বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মা-বাবা হারা শিশুটি এখন যাবে কোথায়?

নওগাঁ প্রতিনিধি
  ২৫ জানুয়ারি ২০২১, ১২:৩২

রফিকুল ইসলাম যে বয়সে পড়াশোনা ও হেসেখেলে বেড়ানোর কথা সে বয়সে তার ঠাঁই হয়নি আপন বড় ভাই ও ভাবির সংসারে। মা-বাবা হারা রফিকুলকে একরাশ দুঃখ-কষ্ট নিয়ে পাড়ি জমাতে বাধ্য করা হয়েছে অজানার উদ্দেশে। অনেক আকুতি-মিনতি করা হলেও ভাই-ভাবির কঠিন হৃদয় গলেনি।

বাবা-মার মৃত্যুর পর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব না নিয়ে ছোট ভাইকে নিরুদ্দেশ পাঠিয়ে দিল তার আপন বড় ভাই ও ভাবি। 'আমরা তোকে আর রাখব না, তোর মন যেখানে যেতে চায় চলে যাবি'- এই বলে তাকে ট্রেনে তুলে দেয় তারা।

ভুক্তভোগী শিশু রফিকুল ইসলাম নওগাঁর রানীনগর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের মৃত বাদেশ মন্ডলের ছোট ছেলে। গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় তাকে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর রেলওয়ে স্টেশনে পাওয়া যায়। রোববার দুপুরে স্থানীয় সোনারবাংলা সমাজ কল্যাণ ও ক্রীড়া সংসদের আহ্বায়ক এস এম হেলাল খন্দকার শিশুটিকে বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছে নিয়ে যান।

রফিকুল ইসলাম জানায়, তার বয়স ১০ বছর। সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। তার বাবা-মা প্রায় এক বছর আগে মারা যান। তাদের মৃত্যুর পর থেকে একমাত্র আপন বড় ভাই শফিকুল ইসলামের কাছে থাকত। বড় ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ করে এবং নওগাঁর রানীনগরের একটি ভাড়া বাসায় থাকে। হঠাৎ গত শনিবার তার ভাই-ভাবি জানায়, তারা তাকে আর রাখতে পারবে না। এরপর রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেনে তুলে দেওয়া হয় তাকে।

রফিকুল জানায়, 'আমি অনেক কান্নাকাটি করলেও তারা আমাকে জোর করে তুলে দেন ট্রেনের পেছনের বগিতে। সে সময় রানীনগর স্টেশন খুব ফাঁকা ছিল আর ট্রেনের শব্দে কারও সাহায্য চাইতে পারিনি। ভাই-ভাবি আমাকে ভয়ভীতি দেখানোয় চুপ থাকতে হয়েছে। এরপর আমি ট্রেন থেকে নামার পর বালিয়াকান্দি স্টেশনে নেমে পড়ি।'

স্থানীয় সামাজিক সংগঠনের সদস্য এস এম হেলাল খন্দকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনে জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস ট্রেন চলে যাওয়ার পর স্টেশনে এলোমেলোভাবে ঘুরতে দেখে রফিকুলকে তিনি বাড়িতে নিয়ে যান এবং বিস্তারিত জানার চেষ্টা করেন। পরে রাতেই বিষয়টি থানা পুলিশ এবং ইউএনওকে অবহিত করা হয় এবং রোববার দুপুরে রফিকুলকে ইউএনওর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ বিষয়ে ফোনে যোগাযোগ করা হলে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আম্বিয়া সুলতানা বলেন, 'গতকাল রাতে স্টেশনে এক সমাজকর্মী একটি শিশুকে পেয়েছেন। শিশুটির দেওয়া তথ্যানুসারে নওগাঁর সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে কথা হয়েছে।’

এ বিষয়ে শিশু রফিকুল ইসলামের বড় ভাই শফিকুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে তার মন্তব্য জানতে চাইলে বলেন, 'তার ছোট ভাই উদাসীন টাইপের ছেলে। তাকে এক দোকানে কাজে লাগিয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু সে কাজ না করে ঘুরে বেড়াত। অভাবের সংসারে যেখানে নিজেরাই চলতে পারি না, সেখানে তার দায়িত্ব নেব কীভাবে?' কেন এভাবে শিশুটিকে ট্রেনে তুলে দিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা তার দায়িত্ব নিতে পারব না...' বলেই সে ফোনটি কেটে দেয়।’

রানীনগরের গোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত খান হাসান জানান, 'শিশুটির মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই। বড় ভাইয়ের কাছেই থাকত। অভাবের সংসারে বড় ভাইও শারীরিকভাবে অক্ষম। শিশুটিকে নিয়ে ভাই-ভাবির মধ্যে সমস্যা লেগেই থাকত।' তিনি জানান, তারা আগামীকাল (সোমবার) তাকে ফিরিয়ে এনে একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

জানতে চাইলে রানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আল মামুন বলেন, 'শিশুটিকে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমানে সে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হেফাজতে আছে। শিশুটির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। শিশুটির সঙ্গে কথা বলে অভিযুক্ত পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি তারা শিশুটির দায়িত্ব না নিতে চায় তাহলে শিশুটির সুরক্ষার ব্যবস্থা আমরা নেব।'

যাযাদি/এসএইচ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে