গোয়ালন্দে বালু ব্যবসায়ীদের আগ্রাসনে ফুটপাতে একটি অসহায় পরিবার

প্রকাশ | ২৬ জুলাই ২০২১, ১৫:২৩

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি

 

গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ক্যানাল ঘাট এলাকায় প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীদের আগ্রাসনে একটি পরিবার বাড়িঘর ছাড়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অসহায় পরিবারটি বর্তমানে  ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে একটি পরিত্যক্ত দোকান ঘরে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।

 

মহাসড়কের পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) অনেকটা জায়গা দখল করে ব্যবসায়ীরা গত কয়েকদিন ধরে বালুর চাতাল তৈরি করছেন। চাতালের মধ্যে অসহায় পরিবারটির ঘর থাকায় পরিবারটিকে সেখান থেকে এক প্রকার জোর করে উচ্ছেদ করা হয়।

 

জানা গেছে, ক্যানেল ঘাট সংলগ্ন মহাসড়কের পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গায় ঘর তুলে বসবাস করছিলেন ইদ্রিস খান (৫৫) নামের এক হতদরিদ্র ব্যক্তি। ২ বছর আগে দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের উজানে জয়দার মেম্বার পাড়ায় নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে তার বসতভিটা বিলীন হয়ে যায়। পরে তিনি পরিবার -পরিজন নিয়ে ক্যানালঘাটের এই জায়গায় এসে আশ্রয় নেন। পরবর্তীতে এনজিও’র ঋণ এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে ধারদেনা করে তিনি জায়গাটি উঁচু করে সেখানে ঘর তোলেন। কিন্তু গত ১০ জুলাই স্থানীয় কয়েকজন বালু ব্যাবসায়ী  নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদেরকে সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য করে।

 

সরজমিনে আলাপকালে ইদ্রিস খান (৬০) ও তার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৫০) বলেন, নদী ভাঙ্গনের পর ক্যানাল ঘাটের ওই জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। অন্য কোথাও তাদের  কোন জায়গা-জমি নেই। এখানে বাড়ি করতে ব্রাক থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নেই। এছাড়া আরেকজনের কাছ থেকে বার্ষিক ২০ মণ ধান দেয়ার চুক্তিতে ২০ হাজার টাকা ধার করি। নিজেরা খাই না খাই নিয়মিত কিস্তির টাকা পরিশোধ করে যাচ্ছি। সেই সাথে নিজেদের কোন জমি না থাকায় বাজার থেকে ধান কিনে ২০ হাজার টাকার চুক্তি মিটিয়ে যাচ্ছি।

 

ইদ্রিস খান আরও বলেন, বাড়িটি করতে তার মোট ৮০ হাজার  টাকা খরচ হয়। এখন নানা ধরনের ভয়ভীতির কারণে সেখান থেকেও চলে আসতে বাধ্য হলাম। আসার সময় অবশ্য তারা আমাদের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩৫ হাজার টাকা দিয়েছে। ঘর ভেঙে আনতে সেই টাকার অর্ধেক খরচ হয়ে গেছে। বাকি টাকাও লকডাউনে বসে বসে খেয়ে প্রায় শেষ। এখন আলিফ শেখ নামে একজনের পরিত্যক্ত দোকান ঘরে আশ্রয় নিয়েছি। বড় ছেলে মমিন বউ-বাচ্চাদের নিয়ে তার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।

 

আমি এখানে স্ত্রী, প্রতিবন্ধী মেজ ছেলে আমিন ও ছোট ছেলে জমিরকে নিয়ে কোন মতে মাথা গুজে আছি। এখন দোকান মালিক যদি কখনো এখান থেকে  নামিয়ে দেয় তাহলে আমাদের আর দাড়াবার জায়গা নেই।

 

ভুক্তভোগী পরিবারসহ স্থানীয় কয়েকজন জানান, আওয়ামীলীগ নেতা বাবু মোল্লা, যুবলীগ নেতা আলাউদ্দিন, আজাদ সরদার, হাবি মন্ডলসহ আরও কয়েকজন মিলে ক্যানালঘাটের সরকারি বিশাল এলাকা জুড়ে কয়েকদিন ধরে বাঁশ-খুঁটি পুঁতে বালির চাতাল তৈরি করছেন। চাতালের মধ্যে ইদ্রিস খানের বাড়ি থাকায় তাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

এছাড়া আশপাশের আরও কয়েকটি বাড়ি ও দোকান মালিক জানান, তারা বালু ব্যবসায়ীদের কারণে উচ্ছেদ আতংকে রয়েছে। চাতালটির কারণে সেখানকার খেয়াঘাট ও গরু পারাপারের ট্রলার ঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এভাবে আশপাশে আরও কয়েকটি চাতাল তৈরির কাজ চলছে।

 

এ বিষয়ে যুবলীগ নেতা আলাউদ্দিন বলেন, আমরা ইদ্রিস খানকে সরে যেতে বাধ্য করিনি। তার বাড়িটি নীচু হওয়ায় বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ার আগেই নিজে থেকে সরে গেছেন। তাকে কোন টাকা-পয়সাও দেইনি।

 

সরকারি জায়গায় চাতাল নির্মাণের বিষয়ে বলেন, মহাসড়ক থেকে ৯০ ফুট বাইরে পাবলিকের জায়গায় আমরা চাতাল করছি। তবে পুঁজি সংকটের কারণে আপাতত আমাদের কার্যক্রম বন্ধ আছে।

 

এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আজিজুল হক খান বলেন, মহাসড়কের দুইপাশে সওজ’র জায়গায় কোন বালুর চাতাল নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। রাতের অন্ধকারে কেউ কোন চাতাল করলেও তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। অসহায় ইদ্রিস খানের বিষয়েও খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

যাযাদি/ এমডি