শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে রেশম চাষ

মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি
  ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:০৮

নওগাঁয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে রেশম চাষ। অনেকেই এই রেশম চাষ করে সফলতার দৃষ্টান্তর স্থাপন করেছেন। আমাদের দেশে বহু ধরনের কৃষিপণ্য উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব কৃষিপণ্যের মধ্যে এক সময় তুঁত চাষ ছিলো অন্যতম। তুঁত চাষে অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়া যায়। বাড়িতে বসে থাকা মহিলাদের নিয়েও তুঁত গাছ চাষ করা যায় বলে এতে খরচ কম হয়।

একই জমিতে বছরে তিন বারের বেশি ফসল চাষ করা হলেও তেমন লাভ হয় না। কিন্তু তুঁত চাষ দুই থেকে চার বার করা যায়। এতে যেমন অধিক ফসল পাওয়া যায়, তেমনি লাভবানও হয় বেশি। কাপড় বুননের জন্য সুতার বিকল্প নেই। মোটা সুতার যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। আর মোটা সুতা দিয়ে খুবই সুন্দর ও আকর্ষণীয় কাপড় তৈরি করা যায়।

যদি অধিক হারে রেশম চাষের মাধ্যমে উৎপাদিত মোটা সুতা দিয়ে কাপড় তৈরির ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তাহলে স্থানীয় দক্ষ কারিগর দিয়ে রেশম সুতা ব্যবহারের ফলে সামান্য পরিশ্রমে বেশি কাপড় বুনে অধিক লাভ করা সম্ভব। রেশম চাষ বদলে দিতে পারে মহাদেবপুরসহ নওগাঁ জেলার গরীব জনগোষ্ঠীর জীবনধারা।

এরকমই রেশম চাষী বেলাল হোসেন ব্যাপক ভাবে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা থাকায় অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর গ্রামে রেশম চাষে দ্রুত সাফল্য আসছে। ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন যুবক-যুবতীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এসব জমি থেকে রেশম গুটি উৎপাদন হচ্ছে, যা থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৮-১০ হাজার টাকার সুতা পাওয়া যাচ্ছে। রাজশাহী রেশম গবেষণা কেন্দ্রের অধীনে উপজেলায় রেশম চাষ করা হয়। গবেষণা কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বেকার যুবক-যুবতীকে রেশম চাষী হিসেবে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়ন পরিষদের ক্যানেলের প্রায় ২ হাজার মিটার রাস্তার পাশে তুঁত গাছ চাষ করছেন বেলাল হোসেন (৫৫)।

তুঁত চাষী বেলাল হোসেন বলেন, আমি গত দুই বছর পূর্বে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে তুঁত গাছ চাষ করতে শুরু করি। সফলভাবে রেশম উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। এর আগে মানুষের বাড়িতে কাজ করতাম, এখন রেশম চাষ করে আমার ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। রেশম পোকার প্রধান খাদ্য তুঁত গাছের পাতা। এসব ক্যানেলের ধারের জমিতে বছরে দুইবার তুঁত গাছ চাষাবাদ করি। প্রতি কেজি রেশম সুতার মূল্য প্রায় ৫-৭ হাজার টাকা। রেশম গবেষণা কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বিনা মূল্যে ১০ টি হারে পলুর ডিম (পলু হলো রেশম কিট) বিতরণ করে থাকেন; অন্য ফসলের সাথে বছরে দুইবার আমরা রেশম চাষ করে আর্থিকভাবে অনেকটা লাভবান হয়ে থাকি। তাই সরকারি ভাবে যদি আরও কোন সহযোগিতা পেতাম তাহলে রেশম চাষ করে আমার সফলতার পাশাপাশি গ্রামের বেকার সমস্যা সমাধান হত।

মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, উপজেলার বিভিন্ন সড়ক এবং ক্যানেলের পাশে তুঁত গাছ চাষ পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু হয়েছে এবং লাভবানও হয়েছেন উদ্যোক্তারা। উপজেলায় আরও ৩ জন রেশম এর চাষ শুরু করেছেন, তবে বেলাল হোসেন ব্যাপকভাবে সাফল্য পেয়েছেন। চলতি বছর তিনি ১৫ কেজি রেশম উৎপাদন করেছেন। যার আনুমানিক মুল্য ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা। সেই সাথে সুতারও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।

তিনি বলেন, তুঁত চাষে অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়া যায়। রেশম গবেষণা কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ ও কৃষি বিভাগ থেকে চাষীদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

যাযাদি/ এমডি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে