শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সার্ভার জটিলতায় জন্ম-মৃত্যু সনদ পেতে পৌরবাসীর ভোগান্তি চরমে!

শ্রীপুর(গাজীপুর)প্রতিনিধি
  ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২১:৩৯

দু’মাস ধরে সার্ভার বন্ধ থাকায় গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার বাসিন্দারা জন্মনিবন্ধন ও মৃত্যু সনদ নিতে পারছেন না। এতে সন্তানকে স্কুল-কলেজে ভর্তি, জমি রেজিস্ট্রিসহ বিভিন্ন কাজে জন্মনিবন্ধন ও মৃত্যু সনদ না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন পৌরবাসী । এর ফলে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীদের মাঝে। তবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি সার্ভার জটিলতা শুধু শ্রীপুরেই হচ্ছে এমনটা নয়, পাশ্ববর্তী পৌরসভায়ও এমন সমস্যা।

জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে স্কুল কলেজে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে গিয়ে জন্মনিবন্ধন প্রয়োজন হওয়ায় অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীরা ছুটে যান পৌরসভায়। সেখানে গিয়ে সার্ভার জটিলতায় জন্মনিবন্ধন না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা। তবে পৌরসভার জন্মনিবন্ধনে দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তির দাবি, এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বিভাগে যোগাযোগ করা হলে ডিসি অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়। পরে জেলা অফিসে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয় যে, সার্ভার বিষয়ে আমাদের কিছুই করার নেই।

রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে পৌরসভার চত্বরে সরজমিনে দেখা যায়, সেখানে বসে আছেন কয়েকজন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। তাদের আসার উদ্দেশ্য কি জানতে চাইলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এ প্রতিবেদককে জানান, জানুয়ারি মাস থেকে ঘুরছি জন্মনিবন্ধন নেয়ার জন্য। কিন্তু অধ্যবধি জন্মনিবন্ধন পাচ্ছি না।

মারিয়া আক্তার মীম নামের এক শিশুর জন্মসনদ নিতে আসা অভিভাবক মতিউর রহমান বলেন, বিদ্যালয় থেকে বলে দিয়েছে জন্মসনদ ছাড়া উপবৃত্তির টাকা পাওয়া যাবে না। আজ নিয়ে তিন দিন আসলাম, কিন্তু এখনো সনদ পাইনি। যদি সঠিক সময়ে জন্মসনদ না দিতে পারি তাহলে তো উপবৃত্তির টাকা পাব না। এ সমস্যা আমার একার নয়। অনেক অভিভাবক প্রতিদিন জন্মসনদের জন্য এসে ঘুরে যাচ্ছেন। আমরা দাবি জানাচ্ছি যেন দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

শাকিব শিকদার নামের আরেক শিশুর অভিভাবক রিনা বেগম বলেন, আমি বেশ কয়েকদিন ধরে জন্মসনদ নেওয়ার জন্য পরিষদে যাচ্ছি। কিন্তু সার্ভার কাজ না করায় প্রতিদিন ঘুরতে হচ্ছে। আমার ছেলেকে টিকা কার্ড দিয়ে বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু জন্মসনদ বাধ্যতামূলক, লাগবেই। তাই প্রতিদিন পৌরসভায় এসে খোঁজ নিচ্ছি।

পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড সদস্য মাসুদ প্রধান বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য অভিভাবক তাদের সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন করতে এসে ফেরত যাচ্ছেন। গত জানুয়ারি থেকে সার্ভারে কাজ করছে না। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদেরও জবাবদিহি করতে হয়।

লোহাগাছ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান বলেন, অনেক অভিভাবক এখনো আমাদের জন্মসনদ দিতে পারেনি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো অবস্থাতেই তথ্য দেওয়া সম্ভব হয়নি। সার্ভারের সমস্যার কারণে যেহেতু এই সমস্যা হচ্ছে, তাই উপবৃত্তির তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সময় বৃদ্ধি করার আবেদন করা হয়েছে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, এ উপজেলায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫ হাজার শিক্ষার্থীর জন্ম নিবন্ধন পায়নি, চলতি জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে উপবৃত্তির সকল তথ্য শিক্ষা অফিসে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত জন্মসনদের সার্ভারের সমস্যার কারণে উপজেলার কোনো বিদ্যালয় থেকে উপবৃত্তির তথ্য শিক্ষা অফিসে জমা দেয়নি। বিষয়টি আমরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে অবগত করেছি।

পৌরসভার দায়িত্বরত নিবন্ধন কর্মকর্তা আব্দুল মোমেন বলেন, নাগরিকরা প্রতিনিয়তই নিবন্ধনের জন্য আসলেও সার্ভার চালু না থাকায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না । অফিসে প্রায় হাজার খানেক আবেদন ফাইল জমা পড়ে আছে। এতে ভুক্তভোগীরা নিবন্ধন না হওয়ার কারণ জানতে চায়। সার্ভারে সমস্যার কথা বললেও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে অনেকেরই সে বিষয়ে ধারনা নেই বিধায় জবাব দিতে আমরাও বিব্রতকর পরিস্থিতি সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে পৌর সচিব সরকার দলীল উদ্দিন আহমেদ যায়যায়দিনকে বলেন, প্রতিদিন শতাধিক মানুষ জন্ম নিবন্ধনের জন্য পৌরসভায় এসে ফেরত যাচ্ছে। আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করা যাচ্ছে খুব শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে।

যাযাদি/ এমডি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে