জয়পুরহাটে ডায়রিয়ার প্রকোপে চিকিৎসা দিতে হিমশিম চিকিৎসকরা

প্রকাশ | ০৬ মার্চ ২০২১, ১৪:৫১

মাসুদ রানা, জয়পুরহাট

জয়পুরহাট জেলায় ডায়রিয়ার প্রকোপ ইদানিং বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক ও নার্স। স্থান সংকুলান না হওয়ায় অধিকাংশ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীকে থাকতে হচ্ছে মেঝেতে। হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা কম থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জয়পুরহাটে ডায়রিয়ার প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত দেড় মাস ধরে এ অবস্থা বিরাজ করছে। কেবল জয়পুরহাট পৌর এলাকার রোগীই নয় এ হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে আসছে এ জেলার ৫ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে। ডায়রিয়াক্রান্ত এ সব রোগীর অধিকাংশরাই শিশু।

 

হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের তথ্যানুসারে, এখন প্রতিদিন জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে ৬০থেকে ৭০জন ডায়রিয়াক্রান্ত নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতালের নির্ধারিত ডায়রিয়ার ওয়ার্ডে (বেডে) স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে এ সব রোগীদের অধিকাংশকেই হাসপাতালের বারান্দা কিংবা কড়িডোরের মেঝেতে শয্যা পেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। অন্যান্য রোগীর পাশাপাশি ডায়রিয়াক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় জনবল ও শয্যা সংকটের কারনে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে এ হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের চিকিৎসক ও নার্সদের।এ অবস্থায় গত দেড় মাসে আড়াই হাজারেও বেশি রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে এ হাসপাতালে। তবে আশার কথা, এখন পর্যন্ত  ডায়রিয়াক্রান্তদের কারও মৃত্যু না হলেও প্রায় প্রতিদিন আশঙ্কাজনক অবস্থায় ২/১জন ডায়রিয়ার রোগীকে এ হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হচ্ছে বলে জানা গেছে আধুনিক জেলা হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড সূত্রে।

 

জয়পুরহাট জেলার ৫টি উপজেলার বিভিন্ন রোগী ছাড়াও এ জেলার পাশের্^ অবস্থিত বিভিন্ন উপজেলার রোগীরা নিকটবর্তী হওয়ায় চিকিৎসা সেবা নিতে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে ছুটে আসেন। ফলে মাত্র দেড় শ’ শয্যার জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে সব সময় দ্বিগুনেরও বেশি রোগীর বাড়তি চাপ থাকে। তার ওপর এই ডায়রিয়াক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ঠিক মত চিকিৎসা দিতে হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসক ও নার্সদের চরম ধকল সইতে হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারনে গত বছর এ হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডটিকে করোনা রোগীদের আইসোলেশন ওয়ার্ড হিসেবে পরিবর্তিত করে সাময়িক ভাবে  হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশের একটি ছোট কক্ষকে ডায়রিয়া ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। এ ওয়ার্ডে রোগীদের  জন্য শয্যা (বেড) রয়েছে মাত্র ৮টি। কিন্তু প্রতিদিন গড়ে ৫০থেকে ৭০জন (নতুন) রোগী ভর্তি হলে তাদের মেঝেতে আশ্রয় নেয়া  ছাড়া কি উপায় থাকে?

 

এ হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র ষ্টাফ নার্স নাসিমা সুলতানা জানান, প্রতিদিন এক দিকে সুস্থ হয়ে এক দল বাড়ি চলে যাচ্ছে, অন্য দিকে চিকিৎসা নিতে নতুন করে এসে ভর্তি হচ্ছে। এমনি ভাবে গড়ে ৫০ জনেরও বেশি নতুন ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতালে নতুন ও পুরনো মিলে সব সময় ৬০থেকে ৭০জন ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হয়ে থাকছে। তিনি অভিযোগ করেন, কেবল ডায়রিয়ার রোগীই নয়, স্থান সংকুলান না হওয়ায় বর্তমান ডায়রিয়া ওয়ার্ডের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারিদেরও ঠিক মত বসার জায়গার অভাব, বাথরুম ও ল্যাট্রিনের সমস্যা। ’                              

 

হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা.মিজানুর রহমান জানান, গত দেড় মাস থেকে এ হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলছে। জনবল কম থাকায় অধিক সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা দিতে আমরা রীতিমিত হিমশিম খাচ্ছি। ডায়রিয়ার কারন হিসেবে মৌসুম পরিবর্তনে আমরা মনে করছি, সিজোনাল ভাইরাসই এর জন্য দায়ী। সবাই যদি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকে এবং  প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলে তাহলে আমরা খুব তাড়াতাড়ি এ থেকে মুক্তি পেতে পারি।  

 

এ ব্যাপারে জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক জুয়েল জানান, গত জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে প্রায় দেড় মাস যাবৎ ডায়রিয়ার এ প্রকোপ চলছে। এ হাসপাতালে ডায়রিয়ার ওষুধের কোন অভাব নেই। তবে প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে শুধূ ডায়রিয়াক্রান্ত রোগী নয়, শয্যা সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় (বেড অভাবে) অন্যান্যা রোগীদেরও বাধ্য হয়ে মেঝেতে চিকিৎসাব সেবা নিতে হচ্ছে। তবে হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সরা রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেবার ক্ষেত্রে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে তাদের আন্তরিকতার কোন অভাব নেই।

 

যাযাদি/এসএইচ