​শিমুল ফুলে প্রকৃতিতে নতুন রুপের আবির্ভাবে

প্রকাশ | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৪:৩৮

কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি

 

শীতের জীর্ণতা ছাপিয়ে ফাল্গুনের হাত ধরে প্রকৃতিতে এখন বসন্তকাল। ঋতুরাজ বসন্তে তার উদাস মনে রুপ সৌন্দর্যের শামিয়ানার গালিচায় পত্র পল্লবে নতুন ফুল- ফলে প্রকৃতিকে করে তুলেছেন রঙ্গিন আলোকচ্ছটার রঙ্গমঞ্চ । সবুজের চাদরে আচ্ছাদিত করে রেখেছে পুরো প্রকৃতিকে। আর আম্রকাননে ফুটেছে আমের মুকুল।মুকুলের মৌ -মৌ গন্ধে  মৌমাছির গুঞ্জন, কোকিলের কুহু কুহু কলরব না থাকলেও অন্য পাখিদের কলকাকলিতে প্রকৃতিকে যেন বিভোর করে তুলেছে। তেমনি গ্রামীণ লোক সমাজ ক্যালেন্ডারের পাতা দেখে নয়, নিজের মত করে বেড়ে উঠা শিমুল গাছ দেখেই তারা উপলব্ধি করেন ফাল্গুন মাসের সে কি যে উচ্ছ্বাস।সেই উচ্ছ্বাসে  গ্রাম-বাংলার সৌন্দর্য শিমুল ফুলের আবির মাখা আকাশ ছোঁয়া রঙিন পাঁপড়িতে রাঙিয়ে তুলেছে প্রকৃতি। নতুন সাজে সেঁজেছে ঋতুরাজ বসন্ত। সেই সাথে বদলে গেছে নীলফামারী কিশোরগঞ্জের পরিবেশ। ঋতুরাজ বসন্তের শুরুতেই শিমুল ফুলের স্বর্গীয় সৌন্দর্যে নান্দনিক হয়ে উঠেছে প্রকৃতি ও উপজেলার গাও-গ্রামের পরিবেশ।

 

স্বচ্ছ নীল আকাশের নিচে শিমুল ফুলের আভা জানান দিচ্ছে ভরা বসন্তে টইটুম্বুর। চারিপাশে নানা বর্ণের ফুলে- ফুলে সাজানো। শীতের বিদায়লগ্নে আর ঋতুরাজ বসন্তের শুরুতেই গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য শিমুল ফুলের রঙিন পাঁপড়িতে নতুন সাজে সেজে ওঠেছে প্রকৃতি। এতে সাহিত্যিকরা খুজে পায় সাহিত্যের কাব্যিক ভাষা। আর ঐতিহ্যপ্রেমীরা মুগ্ধ হয়ে ফুলের দৃষ্টিকাব্য উপভোগ করে থাকে।উপজেলার গ্রামাঞ্চলের পথে-প্রান্তরে, নদী বা পুকুরপাড়ে, মাঠে-ঘাটে, বাড়ির আঙিনায় এবং অফিসের ধারে রক্তিম ফুলের নান্দনিক সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ে প্রকৃতির কোলে। তবে আজ অম্লান অতীতের স্মৃতি। তেমন একটা চোখে পড়ে না ফাগুনের রঙে রাঙানো রক্ত লাল শিমুলের গাছ। দিনদিন কমে যাচ্ছে মূল্যবান শিমুলের সংখ্যাও।

 

এক সময় প্রচুর শিমুল গাছ দেখা যেত। আর এই গাছের উৎপাদিত তুলা গ্রাম-গঞ্জে খুব জনপ্রিয় ছিলো।এছাড়া ঔষধি গাছ হিসেবেও বেশ পরিচিত। শিমুল গাছের তুলা দিয়ে সুতা, বালিশ, লেপ, তোষক তৈরিতে কোনো জুড়ি ছিল না। নিজের শিমুল গাছের তুলা বিক্রি করে সাবলম্বী হয়েছে অনেকে।  আবার শিমুল তুলা কুড়িয়ে বিক্রি করে উপার্জনও করতো অনেকে।ফাগুনের প্রথমেই লাল রঙের ফাগুন ঝরা রঙিন পাঁপড়িতে রাঙিয়ে যেত শিমুল গাছ আর চৈত্রের শেষে ফুটন্ত তুলা বাতাসের সাথে উড়ে উড়ে মাতিয়ে রাখতো প্রকৃতিকে। সাঁদা তুলায় ঠেঁকে যেত নীল আকাশ। তখন পরিবেশটাও হতো অন্যরকম। নানা ছন্দে ও গানের খোরাক যোগাতো কবি সাহিত্যিকদের। কিন্তু গ্রাম-বাংলার বুক থেকে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে মূল্যবান এই শিমুল গাছ। যা এক সময় অর্থনৈতিক সম্বৃদ্ধি এনে দিত। যখন কোনো কিছু প্রকৃতি থেকে খোয়া যায়, তখন তার কদরও অনেকগুণ বেড়ে যায়। আর শিমুল গাছ ও ফুল হচ্ছে তেমনই।

 

প্রকৃতিপ্রেমীদের সাথে কথা হলে তারা জানান,ব্যক্তি পর্যায়ে শিমুল গাছ সংরক্ষণে কৃষকদের মাঝে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সেইসঙ্গে জমির মালিক, সরকারি দপ্তরের বন বিভাগ ও বেসরকারি পর্যায়ে সংরক্ষণ করতে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে দ্রুত এগিয়ে এলে আবারো জেগে উঠবে মাঠ জুড়ে শিমুল গাছ। নচেৎ একদিন হারিয়ে যাবে প্রকৃতির অপরূপ শোভা দানকারী ও সৌন্দর্যের প্রতীক শিমুল ফুল।

 

যাযাদি/এসএইচ