শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেরপুরে ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন: গ্রেপ্তার ৫

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
  ১৪ জানুয়ারি ২০২১, ২১:৫৮

বগুড়ার শেরপুরে ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিন (৪৩) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। সেইসঙ্গে এই ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। জমিজমা নিয়ে বিরোধ ও পাওনা টাকা চাওয়ার জেরে পরিকল্পিতভাবে নিজ বাড়ির সামনে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতের ভাই ও সৎ শ্যালকের নেতৃত্বে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

বুধবার দুপুরে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান জেলার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা। এ সময় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শেরপুর সার্কেল) গাজিউর রহমান, শেরপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এসএম আবুল কালাম আজাদসহ পুলিশ বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের হলদিবাড়ী আটাপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে নিহতের সৎ শ্যালক ওমর ফারুক (৩৫), একই ইউনিয়নের ইটালী মধ্যপাড়া গ্রামের দুলাল হোসেনের ছেলে ফারুক আহম্মেদ (৩০), মৃত রসুল প্রামাণিকের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (৫৮), কোরবান আলীর ছেলে নিহতের ছোট ভাই জিয়াউর রহমান জিয়া (৪০) ও তার স্ত্রী শাফলা খাতুন (৩৫)। এর মধ্যে ওমর ফারুককে ১২ জানুয়ারি ঢাকার মানিকগঞ্জ থেকে এবং বাকিদের বুধবার ১৩ জানুয়ারি নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গত ০৫ জানুয়ারি সন্ধ্যারাত সোয়া সাতটার দিকে উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের ইটালী গ্রামস্থ নিজ বাড়ির সামনে কুপিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। তিনি ওই গ্রামের কোরবান আলীর ছেলে। এছাড়া নিহত ফরিদুল উদ্দিন ছোনকা বাজারে রড সিমেন্টের ব্যবসা করতেন। পাশাপাশি জমিজমাও চাষাবাদ করেন।

পুলিশ জানায়, মায়ের জমিজমা নিয়ে ফরিদ উদ্দীনের অন্য ভাইদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিল। তিনি কৌশলে তার মায়ের এবং বোনদের কাছ থেকে বসতবাড়ি ও ছোনকা বাজারের মূল্যবান জমি রেজিস্ট্রি করে নেন। ফলে ভাইদের সঙ্গে চলা বিরোধ আরও চরম আকার ধারণ করে। এরই মধ্যে তিনি সৎ শ্যালক ওমর ফারুকের কাছ থেকে তিন লাখ টাকার জমি বন্ধকী নেন। এই বন্ধকি টাকা ফেরত চাওয়ায় তার সঙ্গেও বিরোধ দেখা দেয় ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দীনের। আর এসব বিরোধের জেরধরেই পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

শেরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এসএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, নিহত ফরিদ উদ্দীনের একমাত্র ছেলে ইয়ানুর রহমান শাওন ঢাকায় বোনের বাসায় থেকে পড়াশোনা করত। তিনি স্ত্রীসহ ইটালী গ্রামস্থ নিজ বাড়িতেই থাকতেন। কিন্তু বিগত ২৮ ডিসেম্বর নিহতের বোনকে ডাক্তার দেখানোর জন্য তার স্ত্রী তাকে ঢাকায় নিয়ে যান এবং মেয়ের বাসায় ওঠেন। তাই বাড়িতে একাই থাকতেন ফরিদ উদ্দীন। আর এই সুযোগে গ্রেপ্তারকৃতরা তাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ওই ব্যবসায়ীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।

শেরপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর প্রথমদিকে কোনো ক্লুই পাওয়া যাচ্ছিল না। এমনকি সন্দেহভাজন কাউকেই শনাক্ত করতে পারছিলেন না নিহত ফরিদ উদ্দীনের পরিবার। তাই নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করেন। কিন্তু গত ৮ জানুয়ারি সৎ শ্যালক ওমর ফারুকের মোবাইল ফোন থেকে নিহতের স্ত্রীর ফোন আসে। অপরিচিত কণ্ঠে বলে ‘তোর স্বামীর আশা ছেড়ে দে, আর কোনোদিন তাকে দেখতি পাবি না’। আর পাশ থেকে সৎ ভাই ওমর ফারুক বলেন, ‘আমাকে মাইক্রোবাসে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে’। বিষয়টি তাৎক্ষণিক পুলিশকে জানানোর পর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। একপর্যায়ে ওমর ফারুককে মানিকগঞ্জ থেকে উদ্ধারপূর্বক আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেন। পরে তার দেওয়া স্বীকাররোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এরমধ্যে দুজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তারা হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে