বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঝোপের ছোট্ট ছাপড়ায় হারুনের সংসারের পাশে নবাবগঞ্জের ইউএনও

নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি
  ১৪ জুলাই ২০২১, ১১:২১

ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় ইছামতির নদীর তীরের ঝোপে ছোট্ট ছাপড়ায় পরিবার নিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বসবাস করছে নিঃসম্বল হারুন।

উপজেলার বাহ্রা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের আগলা ব্রীজের পূর্ব পাশের ঢালের দক্ষিণে চৌকিঘাটা তরুণ সংঘের পেছনের ঝোপের নদীর তীরের ওই ছোট্ট ছাপড়ায় থাকেন মো. হারুন (৪৬), স্ত্রী আছমা থাতুন (৪৩) ও তাদের একমাত্র মেয়ে সম্পা (১২)।

হারুন উপজেলার আগলা খাঁন হাটি গ্রামের মৃত কায়েম ও ছালেহা দম্পতির ছোট ছেলে। তার মানষিক সমস্যা থাকায় আশেপাশের এলাকার বাসিন্দারা তাকে পাগলা হারুন নামে একনামে চিনে। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর ভিটে বিক্রি করার পর সব টাকা তার বড় ভাই নিয়ে চলে গেছেন। হতদরিদ্র হারুন মানুষের কাছে চেয়ে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

সরজমিনে দক্ষিণ চৌকিঘাটা বলমান্তা গ্রামে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মন্টু মিয়া (৫৮) ও স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. আলাউদ্দিনসহ (৬০) আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, হারুন অত্যন্ত অসহায় ও নিরীহ মানুষ। লোক হিসেবেও ভালো। আমরা তার খারাপ কিছু কখনও দেখিনি। ভিক্ষাবৃত্তি ও মানুষের কাছে চেয়েচিন্তে টাকা ও খাবার সংগ্রহ করাই তার কাজ। তার কিছুটা মানষিক সমস্যা রয়েছে। তার স্ত্রীরও একই অবস্থা। তাদের মেয়েটি দিন দিন বড় হচ্ছে। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে তাদের মেয়ে পড়ালেখা করতে না পেরে অসুস্থ মাকে ঘরের কাজে সাহায্য করেন। দীর্ঘ প্রায় পনেরো বছরের বেশি সময় ধরে তারা ওই ঝোপে ভয়ের মধ্যে থেকে খুব দুঃখ কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

হারুনের সাথে কথা বলতে ওই ঝোপের বাড়িতে গেলে তিনি বলেন, বাবা-মা মারা যাওয়ার পর আমাগো আগলা খাঁন হাঁটির গ্রামের বাড়ির পৈত্রিক সম্পত্তি আমার একমাত্র বড় ভাই বারেক (৪৯) ও আমি মিলে বেইচা দেই। পরে আমার ভাই প্রতারণা করে সম্পত্তি বেচার সব টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর আর তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি বা সেও আমার কোনো খোঁজ খবর নেননি। সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার পর বাহ্রা ইউনিয়নের কোমরগঞ্জ হাঁটের সরকারি জায়গায় বাঁশের খুঁটি দিয়ে তারমধ্যে তাবু ও ব্যানার লাগিয়ে কোনো রকমে একটি ঘর তৈরি করে দশ বছর কাটাইছি। সেখানে আমার একমাত্র শিশু ছেলেকে শিয়ালে কামড়ালে সে মইরা যায়। এর লিগাই তো আমি খালি কই আমার ছেলেরে শিয়ালে খাইছে।

পরে সেখান থেকে তখনকার চেয়ারম্যান আমাকে উঠায় দিলে আগলা দক্ষিণ চৌকিঘাটা গ্রামের মাসুদ খান মজলিস ভাই তার চাচাতো ভাই ইসতিয়াক আহমেদের সাথে কথা বলে তার নদীর পাড়ের উপরের ঝোপের জায়গায় আমাগো বিনা পয়সায় থাকতে দেয়। এখানে ওই একইভাবে ঘর তোলে পনেরো বছর ধরে থাকতাছি। আমি ভিক্ষা করে ও মানুষের কাছে চেয়েচিন্তে অতি কষ্টে সংসার চালাই।

সামাজিক মাধ্যম বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে হারুনকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা হলে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে। ঝোপের নদীর তীরের হারুনের ঝুপড়ি পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচ এম সালাউদ্দিন মনজু। এ সময় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অসহায় পরিবারটিকে করা হয় খাদ্য সহায়তা।

ইউএনও সালাউদ্দিন মনজু বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে হারুনের এই বসবাসের স্থানটি আমরা পরিদর্শনে এসেছি। দীর্ঘদিন ধরে সে এই ঝুপড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। এর আগে এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তার জন্য জমি আছে ঘর নেই প্রকল্পে একটি ঘরের ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু জমি না থাকায় তাকে ঘরটি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এখন আমরা প্রধানমন্ত্রীর উপহারের জমিসহ ঘর তাকে উপহার দিতে চাই। এজন্য এই প্রকল্পের উপজেলা কমিটির মাধ্যমে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

হারুন কোনো পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। ভিক্ষাবৃত্তি করে তিনি অতিকষ্টে তার সংসার চালাচ্ছিল। আমরা চাইবো এছাড়াও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য যদি তার পুঁজির প্রয়োজন হয় সেক্ষেত্রেও তাকে যথাসম্ভব সহযোগীতা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

হারুনের মেয়ের লেখাপড়ার বিষয়ে ইউএনও সালাউদ্দিন মনজু বলেন, যেখানে তাদের বসবাসের জন্য জমিসহ ঘরের ব্যবস্থা করা হবে সেখানে হারুনের মেয়ের পড়ালেখার ব্যবস্থা করা হবে।

এ সময় ইউএনর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) অরুণ কৃষ্ণ পাল, প্রকল্প কর্মকর্তা হাসান আহমেদ, বাহ্রা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাফিল উদ্দিন মিয়া প্রমুখ।

যাযাদি/ এমডি

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে