রাণীশংকৈলের রাণী সাগরে অতিথি পাখি দেখতে পর্যটকদের ভিড়
প্রকাশ | ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৮:৩১
অন্যতম প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ রামরাই রাণীসাগর দিঘিতে অতিথি পাখিদের আগমনে মুখরিত এখন পুকুর প্রাঙ্গণ। পাখি দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড়। পুরো দিঘির জলাশয় সেজেছে নতুন সাজে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাখি ও জলাশয়ের প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর। প্রতি বছর শীত এলেই এসব পাখি এখানে এসে প্রকৃতিতে সাজাই নতুন সাজে। এটি হলো অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্যÑ ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার একমাত্র সরকারি পর্যটন কেন্দ্র রামরাই দিঘি।
প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির সমাগম হয়েছে এখানে। পাখিদের কলকাকলিতে পুরো এলাকা মুখরিত। পাখি প্রেমী ও সৌন্দর্য পিপাসুরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমÐিত পর্যটন কেন্দ্রের পাখিগুলোকে দেখার জন্য ছুটে আসেন। পাখি দেখতে পাওয়া যায়, শোনা যায় তাদের মুখের ডাক। রামরাই রাণীসাগর দিঘিতে এখনো প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে অতিথি পাখির দল। পাখিদের মুহুর্মুহু কলতানে পুরো দিঘি এলাকা পরিণত হয়েছে পাখির স্বর্গরাজ্যে। সন্ধ্যা নামলেই দিঘিপাড়ের লিচুবাগানে আশ্রয় নেয় এসব পাখি। ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় খাবারের সন্ধানে রামরাই দিঘিতে ভিড় জমায় তারা। পাখিদের এই মুহুর্মুহু কলতানের টানে প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে রামরাই দিঘিতে ছুটে আসছেন পাখিপ্রেমী পর্যটকরা ।
এ দেশের নদনদী, হাওড়-বাঁওড়ের ভালোবাসার টানে লক্ষ হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে রামরাই দিঘিতে আসে তারা। আত্মীয়দের সঙ্গে যেমন আত্মার সম্পর্ক গড়ে ওঠে, এখানকার ভ‚প্রকৃতির সঙ্গেও তেমনি আত্মীয়তার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে এসব অতিথি পাখি। প্রচÐ শীতের কারণে সাইবার অঞ্চল থেকে আসা পাখিগুলো নোংরা ময়লা আবর্জনা দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে থেকে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে। পাখিগুলো সারাদিন রামরাই দিঘি বা রাণীসাগরে আহার করে সন্ধ্যা হলে আশপাশের জলাশয়গুলোতে আশ্রয় নেয়। সকাল হলেই আবার রাণীসাগরে ফিরে এসে খাবার সংগ্রহ করে। উপজেলা শহর থেকে ৪ কিমি দূরে উত্তরগাঁও গ্রামের নিকটেই বরেন্দ্র অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তর জলাশয় রামরাই দিঘির অবস্থান। শহর থেকে যেকোনো যানবাহনে ১০ থেকে ১৫ টাকা ভাড়া নেয়। যেতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিটের রাস্তা।
সরেজমিনে কথা হয় সৈয়দপুরের সেলিনা বেগমের সঙ্গে। তিনি প্রতিবেদককে জানান, শুনেছিলাম রাণীসাগরে অনেক পাখি আসে। তাই দেখতে এসেছিলাম। এখানে এসে মনটা ভরে গেল। পুকুরের চারদিকের শত শত লিচুগাছ দেখতে বেশ মনোরম। পুকুরের নিচ থেকে পাড়ের দিকে তাকালে মনে হয় আকাশের সঙ্গে মিশে আছে। কথা হয় ৬৫ বছরের সোলেমান আলীর সঙ্গে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, শত বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য রামরাই দিঘিতে মুরগির লিটার দিয়ে এখানকার পানি ময়লা করা হচ্ছে। পুকুরের পানিতে মানুষ গোসল করতে পারে না। দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দিঘি পাশের স্থানীয়রা জানান, আমাদের এখানে যে অতিথি পাখি আসছে তার নাম ছোটসরালি।
শীতের শুরু থেকে বহু মানুষ আসছেন এসব অতিথি পাখি দেখার জন্য। অনেক সময় অনেক পাখি শিকারিরাও আসেন পাখি শিকারের উদ্দেশ্যে আমরা সব সময় তাদের নিরুৎসাহিত করি। কারণ অতিথি পাখিরা আমাদের দেশে আসে অতিথি হয়ে। পুকুরের পশ্চিম পাড়ে হোসেনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়। কথা হয় চেয়ারম্যান মাহবুব আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, অতিথি পাখিরা প্রতি বছর দূরদূরান্তের লোকজন এখানে পাখিগুলো দেখতে আসে। কাউকে পাখি শিকার করতে দেওয়া হয় না। রামরাই দিঘিকে পুরোপুরিভাবে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ জানায়- রামরাই দিঘি রাণীশংকৈলের জন্য একটি অহংকার, রাণীশংকৈলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে রেখেছে, ছোট সরালি জাতের অতিথি পাখি আমাদের এই রামরাই দিঘিতে প্রতি শীতকালেই আসে। অতিথি পাখিদের আবাসস্থলে কোনো সমস্যা যেন না হয় সেই জন্য মেশিনের নৌকা চালানো নিষেধ করা হয়েছে। আশা করছি বড় ধরনের বাজেট পেলে এটি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলব। বর্তমান এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে পর্যটকদের বসার ও রান্নাবান্না করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
যাযাদি/ এস