লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ খায়রুল কমিশন অনুমোদিত ১১ কোম্পানি

লভ্যাংশ না দেওয়া ২৫ শতাংশ কোম্পানির মধ্যে ১১ শতাংশ খায়রুল কমিশনের অনুমোদিত কোম্পানি। ৯ বছর পর আগামী ১৪ মে বিদায় নিচ্ছেন বহুল আলোচিত বিএসইসির বর্তমান এ চেয়ারম্যান।

প্রকাশ | ১৪ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দীর্ঘ ৯ বছরের দায়িত্ব পালন শেষে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান পদ থেকে বৃহস্পতিবার (১৪ মে) বিদায় নিচ্ছেন বহুল আলোচিত-সমালোচিত চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপকের নেতৃত্বাধীন কমিশনের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্বল কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদনের অভিযোগ রয়েছে। তবে লভ্যাংশ না দেওয়ার ক্ষেত্রে এ কমিশন থেকে আইপিও অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিরগুলোর হারই সব থেকে কম। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৯৯৩ সালে বিএসইসি গঠনের পর শেয়ারবাজারে ২৮৪ কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে (তালিকাচু্যত ছাড়া)। এর মধ্যে ৭১টি বা ২৫ শতাংশ কোম্পানি তাদের সর্বশেষ হিসাব বছরের ব্যবসায় শেয়ারহোল্ডাররা লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সময়কালীন তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানির সংখ্যা ১১টি বা ৩.৮৭ শতাংশ। লভ্যাংশ না দেওয়া বাকি কোম্পানিগুলোর মধ্যে কমিশন গঠনের প্রথম ৯ বছরে (১৯৯৩-২০০১) তালিকাভুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৪৬টি। এছাড়া দ্বিতীয় ৯ বছরের ১৪টি। অর্থাৎ কমিশন গঠনের প্রথম ১৮ বছরে অনুমোদন পাওয়া ৬০টি প্রতিষ্ঠান তাদের সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কোনো ধরনের লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএসইসি গঠন হওয়ার পরে গত ২৭ বছরে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো থেকে ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটে (ওটিসি) চলে গেছে ৩৫টি। এরমধ্যে প্রথম ৯ বছরে তালিকাভুক্ত হওয়ার কোম্পানি থেকে ৩৩টি ও দ্বিতীয় ৯ বছরে তালিকাভুক্ত হওয়া দুটি রয়েছে। যে সব কোম্পানির অস্তিত্ব প্রায় বিলীন। এ প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে লভ্যাংশ দেয় না। এদিকে শেয়ারবাজারে কমিশন গঠনের পরে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২৮৪টি এখন শেয়ারবাজারে রয়েছে। তবে গত বছরের রহিমা ফুড ও মডার্ন ডাইংসহ এ পর্যন্ত শেয়ারবাজারের ইতিহাসে যোগ্যতার অভাবে ৩৮টি কোম্পানি তালিকাচু্যত বা শেয়ারবাজার থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। এর মধ্যে কমিশন গঠনের প্রথম ১৮ বছরে রহিমা ফুডসহ তালিকাভুক্ত হওয়া কিছু কোম্পানি রয়েছে। যেগুলোর লভ্যাংশ তো দূরের কথা, কোনো হদিস নেই। এ হিসাবে কমিশন গঠনের প্রথম ১৮ বছরে তালিকাভুক্ত হয়ে লভ্যাংশ না দেওয়া কোম্পানির সংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই আরও বেশি। এছাড়া কমিশন গঠন হওয়ার পরে তালিকাভুক্ত হয়েছে এমন আরও ছয়টি কোম্পানিকে তালিকাচু্যতির জন্য সম্ভাব্য তালিকায় রেখেছে ডিএসই। এর মধ্যে কমিশন গঠনের প্রথম ৯ বছরে তালিকাভুক্ত হওয়া মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, ইমাম বাটন, বেক্সিমকো সিনথেটিক্স ও শ্যামপুর সুগার মিলস এ তালিকায় রয়েছে। আর দ্বিতীয় ৯ বছরের মধ্যে তালিকাভুক্ত হওয়া শাইনপুকুর সিরামিকসও সম্ভাব্য তালিকাচু্যতির তালিকায় রয়েছে। খায়রুল হোসেন নেতৃত্বাধীন কমিশনে আইপিও অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে যেগুলো লভ্যাংশ দেবে না সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, ফেমিলিটেক্স বিডি, তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডাইং, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, অ্যাপোলো ইস্পাত, জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ এবং সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স। এর মধ্যে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স ও পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দাম অভিহিত মূল্যের ওপরে আছে। বাকি কোম্পানিরগুলোর শেয়ার দাম অভিহিত মূল্যের নিচে। লভ্যাংশ না দেয়া খায়রুল হোসেনের আগের কমিশনে আইপিও অনুমোদন পাওয়া কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, বিআইএফসি, পিপলস লিজিং, ঢাকা ডাইং, আরএন স্পিনিং, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, গোল্ডেন সন, প্রাইম ফাইন্যান্স, শাইনপুকুর সিরামিকস, সালভো কেমিক্যাল, বীচ হ্যাচারি, ইনটেক লিমেটেড, কেয়া কসমেটিকস, বেক্সিমকো সিনথেটিক্স, ডেল্টা স্পিনার্স, মিথুন নিটিং, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা পেট, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, সাফকো স্পিনিং, আরামিট সিমেন্ট, বিডি ওয়েল্ডিং, প্রাইম ইন্সু্যরেন্স, ইমাম বাটন এবং শ্যামপুর সুগার মিলস। বাকি কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি ওটিসিতে চলে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে- এক্সেলিসিওর সুজ, মডার্ন সিমেন্ট, বিডি লাগেজ, বিডি জিপার, মেঘনা শার্ম্প কালচার, রাসপিট ইনকরপোরেশন বিডি, বায়োনিক সি ফুড, বাংলাদেশ ডাইং, চিক টেক্স, ম্যাক এন্টারপ্রাইজ, গাছি হাটা অ্যাকুয়াকালচার, এম. হোসাইন গার্মেন্ট, রাসপিট ডাটা ম্যানেজমেন্ট, জার্মান বাংলা জেভি ফুড, মোনা ফুড, আল-আমিন কেমিক্যাল, ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজ, এপেক্স ওয়েভিং, ডায়নামিক টেক্সটাইল, ড্যান্ডি ডাইং, পারফিউম কেমিক্যাল, আজাদি প্রিন্টার্স, মিতা টেক্সটাইল, বাংলাদেশ ইলেকট্রিসিটি, বেঙ্গল ফাইন সিরামিকস, শ্রীপুর টেক্সটাইল, মুন্নু ফেব্রিকস, সালেহ কার্পেট মিলস, গাল্ফ ফুডস, ঢাকা ফিশারিজ, রাঙ্গামাটি ফুড, বেঙ্গল বিস্কুট, রোজ হ্যাভেন বলপেন, লেক্সকো এবং যশোর সিমেন্ট। এর সবগুলো ওটিসিতে রয়েছে।