​নবাবগঞ্জে নৌকা কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়েছে

প্রকাশ | ১৯ জুন ২০২১, ১২:০০

নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি

 

 

শুরু হয়েছে বর্ষাকাল। বর্ষাকাল শুরু হওয়ার সাথে সাথে ব্যস্ততা বেড়েছে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার নৌকার কারিগরদের। বর্ষা মৌস‚ম এলেই ব্যস্ত সময় পার করেন এখানকার নৌকার তৈরির কারিগররা। নতুন নৌকার পাশাপাশি পুরানো নৌকা মেরামতের কাজও চলে সমান তালে।

 

জৈষ্ঠ্যের শুরু থেকেই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে নৌকা তৈরি করতে দেখা গেছে কারিগরদের। বর্ষায় নিচু অঞ্চলের বাসিন্দাদের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। চারদিকে বর্ষায় যখন রাস্তাঘাট তলিয়ে যায় তখন নৌকা ছাড়া কোন ভাবেই পারাপার হওয়া যায় না। কেউ কেউ কলা গাছের ভেলা তৈরি করলেও কয়েকদিন ব্যবহারের পর তা আর টিকে না। তাই বর্ষায় নিম্মাঞ্চলের একমাত্র ভরসা নৌকা। ইতিমধ্যে বিভিন্ন হাট-বাজারে নৌকা বিক্রি শুরু হয়েছে। করোনা কালেও উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর, বারুয়াখালী ও শিকারীপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় নৌকার অস্থায়ী দোকানও গড়ে উঠেছে। দিনে প্রতিটি কারিগর ১টা করে নৌকা তৈরি করে থাকেন। দোকানে ৮-১০ জন কারিগর কাজ করছে। নৌকা তৈরি শেষে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করেন মহাজন।

 

নবাবগঞ্জে নিচু অঞ্চলের মানুষের বর্ষায় যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা হওয়ায় বর্ষার আগেই কেউ কেউ নৌকা কিনে রাখছেন। কারন বন্যা হলে নৌকার চাহিদাও বেড়ে যায়। ফলে দামও বেড়ে যায়। অনেকে আবার পুরাতন নৌকা মেরামত করতে শুরু করেছে। মাঝি, জেলে ও কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, প্রতি বছরই বর্ষার আগে পুরনো নৌকা মেরামত করা হয়। অন্যথায় বষা মৌসুমে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

 

বিশেষ করে উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের বারুয়াখালী, নবগ্রাম, মাদলা ব্রাহ্মণখালী, বাহেরচর, হাগ্রাদি, দাউদপুর, গজারিয়া, শংকরদিয়া, সোনাবাজু, রাজাপুর, বালেঙ্গা, তিতপালদিয়া, ভাঙ্গাপাড়া ও জৈনতপুর এলাকায় পুরনো নৌকা মেরামত ও নতুন নৌকা তৈরির ধুম পড়েছে। সবাই বর্ষার আগেই নৌকা তৈরি ও মেরামত করে প্রস্তুত করে রাখছে।

 

নৌকার কারিগর বারুয়াখালী ইউনিয়নের ব্রাহ্মনখালী এলাকার নয়ন মন্ডল জানান, নৌকা তৈরি মেরামত তার প‚র্ব পুরুষের পেশা। তিনি গত ১০ বছর ধরে এ পেশা আছেন। প্রতিটি নৌকা তৈরিতে তার মজুরি ১ হাজার টাকা। আর এই নৌকা বিক্রি করা হয় ৩০০০-৫০০০ টাকায়। কখনো চাহিদা বেশি থাকলে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকাও বিক্রি করা হয়ে থাকে।

 

কারিগর গৌর হালদার বলেন, এ কাজের সাথে তিনি দুই যুগ ধরে আছেন। সারাবছর ঘর তৈরি করে জীবিকা নিবাহ করে। বর্ষার আগেই নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত থাকতে হয় তার। প্রতিটি নৌকা তৈরিতে তাকে ৯০০-১০০০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়। চাহিদা বেশি থাকলে কখনো ১২০০- ১৫০০ টাকা মজুরি পান। তবে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়া লাভ কম বলে জানান তিনি।

 

বারুয়াখালী ইউনিয়নের ভাঙ্গাপাড়া এলাকার মোতালেব খাঁ বলেন, আগে ভালো ভালো কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি করা হতো। এখন কড়ই, বাবলা দিয়েই বেশি নৌকা তৈরি করা হয়। নৌকা তৈরিতে কাঠ ছাড়াও মাটিয়া তৈল, আলকাতরা, তারকাঁটা, গজাল, পাতাম ইত্যাদি লাগে, যা নৌকাকে দীর্ঘদিন টেকসই রাখে।

 

যাযাদি/এসএইচ