উত্তাল সমুদ্রে গোসলে মাতেন পর্যটকরা

প্রকাশ | ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ১০:০৬

জাবেদ আবেদীন শাহীন, কক্সবাজার

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা ৭টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কক্সবাজারে দিনভর কখনো ভারী, কখনো মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় সমুদ্রবন্দরে ছয় নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ ছাড়া সৈকতের বালুচরে একাধিক লাল নিশানা ওড়ানো হয়েছে। জানমালের নিরাপত্তায় পর্যটকসহ কাউকে সমুদ্রের পানিতে না নামতে নিষেধ করলেও কেউ তা মানছেন না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শারদীয় দুর্গাপূজার ছুটিতে অনেক পর্যটক কক্সবাজার বেড়াতে এসেছেন। তাদের অনেকে বৈরী আবহাওয়ার ফাঁদে পড়েছেন। সে জন্য এমন আবহাওয়া সত্ত্বেও আনন্দ মাটি করতে চাইছেন না তারা। তবে সাগর উত্তাল থাকায় যে কানো সময় দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে সেন্টমার্টিনে অবস্থানরত সব পর্যটককে তিনটি জাহাজে করে সোমবার টেকনাফে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেন্টমার্টিন টেকনাফ নৌরুটে যে কোনো ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন।

মঙ্গলবার সকাল থেকে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, সাগর স্বাভাবিক পরিস্থিতির চেয়ে উত্তাল রয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজারে অবস্থানরত পর্যটকের উপস্থিতি দেখা গেছে। এসব পর্যটক সাগরে নেমে গোসল করছেন। যা ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে জেলা প্রশাসন ও টু্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষে চালানো হচ্ছে প্রচারণা। বলা হচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে সাগরে নামা নিরাপদ নয়, তাদের উঠে আসতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। কিন্তু তাও মানছে না পর্যটকরা। এ ছাড়া উত্তাল সাগরে নামতে নিষেধ করে সৈকতে একাধিক লাল নিশানা (পতাকা) ওড়ানো হলেও সেদিকে কারও নজর নেই। 

বৈরী পরিবেশের মধ্যে গোসল করতে আসা ঢাকার পর্যটক দম্পতি জাহাঙ্গীর হাসান বলেন, কক্সবাজারে পাঁচ দিনের জন্য বেড়াতে এসেছি। মঙ্গলবার সেন্টমার্টিন যাওয়ার কথা থাকলেও জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আর যাওয়া হয়নি। কি আর করা; সমুদ্রে গোসল করছি। আজ রাতেই বাড়ি ফিরে যাব।

সৈকতে নিয়োজিত জেলা প্রশাসনের কর্মী বেলাল হোসেন জানান, পর্যটকরা কোনো অনুরোধ মানছেন না। বার বার অনুরোধ করার পরও সাগরে নেমে গোসল করছেন অনেকেই। বেশি অনুরোধ করলে উল্টো রেগে গিয়ে বকাঝকা করছেন। যদিও লাইফগার্ড কর্মীরা সর্তকর্তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি আরও জানান, জোয়ারের সময় পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উচ্চতা বাড়তে পারে। পর্যটকদের সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কক্সবাজার জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির এই সভাটি মঙ্গলবার বেলা ১১টায় জুমের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের সভাপতিত্বে এই সভায় জেলার সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তাসহ কমিটির সদস্যরা সংযুক্ত ছিলেন।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রস্তুতি সভায় পূর্ণিমাকালীন সময় সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সম্ভাব্য জলোচ্ছ্বাস থেকে নিচু এলাকার জানমাল রক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, টেকনাফ, পেকুয়া, চকরিয়া, উখিয়া, কক্সবাজার সদর এবং রামু উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নিচু এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে আনতে বলা হয়েছে। 

সভায় বলা হয়, জেলার ৯টি উপজেলায় ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। উপকূলীয় কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, টেকনাফসহ সেন্টমার্টিন দ্বীপে মাইকিং করে নিচু এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

যাযাদি/ এস