পত্নীতলায় সরিষা চাষে ব্যাপক সাড়া

প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০২১, ২১:০১

পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি

নওগাঁর পত্নীতলায় উপজেলার মাঠগুলোর চারদিকে এখন সরিষা ক্ষেতের হলুদের সমারোহ। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় আর যথাযথ পরিচর্যায় এ বছর উপজেলায় সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরিষার রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত যেমন মাঠ, তেমনি বাম্পার ফলনের হাতছানিতে কৃষকের চোখেমুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। যেন সরিষার হলুদ হাসিতে স্বপ্ন দেখছে এ এলাকার কৃষকরা। এ বছর সরিষা চাষে চাষিরা অধিক মুনাফা লাভ করবেন বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ।

 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৪৭.৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদ হয়েছে। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সরিষা চাষের উপযোগী হওয়ায় প্রতিবছর এ অঞ্চলে প্রচুর সরিষা উৎপাদন হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর সরিষা ক্ষেতে ভালো ফলন দেখা দিয়েছে। এই উপজেলায় এবার সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

 

এবারে এ উপজেলায় বারি- ১৪, ১৫, ১৭, টোরী-৭, রকেট (মানঘোষিত) উচ্চ ফলনশীল সরিষা ও স্থানীয় জাতের সরিষা আবাদ হয়েছে। ভোজ্যতেলের ব্যাপক চাহিদা ও বাজার চড়া থাকায় এবারে সরিষার ভালো দাম পাবেন কৃষকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার শিহাড়া ইউপির জামালপুর গ্রামে অবস্থিত সানারুল ইসলাম উজ্জ্বল ও লুৎফা বেগম সরকারিভাবে কৃষি সরিষা প্রদর্শনী প্লটের সরিষা ফুলগুলো এখন পরিপক্ব দানায় পরিণত হয়েছে। উক্ত প্লটের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আকবর হোসেন জানান, সরকারিভাবে কৃষি সরিষা প্রদর্শনী প্লটের সরিষার ফলন অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। এই কৃষকদের দেখে আশপাশের কৃষকরাও সরিষা আবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। সরিষা আবাদে খরচ কম এবং আমন ও ইরি-বোরো চাষের মাঝের একটি উদ্বৃত্ত উৎপাদনকারী ফসল। তাই এর দিকে বেশি ঝুঁকছেন অত্রাঞ্চলের কৃষকরা।

 

উপজেলার শিহাড়া ইউপির এনামুল হক, সানারুল ইসলাম উজ্জ্বল ও লুৎফা বেগমসহ ওই এলাকার কয়েকজন চাষি এবারে উচ্চ ফলনশীল রকেট (মানঘোষিত) জাতের সরিষার চাষ করেছেন। এনামুল হক বলেন বগুড়া এলাকার এক কৃষকের কাছ থেকে পত্নীতলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আকবর হোসেন এই নতুন জাতের (রকেট) বীজ সংগ্রহ করে আমাদের এলাকার কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেন। এবারে এ এলাকায় ৫/৬ বিঘা জমিতে এই রকেট জাতের চাষ করা হয়।

 

সাধারণ জাতের বীজ ৮০-১০০ টাকা কেজি হলেও রকেট জাতের বীজের দাম ৫০০-১০০০ টাকা কিন্তু সাধারণ জাতের সরিষার ফলন ৬/৭ মণ বিঘা হারী হলেও রকেট জাতের সরিষার ফলন প্রায় ১৫/২৫ মণ বিঘা হারী হয়ে থাকে। এ জাতের সরিষা গাছ ৮ থেকে ১০ ফিট লম্বা ও স্বাভাবিক সরিষার চেয়ে দ্বিগুণ ফলন হয়। দেশীয় জাতের সরিষা মণ প্রতি ১৪ থেকে ১৬ লিটার তেল হলেও রকেট জাতের সরিষা ২০ থেকে ২২ লিটার পর্যন্ত তেল পাওয়া যায়। সরিষার এমন ব্যতিক্রমী গাছ দেখতে প্রতিনিয়তই আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকের উপস্থিতির কথা জানিয়েছেন ওই এলাকাবাসী। রকেট জাতের সরিষার বীজ সংগ্রহের জন্য এলাকার কৃষকরাও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন সরিষা চাষি এনামুল হক ও সানারুল ইসলাম উজ্জ্বল।

 

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোহাইমিনুল ইসলাম ও উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে সরিষার রোগবালাই তেমন নেই বললেই চলে। শীতকালীন ফসল হওয়ার ফলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারে সরিষায় তেমন কোনো রোগ নেই। তবে ছত্রাকনাশক হিসেবে ম্যানকোজেভ গ্রুপের বালাইনাশক এবং ইমিডা ক্লোপিট গ্রুপের কীটনাশক ব্যাবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রকাশ চন্দ্র সরকার জানান, উপজেলায় এবার উচ্চ ফলনশীল বারি-১৪, বারি-১৫, বারি ১৭ ও রকেট (মানঘোষিত) জাতের সরিষার আবাদ কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। নতুন উচ্চ ফলনশীল সরিষা আবাদে আশানুরূপ ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বছর যদি কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হয় তাহলে এ উপজেলায় সরিষার বাম্পার ফলন হবে। চলতি বছরে উপজেলার প্রায় ১৮ হেক্টর জমিতে সরকারিভাবে কৃষি সরিষা প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে এবং গোটা উপজেলায় ৪৭.৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষাবাদ হয়েছে। বোরো ধানের চারা লাগানোর আগেই বোনাস ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করা হয়। আর এ কারণে অনেক কৃষক আমন ধান কাটার পর লাভবান হতে ওই জমিতে সরিষা চাষ করেন। ঘন কুয়াশা এ ফসলের ওপর কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না।

 তাই বেশির ভাগ কৃষকই এখন অন্য ফসলের পাশাপাশি সরিষা চাষ করছেন। সরিষা কেটে ওই জমিতেই আবার বোরোর আবাদ করা যায়। এতে করে কৃষিজমির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে। আমরা সরিষা চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারিভাবে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। প্রণোদনা কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে কৃষকদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। কৃষকরা যতক্ষণ ফসল ঘরে না তুলছেন ততক্ষণ কৃষি বিভাগ তাদের পাশে থাকবে। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ।

 

যাযাদি/এস