সৌন্দর্যে ঘেরা সোনার চর : সাগরের বুকে একটুকরো স্বর্গ

প্রকাশ | ০৭ জুলাই ২০২১, ২০:৫৩

মাসুম বিল্লাহ, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী)

চারদিকে সমুদ্রের অথই জলরাশি। মাঝখানে সবুজে ঘেরা একটি দ্বীপ। যেন সাগরের বুকে জেগে ওঠা এক টুকরো স্বর্গ। বলছিলাম সৌন্দর্যের লীলাভূমি সোনার চরের কথা। পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে রাঙ্গাবালী উপজেলায় অবস্থিত সোনার চর। উপজেলার দক্ষিণ সীমান্তে ১০ হাজার একর আয়তনের চরটি দুর্গম হলেও হৃদয়জুড়ানো সৌন্দর্য এর। বিস্তীর্ণ বনভূমির পাশাপাশি চারপাশে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত নিয়ে সোনার চর। ‘সাগরকন্যা’ কুয়াকাটা থেকে পূর্ব-দক্ষিণ দিকে এর দূরত্ব মাত্র ৩০ কিলোমিটার। রাঙ্গাবালী উপজেলা সদর ট্রলারযোগে প্রায় তিনঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে যাওয়া যায় সোনার চরে।

বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে আসেন দূরদূরান্ত থেকে। এখানে রয়েছে গাছপালা, বন্য পশুপাখি ও অপরূপ সৈকত। এছাড়া বনের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ছোট-বড় অসংখ্য খাল। কেওড়া, গোলপাতা, বাইন, গেওরা, সুন্দরী, পশুর, ঝাউসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষের সমাহার এখানে। কান পাতলে ঝাউবাগানের বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ ভেসে আসে কানে। সাগরের জল আছড়ে পরে দীপের চারপাশের সৈকতে। শেষ বিকালে সমুদ্রসৈকতে শুরু হয় লাল কাঁকড়ার অবিরাম ছোটাছুটি।

চরটি সোনা দিয়ে তৈরি না হলেও সূর্যের প্রখর রোদে এর বালুরাশি সোনার মতোই চিকচিক করে ওঠে। আর এ কারণেই এর নামকরণ হয় সোনার চর। ২০০৪ সালে বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠে চরটি। ধীরে ধীরে এর সৌন্দর্যের কথা ছড়িয়ে পরে চারদিকে। শুরু হয় পর্যটকদের আগমন। ‘সোনার চর’ নামটিও ততদিনে প্রশাসনিক নামে স্থায়িত্ব পায়। আয়তনের দিক থেকে সুন্দরবনের পরেই এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশাল সমুদ্রসৈকত। ২০১১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সরকার বিশ হাজার ২৬ হেক্টর আয়তনের এই বনভূমিকে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে। একই বছরের ২৪ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এরপর থেকেই বনায়ন শুরু করে বন কর্তৃপক্ষ।

 

দ্বীপটিতে বহু প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বসবাস রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বানর, খেঁকশিয়াল, উদবিড়াল, বেজি, বাঘডাসা, সাপ, কচ্ছপ এ দ্বীপের স্থায়ী বাসিন্দা। কখনো কখনো দু চারটা হরিণের সঙ্গেও দেখা হয়ে যায় ভ্রমণপিপাসুদের।

 

সারাদিনই পাখির কলরবে মুখর থাকে পুরো চর। বিশেষ করে শীত মৌসুমে ১০ লক্ষাধিক অতিথি পাখির সমাগম ঘটে এখানে। গাঙচিল, গাঙকবুতর, বালিহাঁস, পাতিহাঁস, সাইবেরিয়ান লালহাঁস, পানকৌড়ি, বক, মদনটাক উড়ে বেড়ায় এখানে-সেখানে। অতিথি পাখির কলরব আর সাগরের ঢেউয়ের গর্জনে মুখর হয়ে ওঠে সোনার চরের প্রাকৃতিক পরিবেশ। বনের আশপাশে মাছ শিকার করেন শতাধিক জেলে। এখানে চিংড়ি, ছুড়ি, লইট্টা, ফাইস্যা, মেদ, টেংরা, গুলিশা, বৈরাগী, রামচোচ, কোরাল, পোমা, শাপলাপাতা প্রভৃতি সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়।

 

তবে রাতে পর্যটকদের থাকার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই এখানে। তাই ইচ্ছে থাকলেও রাতের বেলা এখানে থাকতে পারেন না পর্যটকরা। তারা দিনে এসে আবার ফিরে যায়। এ কারণে রাতের সৌন্দর্য অধরাই রয়ে গেছে তাদের। এখানে নেই যাতায়াত ও  খাওয়া-দাওয়ার সুব্যবস্থা। বছরখানেক আগে ঢাকা থেকে চর মোন্তাজে একটি লঞ্চ সার্ভিস চালু হলেও সেটি কিছুদিন পরে বন্ধ হয়ে যায়।

 

চরের সৌন্দর্য ও বন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এখানে বন বিভাগের একটি বিট অফিস আছে। চর সংরক্ষণে পর্যাপ্ত জনবলের সংকট রয়েছে বলে জানান মোন্তাজের ফরেস্ট রেঞ্জার অমিতাভ বসু। এছাড়াও যাতায়াতের জন্য লঞ্চ সেবা, পরিবেশ রক্ষায় শৌচাগার সেবা চালু করা প্রয়োজন বলেও তিনি মনে করেন।

 

কথা বলছিলাম পটুয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলামের সঙ্গে।

 

তিনি জানান, ‘সোনার চর অত্র এলাকার জন্য এক সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র। এর যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি।’ তিনি যাতায়াতের জন্য ট্রলার বা স্পিডবোট সেবা চালুকরণ, পর্যটকদের জন্য যাত্রী ছাউনি, রেস্টুরেন্ট ও আবাসিক হোটেল স্থাপনের প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করেন।

যাযাদি/এস