সৌন্দর্যের আরেক নাম রিসাং ঝর্না

প্রকাশ | ১৭ জুন ২০২৫, ১৭:০৫ | আপডেট: ১৭ জুন ২০২৫, ১৭:৪৩

স্টাফ রিপোর্টার, খাগড়াছড়ি
খাগড়াছড়ির রিসাং ঝর্না: ছবি যায়যায়দিন

আকাঁ বাঁকা পথ, উঁচু নিচু পাহাড় ঝিরি-ঝর্ণা আর সবুজের লীলা ভূমি পার্বত্য খাগড়াছড়িতে রয়েছে আরেক অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা রিসাং ঝরনা। যার স্বচ্ছ জলে আনন্দে মেতেছেন পর্যটকেরা। 

রিসাং’ শব্দটি মারমা ভাষার। ‘রি’ মানে পানি আর ‘সাং’ মানে লাফিয়ে পড়া; অর্থাৎ উঁচু স্থান থেকে জলরাশির লাফিয়ে পড়া। স্থানীয় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী ঝরনাটিকে ‘তেরাং তৈকালাই’ নামে চেনে। তাঁদের ভাষায় ‘তেরাং’ মানে পানি আর ‘তৈকালাই’ মানে ওপর থেকে পড়া।

খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে রিসাং ঝরনা। মূল সড়ক থেকে আরও এক কিলোমিটার দক্ষিণে গেলেই কানে ভেসে আসে ঝরনার কলতান। 
পাহাড়ের ঢাল বেয়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা। দুই পাশে জুমঘর, বুনো ঝোপ আর নাম না জানা পাহাড়ি ফুলের মেলা। চারপাশজুড়ে শুধু সবুজের সমারোহ। পাখির কলকাকলিতে আনন্দে ভরে উঠে মনপ্রাণ। 

গাড়ি থেকে নেমে ঝরনায় যেতে হলে নামতে হবে পাহাড় বেয়ে। তারপর বিশাল সিঁড়ি। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে কানে ভেসে আসে ঝরনার কলতান। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামা শেষ না হতেই চোখের সামনে ধরা দেয় ঝরনা। 
১২০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ছে সাদা জলের ধারা। কাছে গেলেই জলের ছিটা ফোটায় ভিজে ওঠে শরীর, মন ভরে যায় স্নিগ্ধতায়।
রোববার সকালে গিয়ে দেখা যায়, ঝরনার স্বচ্ছ জলে হইহুল্লোড় করছেন অনেক পর্যটক।

চট্টগ্রাম থেকে সপরিবার এসেছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী এম কে মোমিন। তিনি বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে অনেক আগে থেকেই খাগড়াছড়ি ঘুরতে আসার পরিকল্পনা ছিল। পাহাড় আর ঝরনা দেখতে এসেছি। গরমে এখানে এসে খুব ভালো লাগছে। যদিও সিঁড়ি দিয়ে নামাটা বেশ কষ্টকর ছিল।’

মোমিনের মতো আরও অনেকে ভিড় জমিয়েছেন ঝরনা ঘিরে। তাঁরা রিসাংয়ের পাশাপাশি ঘুরে দেখছেন আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র, গুহা, তারেং আর জেলা পরিষদ পার্ক।

রামগড় থেকে ঈদ উপলক্ষে এসেছেন, মোজাম্মেল, রতনসহ এক দল তরুণ। তাঁরা জানালেন, নানা জায়গায় ঘোরার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু প্রচণ্ড গরমের কারণে শেষ পর্যন্ত ঝরনায় এসেছেন।
রিসাং ঝরনার তত্ত্বাবধান করে জেলা প্রশাসন। ঝরনায় ঢুকতে জনপ্রতি নেওয়া হয় ৫০ টাকা। ঝরনার ব্যবস্থাপক নিপুণ জয় ত্রিপুরা বলেন, ‘ঈদের দিন থেকেই পর্যটকদের আসা শুরু হয়েছে। ঈদের দ্বিতীয় দিনেই এক হাজারের বেশি মানুষ এসেছেন। সামনে আরও ভিড় বাড়বে।’

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, ঈদ উপলক্ষে জেলার সব পর্যটনকেন্দ্রে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, যাতে পর্যটক ও স্থানীয় মানুষেরা নিশ্চিন্তে ঘুরতে পারেন।
২০০২ সালের দিকে রিসাং ঝরনা পর্যটকদের নজরে আসে।

কীভাবে যাবেন
চট্টগ্রাম শহরের অক্সিজেন ও কদমতলী বিআরটিসি বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি বাসে করে খাগড়াছড়ি যাওয়া যায়। ঢাকা থেকেও সেন্ট মার্টিন, এস আলম, শ্যামলী, শান্তিসহ বিভিন্ন পরিবহনের বাস যায় রাত ও সকালে।
খাগড়াছড়ি শহরের বাস টার্মিনাল থেকে মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস কিংবা জিপে করে যেতে হবে ঝরনার কাছে। 
খাগড়াছড়ি-মাটিরাঙ্গা সড়কের ঝরনার মুখ রাস্তায় নেমে আরও এক কিলোমিটার দক্ষিণে গেলেই রিসাং ঝরনা। চাইলে চট্টগ্রাম বা ঢাকা থেকে আসার সময় মাটিরাঙ্গা পেরিয়েও ঝরনার মুখে নামা যাবে। তবে খাওয়া ও থাকার জন্য জেলা শহরে আসতে হবে।