শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

​কাউনিয়ায় প্রশাসনের তৎপরতা: তবুও বাজারে উপচে পড়া ভিড়

কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি
  ২১ এপ্রিল ২০২১, ২১:৩২

করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ এড়াতে মানুষদের সচেতন করতে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে প্রশাসন ও পুলিশ অভিযান পরিচালনা করলেও থাকছে মানুষের ভিড়। স্বাস্থ্যবিধি কিংবা সামাজিক দূরত্ব না মেনে ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান ছাড়াও হার্ডওয়্যার, রেডিমেড পোশাক এবং কাপড়ের দোকানগুলোতে চলছে কেনাবেচা। আর বাজারে চায়ের দোকানে পাশাপাশি বসে বা দাঁড়িয়ে আড্ডা চলছে। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।

উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার হারাগাছ পৌরসভাসহ ছয়টি ইউনিয়নে খানসামা, টেপামধুপুর, জয়বাংলা, মীরবাগ, সারাই হাটসহ ১৬টি হাটবাজার রয়েছে। এছাড়া পাড়া-মহল্লায় প্রায় দেড়শতাধিকরও বেশি ছোট বাজার রয়েছে। গত এক সপ্তাহে উপজেলার হারাগাছে পৌরসভার পাইকার বাজার, নতুনবাজার, নবিজন মার্কেট, মিনাবাজার, বকুলতলা, সারাই বাজার ও টেপামধুপুর, খানসামাহাটসহ অন্তত ১৫টি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, মানুষ করোনাভাইরাসের ব্যাপারে তেমন সচেতন নন।

বাজারগুলোতে মাছ, মাংস, কাঁচা তরিতরকারি ও মুদি দোকানসহ অন্য দোকানগুলোতে কেনাকাটার সময় ক্রেতাদের মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বজায় থাকছে না। অনেকেই ব্যবহার করছেন না মাস্ক। বাজারে কিংবা দোকানে নেই হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। পাড়ায় পাড়ায় ও মহল্লার মোড়ে মোড়ে দল বেঁধে আড্ডা দিচ্ছেন শিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিত তরুণেরা। তবে উপজেলা সদরের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা দেখা গেছে।

বুধবার দুপুর ১২টার দিকে হারাগাছ পৌরসভার পাইকারবাজারে দেখা গেছে, গিজগিজ করছে মানুষ। সবজি কিংবা মুদি দোকানে আট-দশজন ক্রেতা গা ঘেঁষে বাজার করছেন। কেউ দরদাম করছেন, কেউ গুনছেন টাকা। আবার কেউ কেনাকাটা করে বাড়িতে ফিরছেন। অনেকের মুখে মাস্ক নেই। কারও মুখে মাস্ক থাকলে, তা থুতনিতে নামানো। বাজারে নেই হাত ধোয়ার ব্যবস্থা।

কাঁচাবাজার করতে আসা নয়াটারী গ্রামের সোবহান মিয়া (৪৫) বলেন, ‘মাস্ক তো কিনবের লাগবে। মাস্ক কিনমো না খরচ করমো। আর মাস্ক পরলে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ওই বাজারে আসা আরেক ক্রেতা মেনাজবাজার বাধেরপাড় গ্রামের নয়া মিয়া (৩৮) বলেন, মেনাজের পুল থাকি মেনাজবাজার যাইতে রাস্তাত পাঁচটা তামাক ভাঙা মেশিনের তামাকের ধুলাত এমনিতে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, চোখ ঝাজায়, এয়ারপর মাস্ক পরলেও তো নিশ্বাস বন্ধ হয়া যাইবে। এছাড়া হামরা তো শ্রমিক মানুষ বিড়ির কাম করি খাই। হামাক করোনা ধরবের নয়।

বেলা ১০টার দিকে সারাই বাজারে গিয়ে দেখা গেল, গরুর মাংস ও মুরগির দোকানগুলোত ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। আট-দশজন ক্রেতা একসঙ্গে গায়ে গা লাগিয়ে মাংস কিনছেন। ওই বাজারে আসা ক্রেতা কলেজমাঠ গ্রামের মশিয়ার রহমান বলেন, প্রতিদিন খবরের মাধ্যমে শুনছি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। কিন্তু বাজারে তো মানুষ আগের মতোই আসছে এবং গায়ে গা লাগিয়ে কেনাকাটা করেছে।

তবে বাজারের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা হয়। তারা বলেন, গত মাসে বাজারে যেমন ক্রেতাদের ভিড় ছিল। এখনো তেমনি ভিড়। অনেকেই মাস্ক ছাড়াই বাজারে কেনাকাটা করতে আসছে। কেনাকাটা করি চলেও যাচ্ছে। ক্রেতাদের মাস্ক মুখে দিতে বলেও অনেকেই তা শুনছে না।

বাজার করতে আসা বেশ কয়েকজন সচেতন মানুষরা সাথে কথা হয়। তারা বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধকল্পে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করা উচিত। কিন্তু অনেকেই তা মানছেন না। স্বাভাবিক সময়ের মতো অনেকেই হাটবাজারে ও রাস্তায় চলাফেরা করছেন। বাজারে গা ঘেঁষে এসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও শাকসবজি ছাড়াও ঈদের কেনাকাট করছেন। এছাড়া সকাল থেকে গভীররাত পর্যন্ত অপ্রয়োজনে অনেক শিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিত তরুণ এবং যুবকরা বাজারে, পাড়ায়, মহল্লার মোড়ে মোড়ে বসে আড্ডা দিতে দেখা যায়। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা থেকে যায়।

রংপুর মেট্রোপলিটন হারাগাছ ও কাউনিয়া থানা পুলিশ সূত্র জানায়, মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিত টহল দিচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। দিনের বেলায় এবং সন্ধ্যার পর অপ্রয়োজনে কাউকে বাইরে ঘুরতে দেখা গেলে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাহমিনা তারিন বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে। ইতোমধ্যে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক হাটবাজারে ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান ছাড়া বাজারের অন্য দোকানপাট বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা প্রতিপালন নিশ্চিতকল্পে প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালন করা হচ্ছে। এরপরও কেউ ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান ছাড়া অন্য দোকান খুললে বা হাটবাজারের মোড়ে বসে আড্ডা দিলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে