ক্রেডিট কার্ডে সুদ দিতেই হবে

প্রকাশ | ১৫ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ক্রেডিট কার্ডের নিয়মিত সুদ আরোপ বন্ধে কোনো নির্দেশনা দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে যারা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন, তাদের নিয়মিত সুদ আরোপ অব্যাহত রয়েছে এবং তা পরিশোধ করতেই হবে। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ডের বাৎসরিক মাশুলও গুণতে হবে। তবে নিয়মিত সুদের ওপর চক্রবৃদ্ধি সুদ, বিলম্বে পরিশোধে জরিমানা ও অতিরিক্ত মাশুল আদায় বন্ধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে গত ১৫ মার্চ থেকে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত অতিরিক্ত সুদ ও জরিমানা আদায় বন্ধ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংক ভেদে ক্রেডিট কার্ডের সুদ হার ১২-২৭ শতাংশ পর্যন্ত। আর বাৎসরিক মাশুল তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। করোনাভাইরাসের কারণে ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চক্রবৃদ্ধি সুদ আরোপ ও আদায় স্থগিত, জরিমানা ও বিলম্বে বিল পরিশোধে মাশুল আদায় বন্ধের নির্দেশের পর অনেক গ্রাহক বিভিন্ন মাধ্যমে জানাচ্ছেন, সুদ আদায় বন্ধ হয়নি। আবার অনেকে বিলম্বে বিল পরিশোধে মাশুল আদায়ের কথাও বলছেন। ব্যাংকগুলোর কার্ড বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, যে বিলম্ব সুদ আদায় করা হচ্ছে তা ১৫ মার্চের আগের। এরপর শুধু নিয়মিত সুদ আরোপ ও আদায় করা হচ্ছে। যদি বেশি সুদ আদায় করা হয়, তা ফেরত দেয়া হবে। অনেক গ্রাহক কার্ডের মাধ্যমে খরচের হিসাব না রাখায় বিভ্রান্ত হচ্ছেন বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সুদ মাফ করার কোনো নির্দেশনা দেয়নি, এটা দিতেও পারে না। ক্রেডিট কার্ডে চক্রবৃদ্ধি সুদ ও জরিমানা যাতে আদায় করা না হয়, সেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এটা না হলে গ্রাহকদের অনেক বেশি টাকা জরিমানা ও সুদ দিতে হতো। করোনাভাইরাসের কারণে অনেকের আয় কমে গেছে, তাই গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনা করে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সিরাজুল ইসলামের পরামর্শ, যদি কোনো ব্যাংক নির্দেশনা মেনে চক্রবৃদ্ধি সুদ ও জরিমানা আদায় বন্ধ না করে, তাহলে গ্রাহকরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অভিযোগ জানাতে পারে। অভিযোগ যথাযথ হলে গ্রাহকরা টাকা ফেরত পাবে। এর আগে পৃথক দুই নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ক্রেডিট কার্ড গ্রাহককে সুদের ওপর নতুন করে কোনো সুদ আরোপ করতে পারবে না ব্যাংকগুলো। এর আগে ব্যাংকগুলোকে জরিমানা আদায় বন্ধ করতে বলেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়, কোনো কোনো ব্যাংক অপরিশোধিত ক্রেডিট কার্ড বিলের ওপর মাসিকভিত্তিতে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ আরোপ করছে। এর ফলে গ্রাহক কর্তৃক অতিরিক্ত সুদ প্রদান করতে হচ্ছে বা হবে, বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে যা গ্রহণযোগ্য নয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে ক্রেডিট কার্ডের বিলের ওপর ১৫ মার্চ থেকে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত দৈনিক অথবা মাসিকভিত্তিতে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ আরোপ না করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলো। এ ছাড়া ১৫ মার্চ থেকে যেসব গ্রাহকের ক্রেডিট কার্ডের ওপর দৈনিক ভিত্তিতে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ আরোপ করা হয়েছে বা আদায় করা হয়েছে, তাদের সেই টাকা ফেরত দিতে হবে অথবা আদায় করা যাবে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক এলাকাতেই লকডাউন করা হয়েছে। নাগরিকদের ঘরের বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে গ্রাহকরা কিস্তি বা বিভিন্ন বিল পরিশোধ করতে পারছে না। এ কারণে এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্র্যাক ব্যাংকের রিটেইল ব্যাংকিংয়ের প্রধান মাহীয়ুল ইসলাম বলেন, ব্র্যাক ব্যাংক আগে থেকেই চক্রবৃদ্ধি সুদ নেয় না। যেসব জরিমানা নেয়া হয়েছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পাওয়ার পর তা ফেরত দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট পর্যন্ত দেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ লাখ তিন হাজার ৪২৭ জন। গত জুনে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ১৩১ কোটি টাকা।