বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বে ড়া নো সুন্দরবন

আহনাফ ইশতিয়াক
  ২৭ অক্টোবর ২০২০, ১৬:৫৪

ভ্রমণ পিপাসু আমরা অনেকেই। কিন্তু সেই সঙ্গে যদি অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মনোভাব থাকে তাহলে রহস্য আর রোমাঞ্চে ঘেরা সুন্দরবন হতে পারে আপনার বেড়ানোর জন্য আদর্শ জায়গা। টাইগারদের খুঁজে খুঁজে এক নজর দেখার অভিজ্ঞতাও কম রোমাঞ্চকর নয়। দুর্ভাগ্যবশতই যদি আপনি বাঘ দেখতে নাই পান, তবে নৌকার গলুইতে বসে শ্বাসমূলের বনটি দেখতে থাকুন, এক ধরনের স্বপ্নময় ঘোরে কেটে যাবে আপনার সময়। জালের মতো বিছানো শত শত নদী আর খালের বাঁকে বাঁকে সৌন্দর্যের পসরা দেখে প্রাণ জুড়ানো অভিজ্ঞতা সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন।

সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি। এই বন বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিস্তৃত। ১০,৬০০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে। এমন নৈসর্গিক দৃশ্যাবলি দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় আর দ্বিতীয়টি নেই। সুন্দরবন ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশ একই নিরবচ্ছিন্ন ভূমিরূপের অংশ হলেও ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের সূচিতে ভিন্ন ভিন্ন নামে সূচিবদ্ধ হয়েছে যথাক্রমে সুন্দরবন ও সুন্দরবন জাতীয় পার্ক নামে। সুন্দরবনকে জালের মতো জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ছোট ছোট দ্বীপ। মোট বনভূমির ৩১.১ শতাংশ, অর্থাৎ ১,৭৫৬ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদী, খাল ও খাড়ি এলাকা। বনভূমিটিতে রয়েছে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও চিত্রা হরিণ, কুমির কামট ও সাপসহ ৪২ প্রজাতির বন্যপ্রাণী। রয়েছে মদনটাক ও ধনেশসহ ৩৫ প্রজাতির পাখি। সুন্দরবনে রয়েছে ৪০ ধরনের ম্যানগ্রোভ বৃক্ষ। বনের অভ্যন্তরের নদ নদীতে বাস করে প্রায় ৪০০ প্রজাতির মাছ। এই ম্যানগ্রোভ বন ১৯৯২ সালের ২১ মে রামসার সাইট হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
বেড়ানোর জন্য বেশ কটি চমৎকার জায়গার বর্ণনা
করমজল: সুন্দরবনের পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের অধীনে করমজল পর্যটন কেন্দ্র। এটা সুন্দরবনের প্রথম স্পট। মংলা থেকে চার ঘণ্টায় ঘুরে আসা যায় অনায়াসেই, কোন পারমিশনের প্রয়োজন হয় না, ২৩ টাকার প্রবেশ টিকিট সংগ্রহ করলেই যথেষ্ট। টিকিট কেটে ঢোকা মাত্রই দেখতে পাবেন, সুন্দরবনের সুবিশাল মানচিত্র। এখান থেকেই সুন্দরবন সম্পর্কে মোটামুটি ধারণ নিতে পারেন। এখানে রয়েছে বনে হাঁটার জন্য একটি ট্রেইল ও ওয়াচ টাওয়ার, সুন্দরবনের অন্য স্পটগুলোতে হরিণ, কুমির বা বানর দেখতে পান বা না পান করমজলে তাদের দেখবেনই। কারণ তাদেরকে বেঁধে রাখা হয়েছে। এ দৃশ্য অবশ্য যে কোনো চিড়িয়াখানাতেও দেখা যায়।
হিরণ পয়েন্ট: বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ লোনাবন। সুন্দরবনের দক্ষিণাংশের একটি সংরক্ষিত অভয়ারণ্য। এর আরেক নাম নীলকমল। প্রমত্তা কুঙ্গা নদীর পশ্চিম তীরে, খুলনা রেঞ্জে এর অবস্থান। হিরণ পয়েন্ট, ইউনেস্কো ঘোষিত অন্যতম একটি বিশ্ব ঐতিহ্য। অভয়ারণ্য হওয়ায় এখানে অনেক বাঘ, হরিণ, বানর, পাখি ও সরীসৃপের নিরাপদ আবাসস্থল। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখার অন্যতম একটি স্থান হলো হিরণ পয়েন্ট।
কটকা-কচিখালী: কচিখালী এলাকার সংলগ্ন সমুদ্র তীরবর্তী অংশের তৃণভূমি জাতীয় বনভূমি ১২০ বর্গমাইল এলাকায় কটকা-কচিখালী অভয়ারণ্য অবস্থিত। এই বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে প্রায় সারা বছর বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী নির্ভয়ে বিচরণ করে। এখানে বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ টাওয়ার রয়েছে।
দুবলার চর: দুবলার চর সুন্দরবনের দক্ষিণে, কটকার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি দ্বীপ, যা চর নামে হিন্দুধর্মের পুণ্যস্নান, রাসমেলা ও হরিণের জন্য বহুল পরিচিত। কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মধ্যে এটি একটি বিচ্ছিন্ন চর। দুবলার চর মূলত জেলে গ্রাম। মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুঁটকি শোকানোর কাজ। প্রতি বছর কার্তিক মাসে (নভেম্বর) হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাসমেলা এবং পুণ্যস্নানের জন্যও দ্বীপটি বিখ্যাত।
অভয়ারণ্য: বর্তমানে সুন্দরবনে তিনটি অভয়ারণ্য রয়েছে। এগুলো হলো কটকা কচিখালী অভয়ারণ্য, নীলকমল অভয়ারণ্য ও পশ্চিম অভয়ারণ্য। নীলকমল অভয়ারণ্য হিরণ পয়েন্ট ও নীলকমল এলাকায় পর্যটকদের খুবই আকর্ষণীয় স্থান।
যেভাবে আসতে হয় সুন্দরবনে
নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এই মাসগুলোতে নিয়মিতই ট্যুর অপারেটরদের প্যাকেজ থাকে। চাইলেই তাদের প্যাকেজে অন্যদের সঙ্গে মিলে ট্যুরে যাওয়া সম্ভব। আর নিজেরা যেতে চাইলে ছোট দুই একটি গ্রুপ মিলেও ট্যুরে যাওয়া যেতে পারে। অথবা নিজেরা ইভেন্ট করে কয়েকজন মিলে করা যেতে পারে ভ্রমন গ্রুপ। সুন্দরবন দেখতে গেলে দুটি রুটে যেতে পারে। প্রথমটি ঢাকা-খুলনা এবং দ্বিতীয়টি ঢাকা-শ্যামনগর। বাসে যেতে চাইলে রাজধানীর মতিঝিল, কলাবাগান, শ্যামলী, কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে গ্রিনলাইন, সোহাগ, হানিফ, ঈগল, এ কে ট্রাভেলস, এসপি গোল্ডেন লাইন, সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস, ইয়োলো লাইনসহ বিভিন্ন এসি/ননএসি বাস খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। শ্যামনগর নেমে বুড়িগোয়ালিনী ঘাট, আর খুলনা নেমে লোকাল বাসে মংলা যেতে হবে। বাসে ভাড়া পড়বে ৫০০-১৫০০ টাকা। ট্রেনেও প্রায় একইরকম। প্লেনে গেলে ভাড়া গুণতে হবে সাড়ে ৩ হাজার টাকার মতো।
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে