কক্সবাজারে তিল ধারণের ঠাঁই নেই

প্রকাশ | ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:৩৩

যাযাদি ডেস্ক

মহান বিজয় দিবস ঘিরে লাখো পর্যটকের পদভরে মুখরিত হয়ে উঠেছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। বিজয় দিবসের ছুটিসহ সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা তিন দিনের ছুটি পেয়ে কক্সবাজারে ছুটে এসেছেন কয়েক লাখ পর্যটক।

 

বৃহস্পতিবার সকালে সৈকতের বালিয়াড়িতে যতদূর চোখ যায় মানুষ আর মানুষ। দীর্ঘ বালিয়াড়ি জুড়ে মানুষের স্রোতে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই।

 

সৈকত ছাড়াও জেলার প্রায় সবগুলো পর্যটন স্পটে হাজারো পর্যটকের উপস্থিতিতে এখন প্রাণচঞ্চল। সেন্টমার্টিন দ্বীপ, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির, হিমছড়ি, ইনানী, দরিয়ানগর, সোনাদিয়া, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকাগুলোতে বিপুল পর্যটকের সমাগম রয়েছে। এ ছাড়াও কক্সবাজার শহরের বার্মিজ মার্কেট, রাখাইন পল্লী, বৌদ্ধ মন্দির ও রামুর বৌদ্ধ মন্দিরেও পর্যটকদের প্রচুর ভিড় দেখা গেছে।

 

রাজধানী ঢাকার উত্তরা থেকে কক্সবাজার ভ্রমণে আসা লুবনা রহমান জানান, টানা তিনদিন ছুটি পেয়ে আমি বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারে পৌঁছেছি। কিন্তু এখানে কোনো হোটেল ফাঁকা পাইনি। তবুও বিশাল সমুদ্রের সামনে এলে মনটা জুড়িয়ে যায়। এটাই কক্সবাজার ভ্রমণের আনন্দ।

 

সেন্টমার্টিন ঘুরে এসে ক্লান্ত ফাহিম উদ্দীনের বাড়ি ফেরার পালা। বন্ধুবান্ধবসহ তিনি এসেছেন চট্রগ্রাম থেকে।ফাহিম জানান, বিজয় দিবসকে ঘিরে কক্সবাজারে পর্যটক বেশি আসছে।এ কারণে হোটেল পাওয়া যাবে না তাই আগেভাগেই সোমবার কক্সবাজারে এসেছিলেন তিনি। মঙ্গলবার সেন্টমার্টিনে গিয়ে দেখেন, সেখানে পা ফেলার জায়গা নেই।হোটেল না পেয়ে তিনি এবং তার বন্ধুরা মিলে বুধবার রাতে রহমান নামে এক স্থানীয় সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দার বাড়িতে আশ্রয় নেন তারা।

 

ঢাকা উত্তরা থেকে স্বপরিবারে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন মো. নোমান। তিনি জানান, ইনানী, হিমছড়ি, রামুর বৌদ্ধবিহার দেখেছি। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো। যে কারণে সৈকত ও আশেপাশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পর্যটকরা।

 

এদিকে পর্যটকদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হোটেল, মোটেল ও গেস্টহাউসগুলোতে। ১৩ ডিসেম্বর থেকে এখানকার হোটেল, মোটেলগুলোতে থাকার জায়গাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

 

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেশিভাগ হোটেল ও গেস্টহাউসগুলো বুক হয়ে গেছে। ৫ লাখের অধিক পর্যটক উপস্থিতির আশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। এ তিনদিনে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হতে পারে বলেও আশা করছেন তারা।

 

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, কলাতলীসহ ১১টি পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে তথ্য কেন্দ্র। পর্যটকদের করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সর্বদা সচেতনতা মূলক মাইকিং ও প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। পর্যটক হয়রানি বন্ধে মাঠে থাকছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত। কোথাও পর্যটক হয়রানির অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

অন্যদিকে নিরাপত্তা বলয় তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ। নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসা, তথ্য সেবা, পানীয় জলের ব্যবস্থাসহ নানা সেবামূলক কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান।

 

তিনি জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্তক অবস্থায় দায়িত্বপালনে রয়েছে ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ। মোতায়েন রাখা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশও। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে পর্যটন স্পটগুলো। ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রুত সাধারণ চিকিৎসা ও খাবার পানির ব্যবস্থাও রয়েছে।

 

যাযাদি/ এস