২০ লাখ কোটি রুপি প্রণোদনা পাবে ভারতের অর্থনীতি

নতুন ঘোষিত প্রণোদনার আকার ভারতের জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশ। বস্নুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০ লাখ কোটি রুপির সবটা নতুন প্রণোদনা নয়।

প্রকাশ | ১৫ মে ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
ভারতে প্রায় দুই মাস ধরে চলছে লকডাউন। দীর্ঘ লকডাউনের কারণে দেশটিতে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি সংকটে রয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসা, কুটির শিল্প, দিনমজুর, কৃষক ও মধ্যবিত্ত। এসব খাতকে সহায়তার লক্ষ্যে অর্থনীতিতে প্রণোদনা হিসেবে মোট ২০ লাখ কোটি রুপি (২৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার) সরবরাহ করবে দেশটির সরকার। নতুন ঘোষিত প্রণোদনার আকার ভারতের জিডিপির প্রায় ১০ শতাংশ। বস্নুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০ লাখ কোটি রুপির সবটা নতুন প্রণোদনা নয়। এর আগে সরকার যেসব সহায়তা অথবা কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব প্রণোদনামূলক পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে, সেগুলোও এতে অন্তর্ভুক্ত হবে। ওয়াশিংটনে ইউরেশিয়া গ্রুপের বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করা অখিল বেরি বলেছেন, 'এ প্যাকেজের সবটাই নতুন নয়। এতে যেসব খরচের কথা বলা হয়েছে, তার উলেস্নখযোগ্য একটি অংশ আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে খুব কম।' সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের ঘোষিত প্রণোদনার সম্মিলিত আকার প্রায় ১০ হাজার ২৬০ কোটি ডলার বলে বেরি জানান। অর্থাৎ নতুন সহায়তার পরিমাণ হবে ১৬ হাজার ২৪০ কোটি ডলার। মঙ্গলবার টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, 'ল্যান্ড, লেবার, লিকুইডিটি ও ল'-কে কেন্দ্র করে নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ সাজানো হয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসা, কুটির শিল্প, দিনমজুর, কৃষক ও মধ্যবিত্তরা এতে উপকৃত হবেন। এছাড়া অভিবাসী শ্রমিকদের কল্যাণেও এ অর্থ ব্যয় করা হবে।' মোদি তার ভাষণে প্যাকেজের বিস্তারিত বিষয়গুলো তুলে না ধরলেও প্রণোদনার অর্থ 'আত্মনির্ভর ভারত' গড়ে তোলার কাজে লাগাতে বলেছেন। তিনি বলেন, 'এ প্যাকেজ আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।' প্রায় দুই মাসের কঠোর লকডাউনের কারণে উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করেছে ভারতের অর্থনীতি। গত চার দশকের মধ্যে এই প্রথম পুরো অর্থবছরে সংকোচনের আশঙ্কায় রয়েছে দেশটির জিডিপি। এরই মধ্যে নতুন করে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে মোদি প্রশাসন। ১৭ মে চলতি মেয়াদের লকডাউন শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে বিভিন্ন রাজ্য সরকারের পরামর্শক্রমে চতুর্থ দফার লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তবে এবারের লকডাউন আগেরগুলোর চেয়ে 'সম্পূর্ণ ভিন্ন' হবে- এমন আভাস দিয়ে তিনি জানান, কিছু নতুন নিয়ম চালু করা হবে। মোদি বলেন, 'ভারত করোনা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে না।' অর্থনৈতিক স্থবিরতায় বিপাকে পড়েছেন শ্রম ও পেশাজীবী মানুষ। এপ্রিলে চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ১২ কোটি ২০ লাখ ভারতীয়। সবচেয়ে অমানবিক পরিস্থিতিতে রয়েছেন অভিবাসী শ্রমিকরা। লকডাউনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি বতর্মানে বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্পও বন্ধ। এসব প্রকল্পে কাজ করতে ভারতের এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পাড়ি জমান লাখ লাখ শ্রমিক। লকডাউনের কারণে এসব শ্রমিক নিজ নিজ কর্মস্থলে আটকা পড়েন। এদিকে চাকরি না থাকায় বেতনও বন্ধ। সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সাও কয়েক দিনের লকডাউনে শেষ। ফলে বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। কখনো মালবাহী ট্রাকে করে, কখনো পায়ে হেঁটে। মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনায় প্রাণও হারাচ্ছেন তারা। সরকারের পক্ষ থেকে এসব অভিবাসী শ্রমিকের প্রণোদনা দেয়াটা তাই সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।