বাবাকে হারানোর ভয়ে শিকল দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখেন ছেলে

প্রকাশ | ০৪ মে ২০২১, ২১:০৭

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গীমারী গ্রামের সত্তরোর্ধ বৃদ্ধ দিনমজুর জহুরুল ইসলাম প্রায় দুই বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন কাটাচ্ছে। আর অপেক্ষার প্রহর গুনছে কবে অবসান ঘটবে তার শিকল বাঁধা জীবনের।

সরেজমিনে দেখা গেছে,পায়ের সাথে শিকল লাগিয়ে গাছে বেঁধে রাখা হয়েছে এক বৃদ্ধকে।  তার নাম জহুরুল ইসলাম। প্রায় ২ বছর আগে আকস্মিকভাবে মস্তিস্কের বিকৃতি ঘটে তার। ফলে নিরাপত্তা আর হারানোর ভয়ে দিনের বেলা বৃদ্ধ এই বাবাকে শিকলে বেঁধে রাখেন তার ছেলে শহিদুল। 

জানা যায়, দুই ছেলে তিন মেয়ে ও স্ত্রী সহ সাত সদস্যের পরিবার  নিয়ে দিনমজুরের কাজ করে সংসার  চালিয়ে আসছিল জহুরুল। পর্যায়ক্রমে ২ ছেলে ও ৩ মেয়ে সকলেই বিবাহের পর অন্যত্র বসবাস করছে ।

 

এদিকে প্রায় ৪ বছর পুর্বে জহুরুলের বৃদ্ধা স্ত্রী শরীফা বেগম পক্ষাঘাতগ্রস্থ  হয়ে অচল হয়ে পরে।অভাব আর অনটনের সংসারে অর্থাভাবে স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে না পেরে মহাসমস্যায় পড়েন বৃদ্ধ জহুরুল। তবে দূর্ভোগের শেষ এখানেই নয়। চরম দারিদ্রতা অভাব অনটন আর দুশ্চিন্তায় বৃদ্ধ জহুরুলেরও মস্তিস্ক বিকৃতি ঘটে।শুরু হয় সীমাহিন দুর্ভোগ ও মানবেতর জীবন যাপন।

 

বৃদ্ধের ছোট ছেলে রাজমিস্ত্রি শহিদুল ইসলাম নিজের অস্বচ্ছল সংসারে  তার  অসুস্থ বাবা ও মাকে দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে বিপাকে পড়েছে। বাবা ও মায়ের চিকিৎসার জন্য অর্থ পাবে কোথায়? অপরদিকে চিকিৎসা  করতে না পারায় মস্তিস্ক বিকৃত বাবা কে বাড়ীতে আটকাতেও পারেননা।  পাগল বাবা একটু সুযোগ পেলেই অজানার উদ্দেশ্যে চলে  যায় । পরবর্তীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে যায়। তাইতো দিনের বেলা বাবাকে গাছের সাথে শিকল বেঁধে রাখা হয়। আর এভাবেই শিকলে বাঁধা জীবন কাটছে  গত দুবছর থেকে।

 

তার ছেলে শহীদুল ইসলাম জানান, এর আগে একাধিক বার নিখোঁজ হয়েছিল।তাকে খুঁজে বের করাও কঠিন।  আর কতদিন দুর্ভোগ পোহাতে হবে কে জানে। জহুরুলের পঙ্গু স্ত্রী শরীফা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা সমাজের অসহায় মানুষ। আমাদের পাশে কেউ নেই। আমার ছেলেদেরও সামর্থ্য নেই যে, তারা আমাদের চিকিৎসাও ভরণ পোষণ করবে। আমরা চিকিৎসা সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার জন্য সরকার ও বিত্তবানদের দিকে চেয়ে আছি।সিঙ্গমিারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দুলু জানান,ওই পরিবারটির বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া হবে। এবং সহযোগীতা প্রদান করা হবে।

এ ব্যাপারে হাতীবান্ধা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মাহবুবুল আলম ন্যাশনাল ট্রিবিউন কে জানান, এ ব্যাপারে কেউ আমাদেরকে কিছু জানায়নি। তবে আমরা খোঁজ নিয়ে তাকে সহযোগীতা করব।

 

যাযাদি/এস