করোনায় বিশেষ প্রণোদনা :সহজ হলো ঋণ আবেদনের শর্ত

রেটিং করার ক্ষেত্রে একটি পার্টি বা গ্রাহকের পরিমাণগত সক্ষমতায় ৬০ শতাংশ নম্বর এবং গুণগত সক্ষমতায় ৪০ শতাংশ নম্বর থাকবে।

প্রকাশ | ১২ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় ঘোষিত বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়া আরও সহজ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব প্যাকেজের আওতায় ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রণীত ইন্টারনাল ক্রেডিট রিস্ক রেটিং (আইসিআরআর) নীতিমালার শর্ত পূরণ বাধ্যতামূলক নয়। ফলে আইসিআরআরের শর্ত পূরণ না করেও ঋণ আবেদন করতে পারবেন গ্রাহক। করোনায় দাপ্তরিক কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়ায় এবং আইসিআরআরের কার্যক্রম ব্যাহত ও গ্রহীতার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহে বিঘ্ন হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়। এতে বলা হয়েছে- এই দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় শিল্প ও সেবা খাতের আওতায় কার্যক্রম দ্রম্নত চালু করার জন্য প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ সুবিধা দিতে আইসিআরআর সম্পন্ন না করেও ব্যাংক ঋণ দিতে পারবে। তবে প্রতিটি ব্যাংক বিদ্যমান নিজস্ব নীতিমালার আওতায় ঋণঝুঁকি বিশ্লেষণপূর্বক ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে গ্রাহক নির্বাচন করবে। এক্ষেত্রে সার্কুলারের সঙ্গে সংযুক্ত একটি ফরম পূরণ করতে হবে প্রতিটি গ্রাহককে। এদিকে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে করোনা মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা ও ঋণ প্যাকেজের অর্থ দ্রম্নত গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দিতে ব্যাংকগুলোর প্রতি আহ্বান জানান ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। পাশাপাশি ঋণের বিভিন্ন শর্ত শিথিলের দাবিও করেন তিনি। দেশের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছার প্রেক্ষাপটে ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে ঋণের ঝুঁকি পরিমাপের নতুন নীতিমালা উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। ইন্টারনাল ক্রেডিট রিস্ক রেটিং (আইসিআরআর) নামের এই নীতিমালায় ঋণের পরিমাণ ও গুণগত উভয় ধরনের সক্ষমতার মূল্যায়ন শর্ত রাখা হয়। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী এই শর্তগুলো পূরণ না করেও ঋণ পাবেন গ্রাহক। আইসিআরআর নীতিমালায়, প্রথমত একজন গ্রাহককে এক্সিলেন্ট, গুড, মার্জিনাল ও আন-অ্যাকসেপ্টেবল এই চার শ্রেণিতে ভাগ করবে ব্যাংকগুলো। কোনো গ্রাহক এক্সিলেন্ট রেটিং পেলে ব্যাংক তাকে ঋণ দিতে পারবে। গুড রেটিং পেলেও ব্যাংক তাকে ঋণ দিতে পারবে। মার্জিনাল রেটিংধারী গ্রাহককে পুরানো ঋণ নবায়ন বা নতুন করে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ব্যাংককে। আনঅ্যাকসেপ্টেবল রেটিংধারীকে কোনো পরিস্থিতিতেই নতুন ঋণ দিতে পারবে না ব্যাংকগুলো, যদি না আগের ঋণ শতভাগ নগদ পরিশোধ হয় অথবা জামানত দিয়ে ঋণটি আচ্ছাদন করা হয়। এই শ্রেণির গ্রাহকের আগের ঋণ সর্বোচ্চ দুবার নবায়ন বা বর্ধিত করা যাবে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, রেটিং করার ক্ষেত্রে একটি পার্টি বা গ্রাহকের পরিমাণগত সক্ষমতায় ৬০ শতাংশ নম্বর এবং গুণগত সক্ষমতায় ৪০ শতাংশ নম্বর থাকবে। এদিকে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ও বড় ব্যবসায়ীদের জন্য সরকার প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ পাবে বড় শিল্প খাত। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত পাবে ২০ হাজার কোটি টাকা। এসব ঋণের সুদ ৯ শতাংশ হিসাব করা হলেও ঋণগ্রহীতাদের দিতে হবে গড়ে অর্ধেক সুদ। বাকি অর্ধেক সুদের অর্থ সরকার ভর্তুকি আকারে ব্যাংকগুলোকে দিয়ে দেবে।