বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

​কটিয়াদীতে গোলডেন ক্রাউন তরমুজ চাষে লাভের স্বপ্ন দেখছে তিন শিক্ষিত যুবক

কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
  ২০ এপ্রিল ২০২১, ১৩:১৯

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় কিশোরগঞ্জরে কটিয়াদী উপজেলায় করগাঁও ইউনিয়নের দেওপাশা বাগ গ্রামে অনার্স পড়ুয়া তিন শিক্ষিত যুবকের উদ্যোগে গোলডেন ক্রাউন তরমুজ চাষ করে।

তারা হলেন, রাকিব ভুইয়া, রহমতউল্লা হাসান আগুর, ফয়সাল আহম্মেম আকাশ।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিন বন্ধুর স্ব-উদ্যোগে ৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে বিদেশি তাইওয়ানের গোল্ডেন ক্রাউন জাতের হলুদ রংয়ের তরমুজ চাষ বাণিজ্যিকভাবে শুরু করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। সাধারণত ফেরুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত আবহাওয়া তরমুজ চাষের উপযোগী বলা হয়। কটিয়াদীতে এই প্রথম বিদেশি তরমুজ চাষ করে সফল কৃষকের খাতায় নাম লিখিয়েছেন তিন বন্ধু। তারা আধুনিক পদ্ধতিতে বিদেশি তাইওয়ানের গোল্ডেন ক্রাউন জাতের হলুদ রংয়ের তরমুজের বীজ রোপণ করেন। তাদের নিবেদিত চেষ্টা, শ্রম, সততা আর ঘামের প্রতিফলন সুরভিত হয়ে কাঙ্ক্ষিত ছোট-বড় কয়েকহাজার তরমুজ মাচায় মাচায় গাছের ডোগায় ডোগায় ঝুলে বাতাসে দুলছে। বিষ ও ফরমালিন মুক্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ তরমুজগুলোর রং হলুদ, খেতে সুস্বাদু, দেখতে আকর্ষণীয় ও চাহিদা বেশি, ভালো দাম থাকায় এবং লাভজনক হওয়ায় এই জাতের তরমুজ দেখতে ক্ষেতে ভিড় করেন অনেকেই।

উপজেলার তিন শিক্ষিত বন্ধু রাকিব ভুইয়া, রহমতউল্লা হাসান আগুর ও ফয়সাল আহম্মেম আকাশ যায়যায়দিনকে বলেন, আমরা তিন বন্ধু অনার্স ২য় বর্ষে অধ্যায়নরত করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ঘরে বসে না থেকে কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষি হিসাবে তুলে ধরতে এবং কর্মহীন কয়েক জনকে কর্মদিতে তিন বন্ধু মিলে প্রথমে ক্যাপসিকাম চাষ করি এতে আমরা লাভবান হই। এর পরে আবার আরও ৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে বিদেশি তাইওয়ানের গোল্ডেন ক্রাউন, ব্যাকজাম্বু ও জেসমনি-২ জাতের তরমুজ রোপন করি।

বীজ রোপণের ৩৫ দিনের মধ্যে গাছ মাচায় উঠে যায়। ৪০ দিনের মধ্যে গাছে প্রচুর ফুল ও কুড়ি আসে। তারপর ৭৫ দিনের পরিপক্ব হয়ে মাচায় ডোগায় ডোগায় ঝুলে আছে আড়াই থেকে তিন কেজি ওজনের তরমুজ। প্রতি বিঘা জমিতে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সপ্তাহের মধ্যে বিক্রি করা হবে। ওই তরমুজ কাটলে ভেতরে লাল টুকটুকে, রসালো আর খেতে মিষ্টি ও খুব সুস্বাদু।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মুখসেদুল হক বলেন, এই উপজেলার কৃষকেরা ধান ও আলুর চাষ করতে বেশি আগ্রহী। ধান ও আলুর চাষাবাদ ছাড়াও অনেক ধরনের ফল চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া যায় সেই চেষ্টাই আমরা এলাকায় একটি আধুনিক তরমুজ চাষ সৃষ্টি করেছি। তিন শিক্ষিত যুবকের মাধ্যমে উপজেলায় প্রথমবারের মতো গোল্ডেন ক্রাউন জাতের তরমুজ চাষ করেছি। আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাদের কারিগরিসহ সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি। বাজারে এর ভালো চাহিদা রয়েছে। আগামীতে উপজেলায় এই জাতের তরমুজ চাষ বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার জ্যোতিশ্বর পাল বলেন, চলমান মাহামারী করোনায় ঘরে বসে না থেকে ইউটিউবে দেখে নিজ এলাকায় ৫ বিঘা জমি লীজ নিয়ে উন্নত জাতের ব্যতিক্রমী ভিয়েতনামের সোনালি বর্ণের গোল্ডেন ক্রাউন এবং সবুজ বর্ণের ব্যাকজাম্বু ও জেসমনি-২ জাতের তরমুজের চাষ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে অনার্স পড়ুয়া তিন বন্ধু। আমি উপজেলা বেকার শিক্ষিত যুবক ও কৃষক ভাইদের বলবো করোনার এ ক্লান্তিকালে ঘরে বসে না থেকে তারাও যেন এ ধরনের ফসলে আগ্রহী হয়ে উঠেন। এতে অল্প খরচে অধিক লাভ, নিজের কর্মস্থল ও বেকারত্ব দূর হবে।

যাযাদি/ এমডি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে