মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

​ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বোরোর বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  ১১ মে ২০২১, ১৭:৫৪

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলতি বছর বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। এদিকে করোনার প্রভাবে লক ডাউন থাকলে কোন ধরেনের শ্রমিক সংকট ছাড়াই বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যেই হাওরের ধান কাটা শতভাগ শেষ হয়েছে। অন্যান্য সমলয়ের জমির ধানও ইতিমধ্যে শতকরা ৮৫ ভাগ কাটা শেষ হয়েছে। কৃষকরা জানান, এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য পাবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় আছে কৃষক। তবে কৃষি বিভাগের দাবি বর্তমানে ধানের বাজার মূল্য খুবই ভালো। তাই ধানের দাম নিয়ে কৃষকের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারন নেই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। আবাদ করা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৯৬ হেক্টর জমি। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১হেক্টর বেশি বোরো ধানের ফলন হয়েছে। জেলায় ৩ লাখ ৮১ হাজার ৪১৫জন কৃষক পরিবার রয়েছে। চলতি মৌসুমে বোরো ভালো ফলনের জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষে কৃষকদের বীজ, সার ও পানি ইত্যাদি উপকরণ নিশ্চিত করা হয়। সরকারি পুনর্বাসন ও প্রণোদনা কর্মসূচীর আওতায় ৩ হাজার ৮০০জন কৃষককে এক বিঘা করে বোরো ধান আবাদের জন্য সার ও বীজ প্রদান করা হয়। ৩৫হাজার কৃষকের মধ্যে দুই কেজি হারে ৭০হাজার কেজি বীজ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলমান লকডাউনের কারনে যেন ধান কাটায় সমস্যা না হয় সেজন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়। ধান কাটার শ্রমিকের যেন সংকট না হয় সেজন্য জামালপুর, শেরপুর, রংপুর ও হবিগঞ্জ জেলা থেকে প্রায় ৭ হাজার কৃষক জেলায় আনা হয়। প্রশাসনের উদ্যোগে কৃষকদেরকে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্কুল ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। তাদের সব ধরনের খোঁজ-খবর রাখা হয়।

এছাড়াও জেলায় পুরানো এবং নতুন মিলিয়ে ১০৪ টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে কৃষকের ধান কাটার ব্যবস্থা করা হয়।

হাওরাঞ্চলের কৃষক মোঃ জিল্লুর রহমান বলেন, চলতি বছর বোরোর ফলন ভালো হয়েছে। যদি ধানের ন্যায্য মূল্য পওয়া যায় তাহলে কৃষক উপকৃত হবে। তিনি বলেন, কৃষক যদি ধানের সঠিক মূল্য না পায় তাহলে ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।

কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, আমার জমিতে ভালো ধান হয়েছে। আগামীতে আরো বেশি জমিতে ধান চাষ করব। তিনি বলেন, বাজারে যদি ধানের সঠিক মূল্য পাই তাহলে আমরা লাভবান হবো।

কৃষক আবু তাহের বলেন, এ বছর জমিতে ভাল ধান হয়েছে। বাজারে ধানের দাম আরেকটু বাড়লে কৃষক লাভবান হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে কাচা ধানের দাম প্রতিমন ৭৫০ টাকা এবং শুকনা ধান সাড়ে ৮৫০ টাকায় কেনা-বেচা হচ্ছে। ধানের দামটা যদি আরেকটু বাড়ে তাহলে আমাদের জন্য ভালো হবে।

এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপ-পরিচালক মোঃ রবিউল হক মজুমদার বলেন, চলতি বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় ১লাখ ১০হাজার ৮শ ৯৬ হেক্টর জমিতে বরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে ধানের ভালো হয়েছে। পাশাপাশি কৃষকও ধানের ভাল দাম পাচ্ছেন। তিনি বলেন, আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যেই আমাদের ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, আমাদের ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬ লাখ ৭৩ হাজার মেট্টিক টান এবং এবং চালে সাড়ে ৪ লাখ মেট্টিক টন। আমরা লক্ষ্য অর্জন করতে পারবো। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে হাওর অঞ্চলের ধান শতভাগ কাটা হয়েছে। হাওর ব্যতিত অন্য এলাকা ও সমলয়ের ধান শতকরা ৮৫ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। আশা করি দুত ধান কাটা শেষ করতে পারবো। তিনি বলেন, এ বছর কৃষকরাও ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন। ধান শুকানোর আগে প্রতিমন ৮৫০টাকা এবং শুকনা ধান প্রতিমন ১হাজার ৫০ টাকা করে বিক্রি করছে কৃষক। তিনি বলেন, এ বছর প্রকৃতি আমাদেরকে সহায়তা করেছে। প্রকৃতির সহায়তা আমরা পেয়েছি।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন বলেন, তিনি বলেন, ধান কাটার সময় যেন শ্রমিক সংকট না থকে সেজন্য আমরা পার্শ্ববর্তী জেলা সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যাপ্ত শ্রমিক নিয়ে এসেছি। তাদেরকে প্রান্তিক পর্যায়ে স্কুল ও আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার ব্যবস্থা করা হয়।

এছাড়াও জেলায় পুরানো এবং নতুন মিলিয়ে ১০৪ টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে কৃষকের ধান কাটার ব্যবস্থা করা হয়। তিনি বলেন, আশাকরি দ্রুততম সময়ের মধ্যে কৃষকের ধান কাটা পুরোপুরি শেষ হবে। এ জন্যে সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে।

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে