মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

​হতদরিদ্রের কপালে ভাগ বসিয়েছে যন্ত্র!

আবদুল আহাদ, কুলাউড়া প্রতিনিধি
  ১৪ জানুয়ারি ২০২১, ১৪:২০

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় কর্মসৃজন কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পে হতদরিদ্র শ্রমিক ব্যবহার না করে মাটি কাটার আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে কাজ সম্পাদন করা হচ্ছে। এতে করে হতদরিদ্র শ্রমিকদের কপালে ভাগ বসিয়েছে এসকেভেটর নামক এই আধুনিক যন্ত্র। শুধু কপালে ভাগ নয়, বলা যায় তাদের কপাল কুড়ে খাচ্ছে মাটি কাটার এ যন্ত্রটি। অথচ কর্মসৃজন প্রকল্পের (৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প) মাধ্যমে একেবারেই হতদরিদ্র মানুষের কাজের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপশি গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন করাই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু কুলাউড়া উপজেলায় এই প্রকল্পে এখন হতদরিদ্ররা কাজ করেন না। এদিকে মেশিন দিয়ে কাজ করানোর ফলে প্রকল্পে বরাদ্ধের অর্ধেক টাকাই ব্যয় হয়না বলে দাবি স্থানীয়দের।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, হতদরিদ্রের কর্মসৃজন কাবিখা (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) ও কাবিটা (কাজের বিনিময়ে টাকা) প্রকল্পে ২০২০-২১ অর্থবছরে কুলাউড়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে মোট ১ কোটি ৯৯ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্ধ আসে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে পুরো উপজেলায় ২ হাজার ৪৯০জন হতদরিদ্র মানুষ কাজ করার কথা। দৈনিক ৭ ঘন্টায় দু’শ টাকা মজুরি হারে ৪০ দিনে একজন হতদরিদ্র ৮ হাজার টাকা পাবেন। সেই টাকা হতদরিদ্রদের নিজ নামীয় ব্যাংকের একাউন্টে (হিসাবে) জমা হবে। কিন্তু অনেক স্থানেই মানুষের বদলে মেশিন দিয়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষে হতদরিদ্রের নামে আসা টাকা উত্তোলন করে পরিশোধ করা হয় এসকেভেটরের বিল। কোন কোন প্রকল্পে এ আধুনিক যন্ত্রের কারনে বরাদ্ধের অর্ধেক টাকাও ব্যয় হয় না। নামকাওয়াস্তে দেখানো হয় কাজ। প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা যায় প্রকল্প চেয়ারম্যানদের পকেটে। অথচ ব্যাংক একাউন্টে টাকা জমা হয় হতদরিদ্র মানুষের নামে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেই টাকা হতদরিদ্ররা না পেয়ে চলে যায় জনপ্রতিনিধিদের হাতে। বেশির ভাগ হতদরিদ্র মানুষের ব্যাংকের চেক জনপ্রতিনিধিরা আগেই নিয়ে নেন। উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের ‘দানাপুর ভটরমার খাড়া’ খাল খনন প্রকল্পে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। প্রকল্পের সভাপতি ও জয়চন্ডী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার রমজান আলী কাজটি বাস্তবায়ন করছেন। যদিও কাজটি এলাকার হতদরিদ্র লোকজন দিয়ে বাস্তবায়ন করার কথা, কিন্তু মানুষ না লাগিয়ে মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে কাজ সম্পাদন করছেন তিনি।

এ বিষয়ে একাধিক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বারগন জানান, বর্তমান সময়ে দু’শ টাকা রোজে উন্নয়ন কাজে কোন শ্রমিক পাওয়া যায় না। কুলাউড়া তথা সিলেট অঞ্চলে বর্তমানে একজন শ্রমিকের মজুরি নূন্যতম ৩শ টাকা থেকে ৫শ টাকা। ফলে এই টাকায় কাজ করতে শ্রমিকরা রাজি হওয়ায় বাধ্য হয়েই মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করতে হয়। প্রকল্প চেয়ারম্যানগন আরও জানান, খাল খননসহ অনেক জায়গায় মানুষ দিয়ে কাজ করানো সম্ভব হয় না। তাই নিরুপায় হয়ে মেশিন লাগিয়ে কাজ করাতে হয়।

এব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শিমুল আলী জানান, যারা এ ধরনের কাজ করছেন, যথাযথ প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বরাদ্ধ বাতিল করা হবে। কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, বিষয়টি শুনেছি। তবে কেউ কোন অভিযোগ করেননি। যদি অভিযোগ পাই তাহলে তদন্তক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তাছাড়া বর্তমান সময়ের সাথে মিল রেখে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা উচিত। বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুযোগ পেলে উপস্থাপন করবো।

যাযাদি/এসএইচ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে