​নগদ আর প্রতিশ্রুতিতে ভোট বিক্রির দুই রাত!

প্রকাশ | ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ২১:৩১ | আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২১, ২১:৪৮

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

 

রাত পোহালেই গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভা নির্বাচন। এরমধ্যেই শেষ হয়েছে আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারণা। চা-পানের পাশাপাশি গত এক মাস ধরেই প্রার্থীর পক্ষে ভুরিভোজনের মাধ্যমে চলছে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা। কোথাও কোথাও দেয়া হচ্ছে মাদক নির্মূল,রাস্তা সংস্কার,সমাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি ভোটারদের ব্যক্তিগত সুবিধার আশ্বাসও। সবমিলিয়ে নগদ আর প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে চলছে ভোট বিক্রির মহোৎসব।

 

পৌরসভার সচেতন নাগরিক সমাজের অভিযোগ, ভোটের আগের দু রাতে বিভিন্ন ওয়ার্ডেই ভোট কেনাবেচার উৎসবে মেতে উঠেছেন কাউন্সিলর প্রার্থী ও নিম্ন আয়ের ভোটাররা। ৫'শত টাকা থেকে শুরু করে ব্যক্তি বিশেষ ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে একটি ভোটের দাম। কখনো কখনো প্রার্থীর পরিচিতি ও যোগ্যতার দিক বিবেচনায় চলছে ভোটারদের দরকষাকষির দ্বন্দ্ব। কোথাও আবার স্থানীয় অঘোষিত মাতবর শ্রেণির লোকেরা পাইকারি ধরে বিক্রি করছে আশপাশের সাধারণ ভোটারদের। সব মিলিয়ে পৌর নির্বাচনে ভোটের মাঠ যেন এখন হাটের মাঠ।

 

শ্রীপুর পৌরসভার ২ ওয়ার্ডের ভোটার মদন মিয়া বলেন, গত রাতে এক কাউন্সিলর প্রার্থী আমার বাড়ির আশপাশের ভোট কিনতে প্রত্যেক ঘরে ১০০০ টাকা করে দিয়েছেন। টাকা গ্রহণ না করলেও প্রার্থীর সন্দেহের টার্গেটে পড়তে হচ্ছে। তাই ভোটাররাও এক প্রকার বাধ্য হয়েই টাকা নিচ্ছেন। 

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের জনৈক ভোটারের দাবি, নির্বাচনের পরবর্তী ৫ বছর এ সকল প্রার্থীরা কোনো উপকারেই আসেননা। তাই তিনি তার ভোটের জন্য এক প্রার্থীর কাছ থেকে তিন হাজার টাকা নিয়েছেন। তার মতোই নিম্ন আয়ের অনেক ভোটাররাও ভোট দেয়ার শর্তে টাকা নিচ্ছেন বলেও জানান ওই ব্যক্তি।

 

পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিল প্রার্থী রাহাত হাসান জুয়েল বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই জনসেবক হিসেবে কাজ করে আসছি। মানুষের ভালোবাসাকে পুঁজি করে এবার প্রার্থী হয়েছি। ইনশাআল্লাহ আশা করছি জনগণ আমাকে দায়িত্ব দিয়ে তাদের সেবা করার সুযোগ করে দিবে।

 

তিনি আরও বলেন, টাকায় ভোট বিক্রি করলে সে প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে দুর্নীতির দিকেই ঝুঁকবে।

 

যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে শ্রীপুর পৌর নাগরিক অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, ভোট বিক্রি করলেন তো বিবেক বিক্রি করলেন। টাকা দিয়ে ভোট বিক্রি করলে সে প্রার্থীর কাছে কখনোই জনগণের উন্নয়ন কামনা করা যাবে না।

 

পৌর রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী ইস্তাফিজুল হক আকন্দ যায়যায়দিনকে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে নির্বাচন কমিশন অবগত নন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে বিধি অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

উল্লেখ্য, প্রায় ৪৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের শ্রীপুর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৬৭ হাজার ৯২৭জন। ২৬টি ভোট কেন্দ্রের ১৯০ টি বুথে ইভিএম ( ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে পুরুষ ভোট কেন্দ্র ১০টি, মহিলা ভোট কেন্দ্র ১০ এবং উভয় ভোট কেন্দ্র ৬টি। আগামী ১৬ জানুয়ারি সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে।

 

যাযাদি/ এমডি