দুইজন পুরুষের সমান কাজ করতে পারেন কাজলী

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২১, ১১:১৮ | আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২১, ১১:২৬

আলফাজ সরকার আকাশ, শ্রীপুর

স্বামীর মৃত্যুর পর ঠাঁই মেলেনি শ্বশুর বাড়ি। ভাসমান জীবনের ইতি টানতে বারবার চেষ্টা করেও কোনো বাড়িতেই মাথা গুজার ঠাঁই হয়নি তাঁর। দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ চিন্তা ও তাদের মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে রাতদিন পরিশ্রম করে জীবন যুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে আনতেই রীতিমতো সংগ্রাম করে আসছেন গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার স্বামীহারা কাজলী বেগম (৪৩)।

 

কাজলী বেগম শেরপুর জেলার সদর থানার মাঝপাড়া গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের স্ত্রী। বর্তমানে শ্রীপুর রেললাইনের পূর্ব পাশে একটি টিনসেট বাড়ীতে ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভাড়া থাকেন তিনি। সরেজমিনে রোববার দুপুর ২টায় শ্রীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের রাস্তার পাশে গিয়ে দেখা যায়, প্রখর রোদে রাস্তার কাজে ২০-২৫টি ইট ঝুরিতে ভরে মাথায় বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন কাজলী।

 

কেনো এমন পরিশ্রম জানতে চাইলে কাজলী বেগম জানান, ‘গত ১০বছর আগে স্বামী মারা যাবার পর থেকে শশুর বাড়ীতে ঠাঁই হয়নি। বাপের ভিটায়ও জমি নেই। তাই ভাসমান মানুষের সাথে বসবাস করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে।’

 

এখানে একটি চাপড়া ঘরে ভাড়া থাকেন তিনি। ছেলে সাগর মিয়া (১৪)কে কোরআনের হাফেজ করার আশায় মাদ্রাসায় দিয়েছেন। আর ছোট মেয়ে মিতু ৫ম শ্রেনীতে পড়ে। দুজনেরই খরচ বহন করতে ইট ও মাটির কাজ করেন তিনি । এছাড়াও গর্ত খনন, রাস্তায় ইট বসানো,রাজমিস্ত্রীর জোগালী,বালু ও ইটের টুকরো টানাসহ সকল শক্ত কাজই করতে হয় বলে জানান কাজলী। আবেগ আপ্লুত কাজলী আরও বলেন, একদিন কাজ করতে না পারলে পরের দিন ছেলেমেয়ে নিয়ে উপোস থাকতে হয়। পেটের তাগিদেই কাজের সন্ধান নিতে হয়। শুনেছি কতো মানুষই সরকারি অনুদান পায়। কই আমি তো কিছুই পাইনা।

 

শ্রীপুর বাজারের ইট-বালু ব্যবসায়ী নাঈম মিয়া জানান, এ উপজেলার প্রায় সকল স্থানেই কাজলী বেগম দিনমজুর হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি খুব পরিশ্রমী ও সৎ একজন মানুষ। তার কাজে কোন ফাঁকি নেই। দুইজন পুরুষের সমান কাজ করতে পারেন তিনি।

 

শ্রীপুরের আব্দুল আউয়াল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, নিজের সন্তানের জন্য সংগ্রাম করতে বাবা-মায়ের কষ্টের পরিমান পাহাড় সমান। তবে সবসময়ই সন্তানের হাসির ভিড়ে বাবা-মায়ের সেসকল কষ্টগুলো হাড়িয়ে যায়। তাই সন্তানের উচিৎ বড় হয়ে বাবা-মায়ের বরণ-পোষণের প্রতি বিশেষ নজর রাখা

 

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমা মোস্তারী যায়যায়দিনকে বলেন, ‘কাজলী বেগমের জাতীয় পরিচয় পত্র অন্য উপজেলার হওয়ায় নির্দিষ্ঠ কিছু সুবিধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে, খোঁজ নিয়ে তাঁকে সরকারি সকল ধরণের সহায়তা প্রদান করা হবে।’

 

যাযাদি/এসএইচ