প্রার্থী নিহতের ঘটনায় সেই ওয়ার্ডের নির্বাচন স্থগিত

প্রকাশ | ১৪ জানুয়ারি ২০২১, ১৫:৪০

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

 

ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌসভার নির্বাচনের কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীর হোসেন নিহত হওয়ার ঘটনায় পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর নির্বাচনের ভোট গ্রহন স্থগিত করেছে। বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ওই ওয়ার্ডে বাকি মেয়র ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনের ভোট গ্রহন চলবে।

 

প্রসঙ্গত, ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌরসভা নির্বাচনের প্রচারণা চলাতে গিয়ে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে লিয়াকত হোসেন বল্টু (৫৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। নিহত লিয়াকত হোসেন পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শওকত হোসেনের ভাই। এছাড়া সে ১৩নং উমেদপুর ইউনিয়ন আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। বুধবার রাত ৮টার দিকে পৌর এলাকার কবিরপুরের ভূইমালী পাড়াতে ভোট চাইতে গেলে প্রতিপক্ষের হামলায় জখম হয় লিয়াকত। এসময় কাউন্সিলর প্রার্থী শওকত হোসেনও আহত হন। লিয়াকতকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়। হতাহতের পরিবার রাতেই প্রতিদ্বন্দী কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীর হোসেন বাবুর সমর্থকরা তাদের উপর হামলা করেছে বলে দাবি করে।

 

এ ঘটনার পাঁচ ঘন্টা পর রাত ১টার দিকে শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কুমার নদ থেকে একই ওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বি কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীর হোসেন খাঁ বাবুর (৫৭) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রাতে স্থানীয় কুমার নদের দেবতালা এলাকায় তার মরদেহ দেখে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। তবে কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে বলতে পারেনি পুলিশ। নিহত আলমগীরের শরীরর কোন জখমের চিহ্ন ছিল না। মরদেহ উদ্ধার করার সময় তিনি পানির মধ্যে দাড়ানো অবস্থায় ছিলেন। নদের পানির পাশে তার ব্যবহৃত জুতা ও পোশাক পড়ে ছিল। তবে হতাহতের এসব ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত কোন আটক বা মামলা হয়নি।

 

এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলছে চরম উত্তেজনা। আগামি ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হবে এ পৌরসভার নির্বাচন। তবে, স্থানীয়রা জানিয়েছেন, একটি ঘটনার জেরে আরেকটি ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনের আগে এ ধরনের সহিংস ঘটনায় শৈলকুপা পৌরসভার নাগরিক ও ভোটারদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশ চেকপোষ্ট বসানো হয়েছে।

 

এর আগে ৩ ডিসেম্বর বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে ১২ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এসময় ইট ও পাথরের আঘাতে কমপক্ষে সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়। আওয়ামী লীগের দলীয় মেয়র প্রার্থী কাজী আশরাফুল আজম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তৈয়বুর রহমানের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে এ উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ইতিমধ্যে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী তৈয়বুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন। যে কোন মুল্যে নির্বাচন সুষ্ঠ পরিবেশে সম্পন্ন করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন এই পুলিশ সুপার।

 

উল্লেখ্য, আগামী ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপে শৈলকুপা পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে চারজনের মধ্যে বিএনপি থেকে সাবেক মেয়র খলিলুর রহমান ধানের শীষ ও জাতীয় পার্টি থেকে আবু জাফর লাঙ্গল প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এছাড়া কাউন্সিলর পদে ৩৬ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দীতা করছেন। নির্বাচনে পৌর এলাকার ৯ ওয়ার্ডের ২৮৬৩২ জন ভোটার ১৫ কেন্দ্রের ৯২ কক্ষের মাধ্যমে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

 

যাযাদি/এসএইচ