শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

​জাপানের ‘মিয়াজাকি’ চাষ হচ্ছে এখন তেঁতুলিয়ায়

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি
  ২৫ জুন ২০২১, ১৮:৩৫

বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের সীমান্তবর্তী উপজেলা তেঁতুলিয়ায় চাষ হচ্ছে মিয়াজাকি বা সূর্যডিম নামের পৃথিবীর সবচেয়ে দামি আম। সবুজ, বেগুণি আর গাঢ় লাল রংয়ের সংমিশ্রণে দেখতে অনন্য প্রজাতির আম। দেখা মাত্রই দৃষ্টি কাঁড়বে। গাছের ডালে ডালে থোকায় থোকায় ঝুলছে এ রঙিন আম।

বলা হচ্ছে, এই আমটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দামি আম। যা সূর্য ডিম নামে বেশ পরিচিতি পেয়েছে। এই আম জাপানের প্রজাতি। জাপানের ‘মিয়াজাকি’ নামে পরিচিত। রেড মেঙ্গো বা এগস অফ সান নামেও আমটি পরিচিত। বিশ্ববাজারে এই আমের দাম ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা কেজি। বিশ্বের এই দামি আম এখন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় চাষ শুরু হয়েছে।

বাগান ঘুরে দেখা যায়, ভারতীয় সীমান্তের কোল ঘেষে কাজীপাড়া গ্রামে এই আম চাষ করছেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজী মাহবুবুর রহমান। ২০১৭ সালে এই আমের চাষ প্রথম শুরু করেন তিনি। ৮ একর জমিতে তিনি সূর্য ডিম ছাড়াও পিউজাই, বারি ফোর, বানানা এবং রেড পালমা আমের চাষ করছেন। প্রত্যেক প্রজাতির আমের গাছে ভালো ফলন এসেছে। প্রতিটি গাছেই ৫০-৬০ টি আম ধরেছে। ৪’শ থেকে ৫’শ গ্রাম ওজনের এই আম বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি আম বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকায়। সৌখিন আম ভক্তরা কিনছেন এই সূর্যডিম আম । এ বছর আরও ৪ একর জমিতে তিনি বিভিন্ন প্রজাতির আম লাগাচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে দেশের মধ্যে সূর্যডিম আমের সবচেয়ে বড় বাগান এটি।

এ প্রসঙ্গে আম চাষী কাজী মাহবুবুর রহমান জানান, নিকট আত্মীয়ের কাছ থেকে এই আমের বর্ণনা শোনার পর চারা সংগ্রহের পরিকল্পনা করেন। ২০১৭ সালে এই আমের বাগান গড়ে তোলেন। ঢাকা থেকে এই আমের চারা সংগ্রহ করে পাঠিয়ে দেয় আমার দুই মেয়ে। এদের একজন কাজী মহুয়া ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের নিউজ প্রেজেন্টার ও কাজী মৌসুমী অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী অফিসার।

তিনি জানান, জমি আমার হলেও মূলত দুই মেয়ে এই আমের বাগান করেছেন।

বাগানে শুরুতে দুই’শ সূর্য ডিম আমের চারা গাছ লাগান। পরে আরও ১’শ ৩০ টি আমের চারা লাগান। বর্তমানে তার বাগানে ৩’শ ৩০ টি সূর্য ডিম আমের গাছ রয়েছে। আমের ফলন শুরু হয়েছে ২০১৯ সাল থেকে। এই আম এখন দেশের বিভিন্ন যায়গায় সরবরাহ করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, প্রযুক্তি এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে তেঁতুলিায়ার সূর্যডিম আম বিদেশে রপ্তানী যাবে। তেঁতুলিয়ার জমিতে এই আমের প্রচুর ফলন হয়। আমটি আকর্ষণীয় রং হওয়ার কারণে অনেকেই বাগান দেখতে আসছেন। অনেকেই এসব প্রজাতির আমের বাগান করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

কাজী মাহবুবুর রহমান জানান, সরকার উদ্যোগ নিলে এই আমের চারা উৎপাদন করে চাষিদের কাছে পৌছে দিতে পারেন।

আজিজনগর এলাকার চা চাষী আবু সাঈদ মিয়া জানান, এই সূর্য ডিম আমাকে মুগ্ধ করেছে। এরকম বিদেশী জাতের আম তেঁতুলিয়ায় চাষ হওয়ায় অত্যন্ত বিস্ময়কর ব্যাপার বলা চলে। চায়ের পাশে যদি এর উৎপাদনে নতুন নতুন চাষী তৈরি হয়, তাহলে এ অঞ্চলে অর্থনীতির প্রেক্ষাপট আরো উন্নত হবে।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও চা চাষী মোখলেসুর রহমান জানান, নতুন নতুন কৃষিজাত উদ্ভাবন যেমন সমৃদ্ধ করছে কৃষিখাতকে সমতল মাটিতে বিদেশী ফল চাষ নতুন আশার আলো সঞ্চার করছে। কৃষিতে নতুন চমক ‘সূর্যডিম’ জাতের আম। সৌন্দর্য্য, স্বাদ এবং পুষ্টিগুণে সেরা হওয়ায় বাজারে চাহিদা বেশি। তেঁতুলিয়ায় যাতে এই আমের উৎপাদন বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করা উচিত। সূর্য ডিম চাষ করার পরিকল্পনা করেছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, কাজী মাহবুবুর রহমানের সূর্যডিম আমের বাগান দেখেছি। প্রচুর ফলন হয়েছে। আমের প্রকৃতি ও স্বাদও ভালো। আমরা মনে করছি এই এলাকার সমতল ভূমিতে সূর্যডিম আম চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু সূর্যডিম নয় বিদেশী উন্নত জাতের নানা প্রজাতির আম চাষও সম্ভব এই উপজেলার সমতল ভূমিতে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এসব আম চাষে সবধরনে সহযোগিতা করা হবে।

যাযাদি/ এমডি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে