বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নোয়াখালীর সেই ভিডিওর মামলায় গ্রেপ্তার ৫

আবু নাছের মঞ্জু, নোয়াখালী
  ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ১৪:৪৩

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিও’র ভুক্তভোগী পল্লী চিকিৎসক বাদী হয়ে ১১ জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। হাতিয়া থানার ওসি মো. আবুল খায়ের জানান, রোববার রাতে মামলাটি দায়েরর পর আসামীদের মধ্যে ৫ জনকে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলে- জিহাদ (৩০), ফারুক(৩০), নবীর উদ্দিন প্রকাশ হুন্ডা নবীর (৩২), আলমগীর হোসেন (৪০) ও আবু তাহের (২৭)। তাদের সবার বাড়ি চানন্দী ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামে।

এ বিষয়ে সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন নিজ কার্যালয়ের সভাকক্ষে প্রেস ব্রিফিং করেন। এ সময় তিনি বলেন- ‘নারী নির্যাতনের যে ঘটনাটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে সে বিষয়ে আগেই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে তিনি অভিযোগ দিয়েছিলেন এবং সেটা হাতিয়ার সার্কেল অফিসার তদন্ত করছেন। আমি যেটা সরেজমিনে সুপারভাইজ করতে গিয়ে পেয়েছি যে, নারী এবং পুরুষ উভয়কে অনৈতিক কাজের দায়ে দোষারোপ করে স্থানীয় কিছু উশৃঙ্খল যুবক এক পুরুষকে টেনে হিঁছড়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। এরপর নারী এবং পুরুষ দুজনকে গাছের সাথে ভেঁধে রাখে। তো এটি যেহেতু একটি অপরাধ সেজন্য যাকে নির্যাতন করা হয়েছে সেই লোক (পল্লী চিকিৎসক) বাদী হয়ে পৃথক একটি মামলা হয়েছে। আমরা আসামীদের ৫ জনকে গ্রেপ্তার করি এবং মামলাটি তদন্ত চলছে। আর নারী এবং শিশু নির্যাতনের পিটিশন মামলায় সার্কেল অফিসার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন।’

এর আগে গত রোববার সন্ধ্যায় জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলমগীর হোসেন সহ হাতিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে। এ সময় এসপি এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ওই নারী, ভাইরাল ভিডিওর ভুক্তভোগী পল্লী চিকিৎসক, তাদের আত্মীয় স্বজন এবং এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেন। পরে এ বিষয়ে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে আপালপাকে এসপি আলমগীর হোসেন বলেন- ‘ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি একজন পুরুষের। তবে, ভিডিওটিতে এক নারীর চিৎকারের আওয়াজ রয়েছে। এ ঘটনায় যেহেতু আদালতে মামলা হয়েছে তাই বিচারকের নির্দেশনা অনুযাীয় পুরো ঘটনা তদন্ত করে এ বিষয়ে সাত কর্মদিবসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। এছাড়া ওই নারী ও পল্লী চিকিৎসককে মারধর করে ভিডিও ধারণ করার বিষয়ে হাতিয়া থানায় পৃথক একটি মামলা রেকর্ড করা হবে।’ এর আগে গত ১ জানুয়ারি হাতিয়ার চানন্দী ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামে অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অপবাদ দিয়ে ওই পল্লী চিকিৎসক ও এক নারীকে আটক করে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার ১৬ দিন পর গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও চিত্র ও ছবি ভাইরাল হয়। ভিডিও চিত্রে এক ব্যক্তিকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের সময় এক নারীর আত্মচিৎকার শোনা যায়। এছাড়া ছবিতে নারী পুরুষ দুজনকে সুপারী গাছের সাথে বেঁধে রাখতে দেখা যায়।

এ ঘটনায় গত ৫ জানুয়ারি ওই নারী আদালতে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন। বিচারক হাতিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আদেশ দেন। আদালতে পিটিশন মামলা দায়েরকারী ওই নারী জানান, তিনি ১০/১১ বছর পূর্বে স্থানীয় মো. ফারুকের মায়ের (জাহানারা বেগমে) কাছ থেকে ১৫ গন্ডা জমি কিনে সেখানে ঘর করে স্বামী-সন্তানসহ বসবাস করে আসছেন। পরবর্তীতে এই জমি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং ফারুক সহ অন্যান্যরা তাকে জমি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য বিভিন্ন রকম হুমকি দিয়ে আসছিল। গত ১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তিনি জনতা বাজার থেকে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের (মহিউদ্দিনের) বাড়ির পাশ দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় ফারুক ও তার সহযোগীরা তার দিকে (ওই নারীর) টর্চলাইট মারে। এ সময় ওই নারী দৌঁড়ে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসককের (মহিউদ্দিনের) মুরগি খামারের সামনের একটি ঘরে ঢুকে যান। এর পর জিহাদ(৩০), ফারুক(৩০), মোঃ ফারুক(৩২), এনায়েত(৩০) ও ভুট্টু মাঝি (৩৫) ওই ঘরে তাদেরকে তালাবদ্ধ করে বাইরে থেকে শোরচিৎকার করতে থাকে। এক পর্যায়ে পল্লী চিকিৎসক জানালা দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করলে ফারুক ও তার সহযোগীরা তালা খুলে তাকে (পল্লী চিকিৎসক) ঘরের ভেতর বিবস্ত্র করে মারধর করে। পরে তাদের দুজনকে ঘরের সামনে সুপারী গাছের সাথে বেঁধে আবারও কিল ঘুষি মেরে জখম করে।

এরপর নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে দুইদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর গত ৫ জানুয়ারি তিনি এ ঘটনায় জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল ২ এ একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে ওই নারী নিজ বাড়িতে স্বামীর অনুপস্থিতিতে জিহাদ(৩০), ফারুক(৩০), মো. ফারুক(৩২), এনায়েত(৩০) ও ভুট্টু মাঝি (৩৫) তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেন। এ সময় তিনি এবং তার ছেলে মেয়েদের শোর চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হলে আসামীরা পালিয়ে যায় বলে উল্লেখ করেন ওই নারী। পিটিশনে তিনি এ ঘটনায় প্রথমে থানায় মামরা দিতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি বলে উল্লেখ করেন।

এ ব্যাপারে হাতিয়া থানার ওসি মো. আবুল খায়ের জানান, আদালতে দায়ের করা ওই নারীর পিটিশন মামলায় ‘থানায় মামলা দিতে গেলে না নেওয়ার’ অভিযোগ সত্য নয়। ওসি বলেন, ‘ওই নারী বাড়ি মেঘনা নদীর উত্তর পাড়ে। তিনি নদী পার হয়ে হাতিয়া থানায় যাইনি। এমকি ঘটনার দিন মোর্শেদ বাজার তদন্ত কেন্দ্রে পুলিশের কাছে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে মর্মে কোন অভিযোগ করেননি। তাদেরকে মারধরের দৃশ্য ভিডিও ধারন করা হয়েছে মর্মেও তারা তখন পুলিশকে এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কাউকে জানায়নি।’ ঘটনার দিন গত ১ জানুয়ারি খবর পেয়ে পুলিশ তাদের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্থানীয় মোর্শেদ বাজার তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদে অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়ায় এবং এ বিষয়ে কোন পক্ষ থেকে অভিযোগ না পাওয়ায় তাদের দুজনকে স্ব-স্ব অভিভাবকের জিম্মায় দেওয়া হয়।

যাযাদি/এসএইচ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে