বিএসইসি :খায়রুল যুগের অবসান নতুন চেয়ারম্যান হচ্ছেন রুবাইয়াত

প্রকাশ | ১৩ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
টানা ৯ বছর পার হওয়ার পর পুঁজিবাজারে এম খায়রুল হোসেন যুগের অবসান হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনসু্যরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সাধারণ বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বিদায়ী চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই বিএসইসিতে এসেছিলেন। খায়রুল হোসেনের বিভাগ ছিল ফিন্যান্স। বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার। এছাড়া কমিশনের মোট চার কমিশনারের মধ্যে বর্তমানে পদে আছেন মাত্র একজন। বাকি তিন কমিশনারের পদই শূন্য। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিএসইসির চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনার নিয়োগের ব্যাপারে ১০ জনের নামের একটি তালিকা করেছে। সূত্রগুলো জানায়, কমিশনার পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের আরেক শিক্ষক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাবেক এক অতিরিক্ত সচিব এবং ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনটেন্টস বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) সভাপতি ছিলেন- এমন তিনজনের নাম রয়েছে বলে জানা গেছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে তালিকাটি সার-সংক্ষেপ আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে। মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী অনুমোদন করে দিলেই তা চলে যাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অনুমোদন দিলে তা ফিরে আসবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে। এর পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন নিয়োগ শাখা তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করবে। জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদন হওয়ার আগ পর্যন্ত এ নিয়ে তিনি কিছু বলতে চাচ্ছেন না। তবে বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরপরই নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা যোগ দিতে পারবেন- সেভাবেই কাজ এগোচ্ছে বলে জানান তিনি। বিএসইসিতে তিন দফায় ৯ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন এম খায়রুল হোসেন। ২০১০ সালের শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির পর পুনর্গঠিত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে ২০১১ সালের ১৫ মে তিনি নিয়োগ পান। প্রথম দফায় তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয় তাকে। এর পর দ্বিতীয় মেয়াদে চার বছর এবং সর্বশেষ আইন লঙ্ঘন করে তৃতীয় দফায় দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। একইভাবে ৯ বছর দায়িত্ব পালন করে গেছেন কমিশনার হেলাল উদ্দিন নিজামীও। সূত্রগুলো জানায়, খায়রুল হোসেনের শেষ বারের নিয়োগটি হয় সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে অন্ধকারে রেখে। আবদুল মুহিত তখন দেশে ছিলেন না। বিষয়টি জানত না এমনকি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগও। দেশে ফিরে বিএসইসি চেয়ারম্যানের এভাবে নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন খোদ তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ নিয়োগ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, আইন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এ নিয়ে চার মাস চিঠি চালাচালিও চলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ও কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন খায়রুল হোসেন ও হেলাল উদ্দিন নিজামী। বর্তমানে বিএসইসিতে চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের পাশাপাশি কমিশনার খন্দকার কামালুজ্জামান দায়িত্বে রয়েছেন। ফলে কোরাম সংকটে রয়েছে বিএসইসি। জানা গেছে, খায়রুল হোসেন এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে চলে যাবেন। আর হেলালউদ্দিন নিজামী চলে যাবেন তার মূল জায়গা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগে। জানতে চাইলে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, তিনি কোনো চিঠি পাননি। তাই এ পর্যায়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছেন না। এদিকে শেয়ারবাজারে বহু আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেওয়া অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন আর মাত্র এক দিন পর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের পদ থেকে বিদায় নিচ্ছেন। এ পদে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সু্যরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ও সাধারণ বীমা করপোরেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এছাড়া বিএসইসিতে আরও তিন কমিশনার নিয়োগ পাচ্ছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য জানান। বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদ থেকে আর মাত্র এক দিন পরই বিদায় নিচ্ছেন অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন। অভিযোগ আছে, আইন লঙ্ঘন করে শেয়ারবাজারে বহু আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেওয়া খায়রুল হোসেনকে আরও দুই বছরের জন্য বিএসইসির চেয়ারম্যান করা হয়। এবার তার স্থানে নতুন কাউকে আনা হচ্ছে। কে হচ্ছেন খায়রুলের উত্তরসূরি তা নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। এমনই আলোচনার মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভাগের ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এবং কমিশনার হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব অজিত কুমার পাল এফসিএ ও কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট এ কে এম দেলোয়ার হোসেনের নাম প্রস্তাব করে তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এটি অনুমোদন করলে দু-একদিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'কোনো কারণে যদি বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অনুমোদন না করে তাহলে এ পদের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের শর্টলিস্ট আরও তিনজনের নাম রয়েছে। তারা হলেন- সাবেক সচিব ড. এম আসলাম আলম, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স করপোরেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. সেলিম উদ্দিন এবং বিএসইসির সাবেক কমিশনার আরিফ খান। এ তিনজনের মধ্যে যেকোনো একজনকে নিয়োগের জন্য প্রস্তাব করা করা হবে।' এদিকে জানা গেছে, কমিশনার হিসেবে প্রস্তাবকৃতদের মধ্যে অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ ও অজিত কুমার পাল বর্তমানে জনতা ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দেলোয়ার হোসেন বর্তমানে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। আগামী ১৫ মে থেকে বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যানের মেয়াদ শুরু হবে। আর তিনজন কমিশনারের পদ ফাঁকা থাকায় তারা যেদিন যোগ দেবেন সেদিন থেকেই তাদের মেয়াদ কার্যকর হবে। গত ১৮ এপ্রিল কমিশনার অধ্যাপক স্বপন কুমার বালার চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ শেষ হয়। তিনি আগের কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগে চলে গেছেন। তিনি নিয়োগ পেয়েছিলেন ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল। অপর কমিশনার অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন নিজামীর চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ রোববার (৩ মে) শেষ হয়েছে। তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল ২০১১ সালের ৪ মে। এদিকে ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান খোন্দকার কামালুজ্জামান। তার মেয়াদ শেষ হবে ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর। ২০১১ সালের ২৯ মে নিয়োগ পাওয়া কমিশনার আমজাদ হোসেনের চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ শেষ হয় ২০১৮ সালে ৩০ এপ্রিল। এরপর থেকেই ওই পদে যোগ্য কাউকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে ১৪ মে বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেনের মেয়াদ শেষ হলে বিএসইসিতে থাকবেন শুধু একজন কমিশনার। ফলে করোনাকালে বিএসইসি যেন অভিভাবকহীন হয়ে না পড়ে সে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছে সরকার।