সালথায় ঘটনায় মামলা, আসামি ৪ হাজার, গ্রেপ্তার-১৩

প্রকাশ | ০৭ এপ্রিল ২০২১, ১৯:৪০

ফরিদপুর প্রতিনিধি

 

ফরিদপুরের সালথায় সহিংসতার ঘটনায় ৪ হাজারেরও বেশি লোককে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। বুধবার (৭ এপ্রিল) সকাল ৮টার দিকে সালথা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এতে আসামি হিসেবে ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। আর অজ্ঞাত আসামি করা হয় আরো তিন/ চার হাজার জনকে।

 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশা। তিনি বলেন, থানায় হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করে। মামলার এজাহারভুক্ত ১৩ আসামিকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।

 

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মামলার এজাহারভুক্ত আসামি উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের গোপালিয়া গ্রামের ক্বারী ইনছুর শেখের ছেলে মোঃ নুরু শেখ (১৮), বিনোকদিয়া গ্রামের করিম কাজীর ছেলে মোঃ সজিব কাজী (১৯), ইউসুফদিয়া গ্রামের শাহজাহান মাতুব্বরের ছেলে রাব্বি মাতুব্বর (১৯), মিনাজদিয়া গ্রামের আব্দুল মোতালেবের ছেলে মোঃ ইউনুস মাতুব্বর (৬০), গোপালিয়া গ্রামের সালাম মোল্যার ছেলে আমির মোল্যা (৩০)। এছাড়া ফুকরা গ্রামের গ্রামের সুলতান শেখের ছেলে আবুল কালাম শেখ (৩৫), রিপন শেখ (৩২), ইসরাইল মোল্যার ছেলে ইলিয়াস মোল্যা (২৭), চিলারকান্দা গ্রামের খালেক শেখের ছেলে শহিদুল শেখ (৩২), পিসনাইল গ্রামের গ্রামের ঝিলু ফকিরের ছেলে মোঃ রুবেল ফকির (২৫), সোনাপুর গ্রামের মিজানুর শেখের ছেলে মোঃ রাকিবুল ইসলাম (১৮) ও বিনোকদিয়া গ্রামের আইয়ুব মোল্যার ছেলে মোঃ সাইফুল ইসলাম (১৮) কে আটক করা হয়েছে।   

 

এদিকে সহিংসতার ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. তাসলিমা আলী ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আসলাম মোল্লাকে প্রধান করে ৬ সদস্যবিশিষ্ট দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এই দুই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

 

 

এদিকে তান্ডবের সময় আহত মিরান মোল্যা (৩৫) নামে আহত আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তিনি উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের দরজাপুরুরা গ্রামের আব্দুর রব মোল্যার ছেলে।

 

বুধবার (০৭ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভাওয়াল ইউপি চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়া।

 

এর আগে তান্ডবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আট সদস্যসহ আহত হন ২০ জন। আহতদের মধ্যে জুবায়ের হোসেন (২৫) নামে এক যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

 

উল্লেখ্য, পুলিশের গুলিতে কয়েকজন নিহত ও জনৈক দুই মাওলানা গ্রেফতারের গুজব ছড়িয়ে হামলা চালানো হয় ফরিদপুরের সালথার বিভিন্ন সরকারি দফতর ও কর্মকর্তাদের বাসভবনে। ব্যাপক ধংসযজ্ঞ শেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও এলাকার অবস্থা এখনো থমথমে। ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

 

স্থানীয় বাসিন্দা আসলাম শেখ বলেন, সোমবার রাতে যে তাণ্ডব চলেছে সে কথা কেউ ভুলতে পারছেন না। সবার মাঝেই আতঙ্ক বিরাজ করছে। যদিও বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তারপরও আতঙ্কে রয়েছি আমরা।

 

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, সালথা এলাকা এমনিতেই দাঙ্গাপ্রবণ। তারপরও এ ধরনের ভয়াবহ তাণ্ডব এই প্রথম দেখল সালথাবাসী। এ কারণে সবাই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

 

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান জানান, আমরা অপরাধীদের ভিডিও ফুটেজ দেখে সনাক্তের চেষ্টা করছি, প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্য চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।

তিনি বলেন, এই ঘটনায় এলাকায় পুলিশ- র‌্যাবের পাশা-পাশি বিজিবির দুই প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

 

যাযাদি/এস