'আমি জীবনেও ভাবিনি আমার একটা ঘর হবে'

প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০২১, ১৫:১৪

বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি

 

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে খুশি উপকারভোগীরা। কয়েকমাস আগেও যারা ভূমিহীন ও গৃহহীন ছিলেন তারা কল্পনাও করেননি যে মুজিববর্ষে পাবেন জমিসহ বাড়ি।

 

এ রকমই একজন স্বামী পরিত্যক্তা ফাতেমা বেগম। আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে আবেগাপ্লুত তিনি।

 

ফাতেমা জানান, দীর্ঘদিন তার স্বামী তাকে ছেড়ে আর একজনকে বিয়ে করে খোঁজ খবর রাখে না, বাপেরও জমিজমা নাই। ঘর পেয়ে তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী আমারে একটা ঘর দিছে, দুই শতক জমি দিছে, মাথা গুজার একটা ঠাঁই পেয়েছি, আমি ভীষণ খুশি, আমি জীবনেও ভাবি নাই আমার একটা ঘর হবে।'

 

 

অপর উপকারভোগী খুশি বেগম। খুশি বেগমও স্বামী পরিত্যক্তা। এলাকার বিত্তবানদের বাড়িতে ঝি এর কাজ করেন, কখনো আবার কাঁথা সেলাই করে কোন মতে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেছেন। খুশি বেগমের না ছিল জমি, না ছিল ঘর। পরের ঘরে মানুষের দয়া দক্ষিণায় যদিও একটু ঠাঁই মিলেছে কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি বেশি দিন।

 

খুশি বেগম বলেন, আমি জীবনে কল্পনাও করিনি আমার নিজের একটা ঘর হবে, হবে একটি ঠিকানা। সমাজের আর দশজনের মত বলতে পারবো ‘আমার বাড়ি’।  যা স্বপ্নেও কোনদিন ভাবিনি, তা প্রধানমন্ত্রী আমাদের দিয়েছেন। আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে দোয়া করি প্রধানমন্ত্রী যেন ভাল থাকেন, সুস্থ্য থাকেন।

 

ঘর পেয়ে খুশি জামেলা বেগমও। একই প্রকল্পের বাসিন্দা জামেলা বেগম জানান, ২৫ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল, যৌতুক লোভী স্বামীর অত্যাচর-নির্যাতনে সংসার করতে পারেনি। বাপের বাড়িও জায়গা হয়নি, অবশেষে এখন প্রধানমন্ত্রীর জন্য নিজের একটা বাড়ি হয়েছে। একটি জুট মিলে শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে সে। জুট মিলের অন্য নারী শ্রমিকদের সাথে তার বসবাস। জুট মিলের নিকটবর্তী শিবানন্দপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে নিঃস্ব ও গৃহহীন অন্যদের মতই একটি ঘর পেয়েছে সে, পেয়েছে দুই শতক জমি। শেখ হাসিনার জন্য তার একটি আশ্রয় হয়েছে। এতে উছ্বসিত জামেলা বেগমও।

 

জামেলা বেগম বলেন, ঘর পেয়েছি, পেয়েছি জমি। প্রধানমন্ত্রী শুধু ঘরই দেয়নি বিদ্যুৎ দিয়েছে, খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করেছেন। ঘর করার সময় আমরা প্রতিদিনই দেখভাল করেছি, ঘরের সামনে সামান্য নিচু জমি ছিল সেগুলোও মাটি দিয়ে ভরাট করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আমরা প্রধানমন্ত্রীর এই ঋণ শোধ করবো কীভাবে?। দোয়া করি আল্লাহ শেখ হাসিনার হায়াতদারাজ করুক।

 

শহর পরিচ্ছন্নতাকর্মী শাহাদৎ দম্পতি। এই দম্পতি থাকতেন বোয়ালমারী বাজারে এক গণ-শৌচগারে। শাহাদৎ মনে করতেন তাদের জন্মটাই পাপের বোঝা। কখনো সমাজের বিত্তবানদের দয়ার পাত্র হয়ে, কখনোবা রাস্তার পাশে কোনমতে ঝুপড়ি ঘর তুলে আর সর্বশেষ গণ-শৌচাগারই হয়ে উঠেছিল তাদের বাসস্থান। বাজার পরিচ্ছন্নকর্মী এই দম্পতি স্বপ্নেও কখনো কল্পনা করেনি নিজেদের একটি ঘর হবে, হবে নিজের নামে এক টুকরো জমি। মুজিববর্ষে বোয়ালমারী ইউনিয়নের সৈয়দপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের শাহাদৎ দম্পতি পেয়েছে একটি ঘর।

 

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘর পেয়ে শাহাদৎ দম্পতি বেশ সুখেই দিনযাপন করছে।

 

বোয়ালমারী উপজেলা সদর ইউনিয়নের সৈয়দপুরে প্রথম ধাপের এই প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে ১০টি ঘর। মাঝা-মাঝিতে নিচু জমি হওয়ায় বৃষ্টিতে পানি জমতে পারে তাই পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ড্রেন।

 

উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের ধোপাপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মোট ২০টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানেও বৃষ্টিতে যাতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। সাতৈর ইউনিয়নের ডোবরা আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘেঁষা একটি জলাশয় থাকায় ভবিষ্যতে ঝুঁকি এড়াতে নির্মাণ করা হয়েছে গাইড ওয়াল, যাতে বৃষ্টি বা বন্যার পানিতে মাটি ধুয়ে গিয়ে ঝুঁকির সৃষ্টি না করে। একই চিত্র দেখা গেছে বাগডাঙ্গা আশ্রয়ণ প্রকল্পেও।

 

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বোয়ালমারীতে গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়েছে দুইকক্ষ বিশিষ্ট ৩১৫টি সেমিপাকা ঘর যা ইতোমধ্যেই সুবিধাভোগী গৃহহীনদের দুই শতাংশ জমির মালিকানাসহ হস্তান্তর করা হয়েছে। গৃহগুলো নির্মাণশৈলী ও গুণগতমান অনুমোদিত ডিজাইন প্রাক্কলন অনুযায়ী হয়েছে। আমরা কাজগুলো সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করেছি। বৈরী আবহাওয়া, অতিবৃষ্টি, করোনা কালীন প্রতিকূল অবস্থায় শ্রমিক সংকট থাকায় গৃহগুলো নির্মাণে একটু বেগ পেতে হয়েছে। কোথাও সমস্যা সৃষ্টি হলে তড়িৎ গতিতে সেসব সমস্যা সমাধান করে কাজের গুনগতমান নিশ্চিত করেই নির্মাণ করা হয়েছে এইসব গৃহ। কয়েকটি প্রকল্পে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে  জলাবদ্ধতা হতে পারে, তাই নির্মাণ করা হয়েছে জলনিষ্কাশন ড্রেন ও গাইড ওয়াল। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ সম্পন্ন করে আমাদের কাজ শেষ হয়ে যায়নি, বরং আগামী দিনগুলোতে এই পরিবারগুলোর পাশে থাকতে বোয়ালমারী উপজেলা প্রশাসন বদ্ধপরিকর।

 

যাযাদি/ এমডি