​ মামলার ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতাসহ আটক ২

প্রকাশ | ১১ জুন ২০২১, ১৮:৩৯

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

 

গাজীপুরের শ্রীপুরে মামলার ভয় দেখিয়ে মসজিদের ইমামের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতিসহ দুজনকে আটক করেছে থানা পুলিশ। গতরাতে পৌর এলাকার বৈরাগীরচালা গ্রাম থেকে তাদেরকে আটক করা হয় বলে যায়যায়দিনকে জানিয়েছেন শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন।

 

আটক হওয়া ব্যক্তিরা হলেন, পৌর এলাকার ভাংনাহাটি গ্রামের নজালীপাড়ার সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে সাব্বির আহমেদ ফরিদ (৩০)। তিনি শ্রীপুর মুক্তিযুদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। অপরজন শ্রীপুর বাঘমারা গ্রামের কলেজপাড়ার আবু তাহেরের ছেলে তানভীর আহমেদ (৩৫)। তিনি একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকায় কর্মরত।

 

ভুক্তভোগী মোঃ আব্দুল হালিম পৌর এলাকার কেওয়া পূর্বখন্ড গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে। তিনি বৈরাগীরচালা ফাতেমাতুজ জোজরা (রা) জামে মসজিদের ইমাম হিসেবে কর্মরত।

 

থানায় দেয়া এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ এপ্রিল ইমাম ভুক্তভোগী আব্দুল হালিম ইশা ও তারাবির নামাজ শেষে মোটরসাইকেল যোগে নিজ বাড়ির উদ্দেশ্য যাচ্ছিলেন। রাত সাড়ে ১০ টায় অভিযুক্তরা তাদের ৫ সহযোগীকে নিয়ে বৈরাগীরচালা গ্রামের আনোয়ারা মান্নানা ও আনোয়ারা প্যাকেজিং কারখানার (দুই ফ্যাক্টরির) মাঝে র‌্যাব ও পুলিশের লোক পরিচয়ে ভিকটিমের পথরোধ করে। অভিযুক্তরা ভিকটিমকে তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা, একটি ধর্ষণ ও একটি রাষ্ট্রদ্রোহীর ভুয়া মামলার নথি দেখায়। ওই মামলাগুলোর কারনে ভিকটিমকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। পরে তিন লাখ টাকা দাবি করে একদিনের সময় দিয়ে চলে যায়। পরে ১৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০ টায় ওই অভিযুক্তরা ভিকটিমের বাড়ির সামনে এসে নগদ এক লাখ টাকা নিয়ে যায়। পরদিন ২০ এপ্রিল রাতের একই সময়ে ওই একই স্থানে বৈরাগীরচালা এলাকায় ভিকটিমের পথরোধ করে আরও এক লাখ টাকা দাবি করে। ওই রাতে তাদরেকে ভিকটিম নগদ ৫০ হাজার টাকা ও ইসলামী ব্যাংক মাওনা শাখার ৫০ হাজার টাকার একটি চেক প্রদান করে। পরে ওই টাকা তারা ২১ এপ্রিল ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে। সবশেষ ১০ জুন বৃহস্পতিবার শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এ ঘটনায় আরও ৩ লাখ টাকা দিতে হবে বলে বিভিন্ন সময় ভিকটিমকে ফোন করে দাবি করতে থাকে। পরে টাকা নিতে গেলে ওই দুজনকে আটক করে পুলিশকে জানানো হয়।

 

এ বিষয়ে মামলার বাদী প্রথম দিকে ঘটনার বিস্তারিত জানালেও মামলা দায়ের হওয়ার পর থেকে কথা বলতে রাজি হননি।

 

এবিষয়ে অভিযুক্তদের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, মসজিদের ইমাম হালিমের সাথে পূর্ব পরিচিত থাকার সুবাদে টাকা লেনদেন ছিল ছাত্রলীগ নেতা ফরিদের। এ টাকা নেয়ার জন্যই মুঠোফোনে যোগাযোগ করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে সেখান যান ফরিদ ও তানভীর। পরে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তাদেরকে অবরুদ্ধ করা হয়। হালিম রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন কথাবার্তা বলতো। এগুলোর প্রতিবাদ করাই পরিকল্পিত ভাবে তাদেরকে ফাঁসানো হয়েছে বলেও দাবী করেন অভিযুক্তদের পরিবার।

 

উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাকিরুল হাসান জিকু মুঠোফোনে যায়যায়দিনকে জানান, ফরিদ আমাদের কমিটির কোনো পদে নেই। ইতোপূর্বে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার ব্যক্তিগত কোনো অপরাধের দায়ভার ছাত্রলীগ বহন করে না।

 

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন জানান, জনতার হাতে চাঁদাবাজ আটকের খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাদেরকে থানায় নিয়ে আসে। পরে শুক্রবার ভুক্তভোগীর দায়ের করা অভিযোগটি মামলা (নং-৩৪) আকারে দায়ের হলে দুপুরের দিকে আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।

 

যাযাদি/ এমডি