শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লক ডাউন-এ বাড়ি ফেরা যেন ঈদ ছুটি

আবুল হোসেন, গাজীপুর প্রতিনিধি
  ১৩ এপ্রিল ২০২১, ১৮:৪২
আপডেট  : ১৩ এপ্রিল ২০২১, ২১:০০

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ১৪ এপ্রিল থেকে ৭ দিনের কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। ঝুঁকি মাথায় নিয়ে লকডাউনের খবরে যেন ঈদের আনন্দে ঘরে ফিরছে মানুষ। অফিস আদালত বন্ধ ঘোষণা করায় সীমিত আকারে চলা যানবাহনে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ঘরে ফেরা সাধারণ মানুষকে।

মঙ্গলবার মঙ্গলবার সকাল থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজধানীর উত্তরা, আব্দুল্লাহ্পুর থেকে শুরু করে টঙ্গী, বড়বাড়ি, বোর্ডবাজার, গাজীপুর চৌরাস্তা, জয়দেবপুর, মাওনা চৌরাস্তা ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের, কোনাবাড়ি, চন্দ্রা ও কালিয়াকৈর এলাকায় দূরপাল্লা ও স্বল্প দূরত্বের বাসে চলাচল করতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও যাত্রীরা দীর্ঘসময় বাস না পেয়ে খোলা পিক-আপ, ট্রাক ও মালবাহী ট্রাক চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে যাত্রীবহনের চলাচলকারী যানগুলো সরকার নির্ধারিত অতিরিক্ত ভাড়া নিলেও স্বাস্থ্যবিধি উপক্ষো করেই চলাচল করতে দেখা গেছে।

এদিকে, সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। টঙ্গী বাজার ও স্টেশন রোড এলাকায় যাত্রীদের কিছুটা ভিড় থাকলেও গাজীপুরের চৌরাস্তা এলাকায় ঘরে ফেরা মানুষের প্রচুর ভিড় ছিল।

টঙ্গী কলেজ গেইট এলাকার দুরপাল্লার বাস কাউন্টারের দায়িত্বরত মো. রবিন জানান, মুখে মাস্ক ছাড়া কাউকে টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। সরকারী নির্দেশনা মেনেই আমাদের কার্যক্রম চলছে।

স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গাজীপুরের বোর্ড এলাকায় চাকুরি করেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বোর্ড বাজার এলাকায় থাকেন। দীর্ঘদিন সন্তানদের স্কুল বন্ধ থাকায় বাসার মালামালসহ স্ত্রীসন্তানদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। বেলা ১২টার দিকে বোর্ড বাজার থেকে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। কিন্তু সরাসরি কোন বাস না পেয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাত্রা শুরু করেছি। বোর্ড থেকে ৬০টাকা ভাড়ায় অটোরিক্সা দিয়ে জয়দেবপুর চৌরাস্তা এসেছেন তিনি। পরে সেখান থেকে ২৫০টাকা ভাড়ায় মোটরসাইকেল যোগে মাওনা চৌরাস্তা এসেছেন। অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে দেড়শ টাকা থেকে ২০০টাকায় বোর্ড বাজার থেকে ময়মনসিংহ যাওয়া যায়। কিন্তু করোনার কারণে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও দুর্ভোগ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে আমাদের। বাকী রাস্তাটুকু কিভাবে যাবেন তা নিয়ে তাকে বেশ চিন্তিত দেখা যায়।

টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকায় ময়মনসিংহগামী অপর যাত্রী মো. সানোয়ার হোসেন জানায়, করোনার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে কারখানায় কাজ করতে ভয় হয়। তাই লকডাউনের আগেই গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। প্রয়োজনে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কৃষি কাজ করবো।

এবিষয়ে টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকার টিআই মো. সাহাদাৎ হোসেন জানায়, লোকজন গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে তাই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রচুর চাপ। সন্ধ্যার দিকে এই চাপ কয়েকগুনে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় গাজীপুর মেট্রোপলিটনের ট্রাফিকের একাধিক টিম প্রস্তুত রয়েছে।

কোনাবাড়ি হাইওয়ে থানার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মীর গোলাম ফারুক জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ করে যানবাহনের চাপ বেড়ে গেছে। আর গাড়িগুলোতে যাত্রীদের রয়েছে উপচে পড়া ভিড়। এ যেন ঈদের ছুটিতে মানুষের ঘরে ফেরা। মহাসড়কে যানজট নেই তবে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় রয়েছে ধীরগতি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য চালক-যাত্রীদের সতর্ক করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

গাজীপুর মহানগর ট্রাফিক পুলিশের সহকারি কমিশনার মো. মেহেদী হাসান জানান, গাজীপুর মহানগরের চান্দানা-চ্যেরাস্তা এলাকায় মঙ্গলবার দুপুর থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহসহ উত্তরগামী ছোট-বড় সব গাড়িতে যাত্রীদের প্রচন্ড ভিড় রয়েছে। ঘরমুখো গাড়ি ও মানুষের চাপ যেন ঈদের চেয়েও বেশি। যানবাহনের ভিড়ও বেড়েছে, চলছে ধীরে ধীরে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ চেষ্টা করে যাচ্ছে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে