শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁধ সংলগ্ন মাটি ইটভাটায়, হুমকির মুখে শাহাবাজপুর গ্যাসফিল্ড রক্ষাবাঁধ

ভোলা প্রতিনিধি
  ২১ নভেম্বর ২০২০, ২০:৪৬

ভোলার বোরহানউদ্দিনে ৪-৫ বছর ধরে বিধিবহির্ভূতভাবে মেঘনা তীর সংরক্ষণ বাঁধের শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ড রক্ষা ব্লক বাঁধ সংলগ্ন ৫-৬ একর ফসলী জমির মাটি জোরপূর্বক ইটভাটায় কেটে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দেড়-দুইশো মিটার দূরত্বে ইটভাটায় ওই মাটি কেটে নেয়া হয়েছে।

বøক বাঁধ সংলগ্ন টবগী ও হাসাননগর ইউনিয়নের ওই জমির মালিক ও ৪ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, মেসার্স এসএনএস(হাওলাদার ব্রিকস) ইটভাটার মালিক জসিমউদ্দিন হাওলাদার ২-৩ টি ভেকু(খননযন্ত্র) মেশিন দিয়ে ৫-৬ একর জমির মাটি ইটভাটায় নিয়ে গেছে। ওই জমির মালিকগণ বাঁধা দিলে তাঁদের হুমকি-ধামকি দেয়ারও অভিযোগ করেন তাঁরা। এতে শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ড রক্ষা ব্লক বাঁধ ও জনবসতি মারাক্তক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

এছাড়া শতাব্দী প্রাচীন হাকিমুদ্দিন বাজার, প্রায় ২ হাজার মানুষের বসতঘর, হাকিমুদ্দিন ফাজিল মাদ্রসা, হাকিমুদ্দিন আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, এলজিইডি সড়ক সহ বহু স্থাপনা বিলীন হয়ে যাবে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

কতটুকু কৃষি জমি কাটা হয়েছে জানতে চাইলে বোরহানউদ্দিন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেন, 'দালালপুর মৌজার প্রায় ৩ একর কৃষিজমি ইটভাটার কবলে চলে গেছে।'

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, কমপক্ষে ১২একর কৃষিজমির মাটি ইটভাটায় গেছে।

বোরহানউদ্দিন উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ুন কবীর বলেন, 'ইটভাটার মালিকদের মৌখিকভাবে অনেকবার সতর্ক করেছেন। নদীর তীরবর্তী ৫০মিটারের (১৭০ফুট) মধ্যে খনন কাজ করা তীর-সংরক্ষণ বাঁধের জন্য চরম ঝুঁকি। ব্লক বাঁধের ভিতরে কারো রেকর্ডীয় জমি থাকলেও তাও খনন করার নিয়ম নেই। তারপরেও ভাটার মালিকরা নিষেধ শোনেনি। এতে পাউবোর কয়েক কোটি টাকার ব্লকবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে'।

ভোলা-১ পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) সূত্র জানায়, হাকিমুদ্দিন বাজার, জনবসতি, শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ডসহ বোরহানউদ্দিন উপজেলা রক্ষা করতে দুই দফায় পাউবো প্রায় ৩০০ কোটি টাকা খরচ করে ৮ দশমিক ৭৮৫ কিমি মেঘনা তীর সংরক্ষণে ব্লক বাঁধ নির্মাণ করেছে। সেই বøকবাঁধের প্রায় ২ কিমি মেঘনায় বিলীণ হচ্ছে। আরো জানা যায়, শাহবাজপুর গ্যাফিল্ড রক্ষা প্রকল্পের আওতায় ২০১০ সালে ২৭ টি প্যাকেজে খাসমহল বাজার এলাকা থেকে পক্ষিয়া ইউনিয়নের নওয়াব মিয়ার হাট পর্যন্ত ৭ দশমিক ৩০ কি.মি বাঁধ ও তীর সংরক্ষণের জন্য ১২৩ কোটি টাকার জিও ব্যাগ ডাম্পিং ও ব্লক স্থাপনের কাজ একনেকে পাশ হয়। ওই বছরের নভেম্বরে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে দেশের বিভিন্ন স্থানের ৬ টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করে।

বেড়িবাধের ভিতরে কারো ব্যক্তিগত রেকর্ডীয় জমি থাকলেও তা গর্ত বা খনন করা যাবেনা।

সরজমিনে দেখা যায়, মূল বেড়িবাঁধের ভিতরের সংলগ্ন স্থানের মাটি কাটা হয়েছে। সেখানে কয়েকটি পুকুর আকৃতির গর্ত। মেঘনা নদীর তীরের ব্লকবাঁধ থেকে মাত্র ১৫০-২০০ মিটার দূরত্ব থেকে মাটি কাটায় বিশাল দিঘি আকৃতির জলাধার তৈরী হয়েছে। জলাধারের সাথে ৩-৪ টি ছোট ও মাঝারী আকৃতির খালের সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিনা বাঁধায় শক্তি নিয়ে নদীর পানি সরাসরি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। ইতিমধ্যেই বাঁধের ৩-৪ টি স্থান দিয়ে ব্লক ধসে গেছে। এছাড়া জিও ব্যাগ নদীগর্ভে চলে গেছে।

ওই স্থানের জমির মালিক টবগী ৪ নাম্বার ওয়ার্ডের মেম্বার ও ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি নুরুল আমিন হাওলাদার জানান, ভেকু মেশিন দিয়ে জসিম হাওলাদার তাঁর ৮০ শতাংশ জমির মাটি জোরপূর্বক কেঁটে নিয়ে যায়। পাশের আরো ৬৪ শতাংশ জমি ভেঙ্গে যাওয়ায় সেখানে আর কোন কিছু চাষ করা সম্ভবনা। এ কারণে ৬৪ শতাংশ জমি ইটভাটা মালিকের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। একই এলাকার ওয়ার্ড আ’লীগের সিনিয়র-সভাপতি নুরুল ইসলাম ও তাঁর ভাই নেছারউদ্দিন হাওলাদার জানান, ওই স্থানে তাঁদের ১২ একর জমি। বেড়িবাঁধের জন্য সাড়ে ৬ একর জমি দিয়েছেন। বিনিময়ে সরকার থেকে কোন টাকা নেননি। বাকি জমি বøকবাঁধ ও বেড়িবাঁধের ভিতরে। ওই জমির মধ্যে ৮০ শতাংশ জমির মাটি গত ৪-৫ বছর ধরে জসিমউদ্দিন ইটভাটায় কেটে নিয়ে যায়। বাঁধা দিলে জসিম হাওলাদারের ম্যানেজার কামাল ভেকুর নিচে পুঁতে ফেলার হুমকি দেয়।

ওই এলাকার মোশারেফ হোসেন জানান, তাঁর এবং তাঁর ভাই আলী আশরাফের ৫২ শতাংশ জমি। গত ৩-৪ বছর ধরে জসিম মাটি কেটে নিচ্ছে। পরে উপায়ান্তর না দেখে অনেক কম দামে জসিমের কাছে বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে। ৩ লাখ টাকা দর-দাম হয়েছে। এরমধ্যে তাদেরকে ২ লাখ টাকা দিয়েছে। তবে এখনও দলিল হয়নি।

বাঁধ সংলগ্ন বাসিন্দা টবগী ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি উজ্জল হাওলাদার জানান, পানি বিনা বাঁধায় প্রবেশ করায় তাঁদের বাড়ির এক-তৃতীয়াংশ ভেঙ্গে গেছে। এছাড়া ১ একর সুপারী বাগান ভেঙ্গে গেছে। হাকিমুদ্দিন বাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ী মোরশেদ আলম জানান, এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে হাকিমুদ্দিন বাজার সহ আশ-পাশের এলাকা নদী গর্ভে চলে যেতে পারে।

ইটভাটার মালিক জসিমউদ্দিন হাওলাদার জানান, তিনি মাটি নিয়েছেন। তবে গত বছর ওই স্থান থেকে কোন মাটি নেননি। তবে নুরুল ইসলাম, নেছারউদ্দিন, ওয়ার্ড মেম্বার নুরুল আমিন হাওলাদার সহ ওই এলাকার লোকজন জসিমউদ্দিন হাওলাদারের বক্তব্য সঠিক নয় বলে দাবী করেন।

এ বিষয়ে টবগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, জসিম হাওলাদারকে বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও ও সে কথা না শুনে তাঁর ক্রয়কৃত জমির মাটি নেয়ার অজুহাত দেখায়।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুর রহমান জানান, বর্তমানের তাঁর কর্মস্থল নতুন হওয়ায় এ বিষয়টি তাঁর জানা ছিলনা। বিষয়টির আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

ভোলা-১ পানি উন্নয়ন বোডের্র(পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান জানান, মাটি কাটার বিষয়টি শুনেছি তবে বøক ধসের খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে