ঘুরে আসুন পাতাল কালী দুর্গম পাহাড়

প্রকাশ | ২৯ জুন ২০২৫, ০৯:৫২ | আপডেট: ২৯ জুন ২০২৫, ১৪:১৯

যাযাদি ডেস্ক
অপরূপ পাতাল কালী পাহাড়। ছবি: সংগৃহীত

পাহাড় না কার ভালো লাগে। আর যদি সেটা হয় পাতাল কালী দুর্গম পাহাড়।  তবেই তো যেতে ইচ্ছে হবেই। পছন্দ দুর্গম অঞ্চল। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার পাতাল কালী তেমনই দুর্গম পাহাড়।

এর পাশে রয়েছে পরিচিত চন্দ্রনাথ পাহাড়।  চন্দ্রনাথে ওঠার আগে সিএনজিচালিত অটোরিকশাস্ট্যান্ডের ঠিক বাঁ পাশ দিয়ে ঢুকে যেতে হবে বন পথে। 

কোথাও কোথাও পথটা এত সরু যে বাঁক নেওয়ার পরে পেছনে থাকা সঙ্গীকেও দেখা যাবেনা। পাহাড়ের চূড়ায় বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বটগাছের ছায়াতলে বসতে পারেন। ডানে উঁচু পাহাড়, বাঁয়ে গভীর খাদ। পেছনে বঙ্গোপসাগর।

ওখান থেকে সাগরের নোনাজলের দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে। ঠিক কতটা উঁচুতে বলা যাবেনা। তবে মাথার কাছাকাছি থাকা নীল আসমান দেখে আন্দাজ করা যায়, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কমপক্ষে আট শ ফুট হতে পারে। 

সামনের পথ যেন আরও বেশি রোমাঞ্চকর। ঝোপঝাড়ের ভেতর দিয়ে ট্রেকিং শুরু হলো। কখনো কখনো পথটা এত সরু যে একটু এদিক-সেদিক হলেই সোজা নিচের বাঁশবাগানে! অজানাকে জানা আর অচেনা পথ আবিষ্কারের আনন্দই সম্ভবত ভ্রমণের প্রধান বিষয়।

জঙ্গলের মাঝ দিয়ে এগোতে এগোতে একবার পেছনে তাকিয়ে দেখবেন, উঁচু পাহাড় থেকে অনেকখানি পথ নিচে নেমে এসেছে! বুঝবেন দৃষ্টিভ্রম হচ্ছে। এরপর নিচের দিকেই নামবেন। নামতে নামতে হঠাৎ ওপর দিকে তাকাবেন, সবুজে ঘেরা এক কূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন! পাতাল কালী পৌঁছার কিছু আগে এ রকম দৃশ্যের অবতারণা হবে। জায়গাটা চারদিকে পাহাড়বেষ্টিত। ঘন সবুজ অরণ্যে ঘেরা।

এ রকম অদ্ভুত নয়নজুড়ানো দৃশ্য দেখে পাহাড় ট্রেকিংয়ের ক্লান্তি শেষ হয়ে যাবে। পাহাড়-জঙ্গলে ভ্রমণের তৃপ্তিটা ঠিক এ রকম দৃশ্যপটের মাঝেই লুকিয়ে থাকে। ইচ্ছে করলে  ফটোশুট করতে পারেন।

পাতাল কালীর ডানে-বাঁয়ে থাকা পাহাড়ের ওপরে মাঝেমধ্যে ছোট ছোট মন্দির আছে। 

জায়গাটা পাহাড়বেষ্টিত ঝিরির পাশে। খাদের কিনারাও বলা যেতে পারে। বিশাল এক পাথরখণ্ড রয়েছে। দেখতে কুচকুচে কালো। লাল কাপড় দিয়ে ঘেরা পাথরের পাশে বসে একজন পুরোহিত পূজা অর্চনা করছেন।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পদচারণা রয়েছে এখানে। জায়গাটাকে স্থানীয়দের মধ্যে কেউ কেউ উল্টা কালী নামেও চেনে-জানে। লোকমুখে প্রচলিত আছে, একসময় এখানে মানুষ বলি দেওয়া হতো। 
পরিবেশটা গা ছমছম। পাঁঠা বলি দেওয়ার উপকরণ দৃশ্যমান। এরপর ঠিক লাল কাপড়ে ঘেরা পাথরখণ্ডের পাশ দিয়ে এগোলে  কিছুদূর যাওয়ার পরেই জংলি গাছের ভেতর দিনের আলো চোর-পুলিশ খেলছে।

এঁকেবেঁকে যাওয়া ঝিরিতে সারি সারি পাথর। সেসব বড় পাথরের ফাঁক গলে গড়িয়ে যাওয়া পানির কলকল শব্দ। বাতাসে গাছের পাতা এবং ঝিরিতে পানির শব্দ মিলেমিশে এক অপার্থিব পরিবেশ।  যেতে যেতে চোখে পড়বে লালসালু দিয়ে ঘেরা শিবলিঙ্গ। বিশালাকার কুচকুচে কালো পাথরটার প্রাকৃতিক অবয়ব বেশ চমৎকার।

পর্যটকেরা তা দেখে পুলকিত হবেন নিশ্চিত।  ঝিরিটা চলে গেছে সোজা বরাবর। ঝিরির রূপের প্রেমে পড়ে যাবেন যদি সাথে থাকে। যদি প্রেমিক-প্রেমিকা একসঙ্গে যায় তবে সে এক মধুময় জায়গা।

 গাইড সহায়তা করলে রান্নাবন্না করে খাওয়া যায় তবে কলাপাতায় কেতে পারেন। সব মিলিয়ে জম্পেশ খানাপিনা করা যায়। 

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো রাতের বাসে চড়ে ভোর ৫ থেকে সকাল ৬টার মধ্যে সীতাকুণ্ড পৌঁছানো যায়। বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএনজি কিংবা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চন্দ্রনাথ। সেখানে মিলবে স্থানীয় গাইড। চলে যান পাতাল কালীতে।

সময় ও খরচ

ভোরে নেমে সারা দিন ঘুরে আবার ঢাকায় ফিরে আসা যাবে। জনপ্রতি দুই হাজার টাকা যথেষ্ট।

সতর্কতা

এখানে পেশাদার কোনো গাইড নাই। স্থানীয় মানুষজনই সেখানে গাইড হিসেবে কাজ করেন। সে কারণে নিজ নিজ নিরাপত্তার বিষয়ে আপনাকেই বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। তবে গাইডরা পথপ্রদর্শক মাত্র।