শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

​গাংনীর শহড়াতলা গ্রামে বিজিবি আতংক!

গাংনী(মেহেরপুর) প্রতিনিধি
  ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১০:৫৪

চায়ের দোকান থেকে লাল্টু নামের এক কৃষককে ধরে বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে মাদক দ্রব্য দিয়ে মামলা দেয়া ও এর প্রতিবাদ করায় বজলুর রহমান হেবা নামের এক ইউপি মেম্বরকে আসামী করা হয়েছে। এ ঘটনায় মেহেরপুরের গাংনীর শহড়াতলা গ্রামের মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ হতাশা ও বিজিবি আতংক বিরাজ করছে। বিনা অপরাধে বিজিবি নিরীহ লোকজনকে গ্রেপ্তার করায় যেমন স্বাভাবিক জিবন যাত্রা ব্যহত হচ্ছে তেমনি অপরাধ ও অপরাধীর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশংকা করছেন অনেকে। তবে বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গ্রামবাসি যা বলছে তা সঠিক নয়।

বৃহষ্পতিবার সকালে গ্রামটিতে গিয়ে দেখা গেছে, সবার মাঝে বিরাজ করছে অজানা আতংক। কৃষি সমৃদ্ধ এ গ্রামটিতে কাজ কর্মে পড়েছে ভাটা। সিমান্ত সংলগ্ন মাঠে কেউ কাজে যেতে পারছে না বিজিবির হয়রানী ও গ্রেপ্তার আতংকে। সিংহভাগ লোকই অলস সময় পার করছেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে গ্রামের আহম্মেদ আলীর দোকান থেকে লাল্টু নামের একজনকে ডেকে নিয়ে যান বিজিবি সদস্যরা। সেখানে ১৫ বোতল ভারতীয় মদ দিয়ে গাংনী থানায় মামলাসহ সোপর্দ করা হয়। এর প্রতিবাদ করায় গ্রামের ইউপি সদস্য বজলুর রহমান হেবাকেও পলাতক আসামী হিসেবে দেখানো হয়। সে থেকেই গ্রামের লোকজন আতংতিক হয়ে পড়েছে।

চায়ের দোকানী আহম্মেদ আলী জানান, সকালে গ্রামের লাল্টু, তারা মালিথা, শাহাদুল ইসলাম, আতাউল হক, আমির উদ্দীনসহ অনেকে বসে চা পান করছিলেন। ওই সময় ৫ জন বিজিবি সদস্য এসে লাল্টুকে ডেকে নিয়ে আসে। প্রথমে কি কারণে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা বলেনি বিজিবি। পরে ১৫ বোতল মদ দিয়ে তাকে চালান করা হচ্ছে মর্মে খবর পাওয়া যায়।

কৃষক মনিরুল জানান, যে সময় লাল্টুকে নিয়ে যায় বিজিবি সেসময় তার কাছে কিছু ছিল না। গ্রামের লোকজন ইউপি মেম্বারকে জানালে তিনি বিজিবি ক্যাম্পে যান এবং এর প্রতিবাদ করেন। এতে রাগান্বিত হয়ে ইউপি মেম্বর বজলুর রহমানকেও পলাতক আসামী হিসেবে দেখানো হয়।

গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি কায়েম উদ্দীন জানান, লাল্টু এক সময় মাদক পাচার করতো। বছর তিনেক আগে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাভাবিক জিবন যাপন শুরু করে। ঘটনার দিন চায়ের দোকান থেকে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর মাদক দিয়ে চোরাচালানের নাটক সাজানো হয়। একই কথা জানালেন গৃহবধু মুসলিমা, শরিফা ও বিউটি।

কৃষক মঙ্গল আলী জানান, সিমান্ত এলাকার জমিজমা চাষ করার সময় মাঝে মাঝেই বিজিবির হয়রানীর স্বীকার হতে হয়। নিরীহ লোকজনকে ধরে নিয়ে মাদক দিয়ে চালান দেয়। গেল বছর এরশাদ নামের একজনকে ধরে নিয়ে মাদকসহ চালান দেয়ার চেষ্টা করে বিজিবি। এসময় গ্রামবাসিরা প্রতিবাদ ও মিছিল করে এরশাদকে মুক্ত করে। শুধু এরশাদ নয়, তার মতো অনেকেই এমন হয়রানীর স্বীকার। মিথ্যা মামলার ভয়ে কেউ এর প্রতিবাদ করে না।

গ্রামের কৃষক রাশিদুল, আরিফসহ বেশ কয়েকজন জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি বেশ হতাশাজনক। লোকজন কাজে কর্মে যেতে পারছে না। দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে ভয় পাচ্ছেন অনেকে। আবার সন্ধ্যার পর কেউ বাড়ি থাকতে পারছে না বিজিবির ভয়ে। বিকেল থেকেই গ্রাম ছাড়তে শুরু করে লোকজন।

গ্রামের বিল্লাল ড্রাইভার জানান, নিরীহ ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে মাদক দিয়ে চালান দেয়ার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। গ্রামের লোকজন ও ইউপি মেম্বর বজলুর রহমান এর প্রতিবাদ করায় মেম্বরকে পলাতক আসামী দেখানো হয়েছে। এভাবে গ্রামের সরল সহজ মানুষকে ধরে যেভাবে হয়রানীমুলক মামলা দেয়া হচ্ছে তাতে গ্রামে বাস করা কঠিন হয়ে পড়বে।

গাংনীর করমদী কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক হারুনর রশীদ জানান, যেভাবে মানুষকে ধরে নিয়ে চোরাচালানী বানানো হচ্ছে তা শুধু দুঃখজনক ও আতংকের বিষয় নয়, এতে করে অপরাধ ও অপরাধির সংখ্যাও বেড়ে যাবার আশংকা রয়েছে। বিজিবিকে সতর্ক হওয়া উচিৎ।

গাংনী থানার ওসি বজলুর রহমান জানান, ৪৭ বিজিবি শহড়াতলা ক্যাম্পের নায়েক জামাল খানের দায়ের করা মামলায় দুজনকে আসামী করা হয়েছে। ওই মামলায় লাল্টুকে ১৫ বোতল মদসহ থানায় সোপর্দ করে। একই মামলায় ইউপি মেম্বর বজলুর রহমানকে পলাতক দেখানো হয়। মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে।

৪৭ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর ফয়সাল জানান, লাল্টুকে মাদক পাচারের কারণে ধরা হয়েছে আর সরকারী কাজে বাঁধাদান এবং মাদক পাচারে সহায়তা করার কারণে ইউপি মেম্বর বজলুর রহমানের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া গ্রামের লোকজন বিজিবি সম্পর্কে যে কথা বলছে তা সঠিক নয়।

যাযাদি/এসএইচ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে