয় চীনা পণ্যের চাহিদা কমবে। বৃহস্পতিবার শুল্ক বিভাগের উপাত্তে দেখা গেছে, এপ্রিলে বিদেশে চীনা পণ্যের চালান গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। গত মার্চে রপ্তানিতে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ পতন এবং রয়টার্সের জরিপে এপ্রিলে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ পতনের পূর্বাভাসের তুলনায় রপ্তানি বেশ আশাব্যঞ্জক। গত বছরের ডিসেম্বরের পর থেকে এই প্রথম রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি দেখল চীন। বছরের শুরুতে চীনের রপ্তানি ও আমদানিতে তীব্র পতনের পর মার্চে কারখানাগুলো চালুতে পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল হয়। কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নভেল করোনাভাইরাস সংকটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শাটডাউনের ফলে চাপ বহাল থাকবে। অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের লুই কুইজেস একটি নোটে বলেন, জোগান সংকটের কারণে প্রথম প্রান্তিকের ঘাটতি পূরণে এপ্রিলে রপ্তানিকারকরা তাদের চালান বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু পারচেজিং ম্যানুফ্যাকচারিং ইনডেক্সে (পিএমআই) নতুন রানি ক্রয়াদেশের দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। চীনের প্রধান ব্যবসায়িক অংশীদাররা গভীর মন্দায় পড়ায় নিকটভবিষ্যতে চীনের রপ্তানি লক্ষণীয়ভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে। যদিও আমাদের বেসলাইন পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বৈশ্বিক চাহিদা পুনরুজ্জীবিত হবে। চীনের শুল্ক বিভাগের উপাত্তে আরও দেখা গেছে, এপ্রিলে দেশটির আমদানি গত বছরের একই মাসের তুলনায় ১৪ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে, যা ২০১৬ সালের জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ সংকোচন। এদিকে বাজারের পূর্বাভাস ছিল দেশটির আমদানি ১১ দশমিক ২ শতাংশ পতন হবে। উলেস্নখ্য, গত মার্চে দেশটির আমদানি পতন হয়েছিল শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ। দুর্বল অভ্যন্তরীণ চাহিদা এবং পণ্যমূল্য হ্রাসের কারণে আমদানি দুর্বল ছিল। চীনের বাইরের শাটডাউনও দেশটির আমদানিকারকদের জোগানে বড় ধাক্কা দেয়। জরিপে প্রত্যাশিত ৬৩৫ কোটি ডলার বাণিজ্য উদ্বৃত্তের বিপরীতে এপ্রিলে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল ৪ হাজার ৫৩৪ কোটি ডলার। গত মার্চে যেখানে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল ১ হাজার ৯৯৩ কোটি ডলার। এপ্রিলের সরকারি ও বেসরকারি কারখানা জরিপে দেখা গেছে, রপ্তানি ক্রয়াদেশের উপসূচকগুলোয় ব্যাপক পতন হয়েছে। কিছু দেশ লকডাউন শিথিল করলেও বিদেশে শক্তিশালী মন্দার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। দেশে নভেল করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আসায় চীনের অর্থনীতি ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছে এবং ঘরে অবস্থানের কঠোর নীতিমালা শিথিল করছে কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্বব্যাপী চাহিদা হ্রাসে এবং বৈদেশিক ক্রয়াদেশ সংকোচন বা বাতিলে অনেক কারখানা চাপের মধ্যে রয়েছে। অনেক কারখানার ইনভেন্টরি বৃদ্ধির বিপরীতে মুনাফায় পতন হচ্ছে এবং কেউ কেউ ব্যয়সাশ্রয়ী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে কর্মী ছাঁটাই করছে। খুব শিগগিরই অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে- এ আশাবাদ না দেখিয়ে অনেক অর্থনীতিবিদ অদূর ভবিষ্যতে বাণিজ্য পূর্বাভাস কমিয়ে দিচ্ছেন। সরকারি উপাত্ত প্রকাশের আগে নমুরার বিশ্লেষকরা এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেন, আমরা আশা করছি দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনের রপ্তানি আরও ৩০ শতাংশ সংকুচিত হবে এবং প্রকৃত জিডিপি শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ সংকুচিত হবে।