শিবচরে নবনির্মিত রেলপথে ভ্রমণপ্রেমীদের ভিড় বেড়েছে

প্রকাশ | ০৯ মে ২০২৩, ০৯:৪৫

এস.এম.দেলোয়ার হোসাইন, শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
ছবি-যাযাদি

মাদারীপুরের শিবচরে নবনির্মিত রেলপথে ভ্রমণপ্রেমীদের ভিড় বেড়েছে। প্রতিদিন বিকেলের অবকাশ কাটাতে অসংখ্য মানুষ ঘুরতে আসছে এই রেলপথে। প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রেলপথে অবসর সময় কাটাতে দেখা যায় অসংখ্য মানুষকে। কেউ রেলপথ ধরে প্রিয়জনদের নিয়ে হাঁটছেন, কেউ বসে গল্প করছেন, কেউবা বাদাম চিবোচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ছবি তুলতে ব্যস্ত ।

দর্শনার্থীদের ভিড় থাকায় ভাসমান বিক্রেতাদের জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রও তৈরি হচ্ছে এখানে। অনেককে ঘুরে ঘুরে নানারকম মুখরোচক খাবার বিক্রি করতে দেখা গেছে।

সরেজমিন শিবচরের রেলপথের দত্তপাড়া, পাঁচ্চর, কুতুবপুর এলাকায় গিয়ে অসংখ্য মানুষের ভিড় দেখা গেছে। রেলপথে ঘুরতে আসা এসব লোকজনের বেশির ভাগই ঈদ উপলক্ষে বাড়ি বেড়াতে আসে। অনেকে আবার আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে এসেও বিকেলে ঘুরতে বের হয়। দর্শনার্থীরা এখানে আসেন। এর মধ্যে কেউ স্ত্রী-ছেলে নিয়ে, কেউ বা এসেছেন পরিবারের সদস্য নিয়ে,আবার কেউ বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে। বিকেল থেকেই তরুণ-তরুণীরা আড্ডা, গান বাজনা আনন্দ আর হৈচৈ শুরু করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটারের মধ্যে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার এবং ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৯ কিলোমিটার অংশের কাজের অগ্রগতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পদ্মাসেতুর জাজিরা টোলপ্লাজা পর্যন্ত রেলপথ রয়েছে ৩১ কিলোমিটার।

আরও জানা গেছে, এই ৩১ কিলোমিটার রেলপথ শরিয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা, শিবচরের কুতুবপুর, পাঁচ্চর, দত্তপাড়া, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ব্রাহ্মণপাড়া, মালিগ্রাম, বামনকান্দা গ্রামের মধ্য দিয়ে ভাঙ্গা স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছেছে। এর মধ্যে ভাঙ্গা উপজেলার মালিগ্রাম, শিবচরের বাঁচামারা ও জাজিরার নাওডোবা সংলগ্ন এলাকায় নির্মাণাধীন রয়েছে জংশন।

পদ্মাসেতু পার হয়ে মাদারীপুরের শিবচর এই প্রথম রেলপথের আওতায় এসেছে। গ্রামের মধ্য দিয়ে যাওয়া এই রেলপথ নিয়ে স্থানীয়দের আগ্রহের শেষ নেই।

রেলপথে ঘুরতে আসা লিটন খান বলেন, ‘ঈদের ছুটি শেষ হলেও পরিবার নিয়ে ঢাকায় যাওয়া হয়নি। অফিস করে বুধবার বিকেলেই আবার বাড়ি এসেছি। বিকেলে সবাইকে নিয়ে রেলপথে ঘুরতে এসেছি। অনেক লোকজন আসছে এখানে। ভালোই লাগছে।’

সুমাইয়া আক্তার নামের এক কলেজছাত্রী বলেন, ‘এখানে খালাবাড়ি বেড়াতে এসেছি। বিকেলে রেলপথে ঘুরতে বেরিয়েছি। অসংখ্য মানুষ এখানে ঘুরতে আসছে। রেলপথ উঁচু হওয়ায় বেশ বাতাস এখানে। সব মিলিয়ে ভালো লাগছে।’

শিবচরের শিরুয়াইল এলাকা থেকে ঘুরতে আসা নওরিন আক্তর আয়শা বলেন, পরিবার নিয়ে বিকেলে রেলপথে ঘুরতে এসেছি। রেলপথে পড়ন্ত বিকেলে মুক্ত বাতাস আর নয়নাভিরাম দৃশ্য খুবই ভালো লেগেছে। তাই সবাইকে নিয়ে রেলপথ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখার পাশাপাশি স্মৃতি হিসাবে ছবি তুলে রাখলাম।  

একজন বাদাম বিক্রেতারা বলেন, ‘ঈদ ছাড়াও প্রতিদিন বিকেলে রেলপথে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি থাকে। তবে ঈদে প্রচুর লোকজন প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রেলপথের পাঁচ্চর, কুতুবপুর, নাওডোবা, দত্তপাড়া এলাকায় ঘুরতে আসে। এই সময়ে বাদাম বিক্রি অনেক বেড়েছে। অন্যান্য কাজের পাশাপাশি স্থানীয় অনেকে বিকেলে বাদাম, ঝালমুড়িসহ নানান হালকা খাবার বিক্রি করে বাড়তি উপার্জন করছেন।’

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মাসেতু হয়ে ট্রেন যাবে রাজধানী ঢাকায়। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পদ্মাসেতু পার হয়ে গত ৪ এপ্রিল পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল করে মাওয়া স্টেশন পর্যন্ত। ট্রেন চালু হলে এই এলাকার লোকজন কম খরচে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে। তাই এই অঞ্চলে রেলপথ ঘিরে বাড়তি আগ্রহ সাধারণ মানুষের মনে।

যাযাদি/ এস