​নজর কেড়েছে বঙ্গবন্ধু গ্রীন ক্যাম্পাস

প্রকাশ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৩:১৮

আলফাজ সরকার আকাশ, শ্রীপুর

 

 

দেখলে বিশ্বাসেই হবে না যে এটি একটি স্কুলের ছাদ। যে ছাদে সারি সারি টব। সেখানে বেড়ে ওঠা গাছের ডালে ঝাঁকে ঝাঁকে নানা প্রজাতির ফুল, ফল আর সবজির সমাহার। গোলাপ, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, রজনীগন্ধাসহ নানা প্রজাতি ফুল ফুটে একাকার। ফুলের সুগন্ধির পাশাপাশি টবের গাছে ঝুলে রয়েছে আম, জাম,কাঁঠাল, আপেল, আঙুর, মাল্টা, লেবু, কমলা ও জাম্বুরা। সেখানে বাদ পড়েনি ঔষধি জাতের  ধূতকুমারী, তুলসী, পুদিনাপাতা, পাথরকুচি, কুরিয়ান জিনসেং, সাদা লজ্জাবতি, অশ্বগন্ধা ও ননিফল গাছও। আর ছাদের সীমানা ধরে ঝুলে রয়েছে, লেটোস পাতা, ব্রুকলি, চেরি টমেটো, জুকিনিসহ নানা লতাপাতার গাছ। দেশীয় জাতের পাশাপাশি  ভিন্ন দেশের পার্সিমন, করসোল, অ্যভোকাডো, প্যাশন ফ্রুট, পেপিনো মেলন, স্ট্রবেরি পেয়ারাসহ একাধিক বিদেশি জাতের অচেনা ফল দেখে আগত দর্শনার্থীদের রীতিমতো নজর কেরেছে বঙ্গবন্ধু গ্রীন ক্যাম্পাসে। স্কুলের ছাদে যে বাগান করা সম্ভব, সেটি প্রমাণ করে প্রশংসায় ভাসছেন গাজীপুর জেলার  শ্রীপুর উপজেলার হাজী আব্দুল কাদের প্রধান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নাছির উদ্দিন।

 

সরেজমিনে জানা যায়, কয়েক জাতের ফল ও ফুলের চারা লাগিয়ে শিক্ষক মো. নাছির উদ্দিন কর্মস্থল বিদ্যালয়ের ছাদ বাগানটি শুরু করেন ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে। বর্তমানে ৮৫ জাতের হাজারো ফল, ফুল, ঔষুধি, শাক-সবজি ও বাহারি গাছের প্রাকৃতিক সমারোহে পরিপূর্ন করে তুলেছেন শখের বাগানটিতে। সেই সাথে শোভাবর্ধন করছে বিভিন্ন পাতা বাহারের গাছ। আর স্কুলের ছাদে এমন বাগানের দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছে উৎসাহী মানুষ

 

দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয় ছুটি থাকায় নিজের হাতে গড়া বাগানটি পরিচর্যায় দিনের অধিকাংশ সময় কেটে যায় জানিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নাছির উদ্দিন বলেন, শিক্ষকদের সাথে বাগানে বসে স্কুলের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। কিছুদিন আগের শখের বশে বিদ্যালয়ের ছাদে কয়েকটি গাছের চারা দিয়ে বাগান শুরু করি। প্রকৃতির সান্নিধ্য আমাকে অনেক বেশী বিমোহিত করে। প্রতিমাসে বেতনের একটি অংশ দিয়ে বাগানটিতে বিভিন্ন জাতের গাছের চারা লাগাতে থাকি। একসময় ফুল-ফল ও বিভিন্ন জাতের গাছে ছাদ বাগানটি ভরপুর হয়ে গেল। এখন স্কুলের শিক্ষার্থীরাও প্রকৃতি প্রেমী হয়ে ওঠছে। অনেকেই চারা সংগ্রহ করে নিজেদের বাড়িতে বাগান করতে আগ্রহী হচ্ছে । এটাই আমার আনন্দ। তিনি আরও বলেন, এখানে এমন অনেক গাছ রয়েছে যেগুলো আমাদের অনেকেই শুধুমাত্র বইপুস্তকে পড়েছে, যা এখন বাস্তবে দেখা যাচ্ছে । দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে একটি করে বাগান থাকলে, ছাত্র-ছাত্রীদের গাছ লাগানোর আগ্রহ বেড়ে যাবে। আর এতে পরিবেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকবে বলেও জানান তিনি।

 

বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, স্কুল খোলা হলে স্যারকে বলে আমরা কৃষি ক্লাশটি ছাদ বাগানে করবো। প্রকৃতির মাঝে পড়াশুনা করতে ভালোই লাগবে। তারা আরো জানান, স্যারের বাগান দেখে বিভিন্ন স্থান থেকে গাছে চারা নিয়ে আমরা বাড়ীতে বাগান করেছি। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য আতিক প্রধান বলেন, ছাদের উপর প্রধান শিক্ষকের নিজস্ব অর্থায়নে এমন একটি সুন্দর বাগান যা কল্পনা করা যায়না। যেখানে ফল ও ফুলে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে বাগানটি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ দর্শনার্থীও মাঝে মাঝে বাগানটি দেখতে আসেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার মোঃ আসাদুজ্জামান  বলেন, এ উপজেলায় বিদ্যালয় ছাদে বাগান সৃজনের এটা প্রথম দৃষ্টান্ত। এখানে ফুলফলের পাশাপাশি অনেক ঔষধি গাছ রয়েছে যেগুলো আমাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক কাজে আসবে। তিনি আরও বলেন, বাগানের গাছে গাছে ফুল আর ফলের সমারোহ দেখতে প্রকৃতি প্রেমীদের পাশাপাশি  প্রতিদিন অনেক অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে আসছেন।

 

শিক্ষার্থীরা জীববিজ্ঞানের অংশ উদ্ভিদবিজ্ঞান এবং কৃষি বিষয়ে হাতে–কলমে শিখতে পারছে জানিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল আমিন যায়যায়দিনকে বলেন, বিদ্যালয়ের ছাদে বাগান একটি প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয় প্রচেষ্টা। প্রকৃতির সাথে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিতে প্রধান শিক্ষককের এমন উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। তিনি আরও বলেন, বাগানটি পরিদর্শন করে আমি নিজেও অভিভূত হয়েছি। উপজেলার সকল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বাগানটি পরিদর্শনের জন্য বলা হয়েছে। যাতে উপজেলার সব বিদ্যালয়ে এই ধারনা ছড়িয়ে দেওয়া যায়।

 

যাযাদি/এসএইচ