শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বোয়ালমারীতে কে হচ্ছেন পৌর পিতা ?

ফরিদপুর প্রতিনিধি
  ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ২০:৫০

পৌর নির্বাচন প্রচারণার শেষ দিন বৃহস্পতিবার রাতে সাব রেজিস্ট্রার অফিসের সামনে বাগানের চায়ের দোকানে অনেক মানুষের ভীড়। সেখানে আড্ডা দিচ্ছিলেন অটোভ্যান চালক রাজিব, দলিল লেখক স্বপন সাহা সহ আরও অনেকে। চলছিলো নির্বাচনী আলাপচারিতা। কে এবার বোয়ালমারী পৌর মেয়র হিসেবে শপথ নিবেন? এক একজনের মতামত এক এক রকম।

বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী সেলিম রেজা লিপন মিয়া একজন ক্লিন ইমেজের লোক। তার পরিবারও রাজনৈতিক পরিবার। সাবেক মেয়র বিএনপির শুকুর শেখও আছেন নির্বাচনী প্রচারণায়। আবার মো. লিটন মৃধা স্বতন্ত্র প্রার্থী জগ মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তবে বেশির ভাগ আলোচনায় নৌকা মার্কার সেলিম রেজা এগিয়ে রয়েছেন বলে বিভিন্ন মহলের ধারণা। আবার কেউ বলছেন লড়াই হবে ত্রিমুখি। তবে এ নির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হবে বলে সুশিল সমাজের ধারণা।

তারা বলেন, বোয়ালমারীর মানুষ অত্যন্ত শান্তি প্রিয়। ভোট নিয়ে কখনই জোর জবরদস্তি বা কোন হাঙ্গামা হয়নি। রাত পোহালেই শনিবার সকালে নির্বাচন তাই ভোট নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে রয়েছে। সবারই প্রশ্ন কে হবেন প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভার তৃতীয় মেয়র। নবীন প্রবীনের লড়াইয়ে কে হবেন পৌর পিতা ?

এ পৌরসভা সৃষ্টিলগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের টিকিট পেয়ে কেউ জয়ী হতে পারেননি। দুইবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থী আঃ শুকুর শেখ। কিন্তু সে সময় কোনো দলের প্রতীক ছিলো না। আরেকবার ২০১৬ সালের পৌর নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান মেয়র মোজাফফর হোসেন বাবলু মিয়া। বাবলু মিয়া এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেলিম রেজার আপন চাচাতো ভাই। বাবলু মিয়া সেলিম রেজা পক্ষে কাজ করছেন। এর আগে দলীয় প্রতীক নিয়ে যারাই নির্বাচন করেছেন সে সময় আওয়ামী লীগ মধ্যে দুই গ্রুপ ছিলো। কিন্তু এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মধ্যে নেই কোন ভেদাভেদ। সব গ্রুপ এক হয়ে এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিম রেজা লিপন মিয়ার পক্ষে রয়েছে। ভোট চেয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বর ও ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক এমপি আব্দুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এ পৌরসভায় আ.লীগের মনোনয়ন পেয়ে প্রার্থী হয়েছেন পৌর আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা লিপন (নৌকা)। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা কৃষকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা কৃষকলীগের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক মো. লিটন মৃধা (জগ)। ২০০১ ও ২০১০ পৌর নির্বাচনে বিজয়ী সাবেক মেয়র আব্দুস শুকুর শেখ (ধানের শীষ) এবারও বিএনপির প্রার্থী। এই তিন মেয়র প্রার্থী নিজ নিজ অবস্থান থেকে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ব্যক্ত করেছেন।

এছাড়া ৯টি ওয়ার্ডে ৩৪জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১১জন প্রার্থী রয়েছে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এর আগের দুই নির্বাচনে শুকুর শেখ মানেই ছিল লাল নোট আর কালা নোটের ছড়াছড়ি কিন্তু এবার সে অবস্থা নেই।

বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত প্রচার প্রচারণায় জমজমাট পৌরসভার প্রতিটি এলাকা। মেয়র, কাউন্সিলরদের ভোট চেয়ে চারিদিকে চলছিলো মাইকিং, মিছিল, পথসভা, ভোট প্রার্থনা। বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় শেষ হয়েছে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। এখন চলছে নিরবে ঘরে ঘরে ভোট ভিক্ষা।

এরই মধ্যে কথা হয় বাজারের ব্যবসায়ী শ্যামল সাহার সাথে। তিনি জানান, সাধারণ ভোটাররা এখনও মুখ খুলছেননা। তবে এখন পর্যন্ত আলোচনায় সেলিম রেজা আর শুকুর শেখ প্রতিদ্বন্দ্বীতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বিএনপির প্রাথী শুকুর শেখ এবার নিরবে চলেছেন। প্রচারণায় পিছিয়ে নেই জগ মার্কার প্রার্থী লিটন মৃধা।

কাজী সিরাজুল ইসলাম মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আলমগীর হোসেন বলেন, গত তিনবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভেদ ছিলো। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগের সবাই একক হয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করছেন। সেজন্যই মনে হচ্ছে নৌকা মার্কার প্রার্থী জয়ী হবে। নির্বাচনের এখন যে অবস্থা থাকুকনা কেন। নির্বাচনের আগের রাতে অবস্থা পাল্টে যাবে বলে মনে হচ্ছে। কারণ আওয়ামী লীগের ভোটারা নৌকার দিকে আর বিএনপির ভোটাররা চলে যাবে ধানের শীর্ষের দিকে। স্বতন্ত্র প্রার্থী লিটন মৃধা এর আগে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন। যে যেখানে যা করুকনা কেন, যাদের শরীরে নৌকা মার্কার সামান্য গন্ধ আছে তারা নৌকার বাইরে ভোট দিবেনা। পৌরসভা ও এলাকার উন্নয়নের জন্য নৌকা মার্কার বিকল্প নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

যাযাদি/ এমডি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে