​ বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন থেকেও নেই!

প্রকাশ | ০৪ জুলাই ২০২১, ১২:২৬

বাঘারপাড়া (যশোর) প্রতিনিধি

 

 

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিনটি পনেরো বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। সেই সাথে টেকনোলজিস্ট ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাবে নতুন আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিনটিও নিয়মিত চালু হচ্ছে না। এমনকি হাসপাতালে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষাও মাঝে মাঝে থমকে যাচ্ছে।

 

অন্যদিকে উপজেলা সদরের ডায়াগনোস্টিক সেন্টারগুলো ত্রুটিতে বন্ধ করে দেওয়ায় ভোগান্তির শেষ নেই সেবা গ্রহিতাদের। উপজেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতালটিতে এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন নিয়মিত চালু না থাকায় বাধ্য হয়ে জেলা শহরের বেসরকারি ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে গিয়ে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে।

 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, পনেরো বছর আগের নতুন এক্স-রে মেশিনটি ইনস্ট্রল করতে গিয়ে চালু করতে পারেনি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এবিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বারবার চিঠি দিয়েও সমাধান হয়নি। আবার হাসপাতালটিতে সদ্য প্রদান করা আল্ট্রাসনোগ্রাফির মেশিনটিও লোকবলের অভাবে পড়ে আছে। মাঝে মাঝে হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মনিরুজ্জামান দু’একটি অসহায় রোগীদের আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে দেন। টেকনোলজিস্ট ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাবে নিয়মিত আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা হয় না। এবিষয়েও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

 

জানা যায়, বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যার। এখানে প্রতিদিন আউটডোরে প্রায় ৪শ’ থেকে সাড়ে ৫শ’ রোগী সেবা নেয়। আরও ২৫-৩০ জন রোগী ভর্তি হয়। প্রতিদিন প্রায় ৫শ’ রোগীর সেবা দেওয়া হয় হাসপাতালে। রোগীর রোগ নির্ণয়ে সরকার এক্স-রে মেশিন সরবরাহ করলেও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির কারণে সেটি মানুষের উপকারে আসছে না। ফলে সাধারণ মানুষ সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিছু দিন আগে হাসপাতালে অল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিনটি উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন প্রদান করেন। এতে রোগীরা খুশি হলেও এখন বিপাকে পড়েছেন তারা। এসব পরীক্ষা করাতে এখন জেলা শহরে ছুটতে হচ্ছে। ত্রুটি থাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য উপজেলা সদরের সব কয়টি ডায়াগনোস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। সরকারি হাসপাতালের উল্লেখযোগ্য মেশিনগুলো অকেজো ও নিয়মিত চালু না থাকায় বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগীদের।

 

হাসপাতালে ভর্তি ও আউটডোরে সেবা নিতে আসা কয়েকজন রোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রক্তের কয়েকটি পরীক্ষা ছাড়া হাসপাতালে বড় ধরনের পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। যে পরীক্ষাগুলো আগে স্থানীয় বেসরকারি ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে হতো, সেগুলো এখন বেশি টাকা খরচ করে যশোর থেকে করে আনতে হচ্ছে। এতে যেমন ভোগান্তি বেড়েছে তেমনি ব্যয় বহুল হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে মোটামুটি সব পরীক্ষা হলে খরচও কম লাগত। গরিব অসহায় রোগীরাও সাশ্রয়ী হতো। দ্রুত হাসপাতালের মেশিন মেরামতের দাবি জানিয়েছেন তারা।

 

বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রায় ১৫ বছর আগে এক্স-রে মেশিনটি সরবরাহ করা হয়। ওই সময় এক্স-রে মেশিন ইন্সস্ট্রল করতে গিয়ে চালু করতে পারেনি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। চার বার মেরামত করতে টেকনিক্যাল টিম এসেছে। তারা ঠিক করতে পারিনি। আমি দেড় বছরের মতো দায়িত্ব পালন করছি। প্রতিমাসে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখছি এক্স-রে মেশিনটি চালু করার জন্য। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি।

 

তিনি আরও বলেন, সরকারি হাসপাতালে ৭০ টাকায় এক্স-রে করানো যায়। মেশিন চালু না থাকায় রোগীরা বাধ্য হয়ে বেসরকারি ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে যাচ্ছে। স্থানীয় ডায়াগনস্টিকগুলো ত্রুটিতে বন্ধ হওয়ায় এক্স-রে প্রায় সবাই যশোর থেকে পরীক্ষা করে আনছে। ২০০ টাকা মূল্যের পরীক্ষা করাতে ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা খরচ লাগছে।

 

এবিষয়ে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

 

যাযাদি/ এমডি