ওসমানীনগরে মসজিদে কাঁঠাল নিয়ে সংঘর্ষ : পাল্টাপাল্টি মামলা ওসমানীনগর (সিলেট) প্রতিনিধি

প্রকাশ | ২৬ জুলাই ২০২১, ১৮:৫২

অনলাইন ডেস্ক

 

সিলেটের ওসমানীনগরে মসজিদে কাঁঠালের নিলাম নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষের ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দুটো পক্ষ পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে থানায়। দুটি মামলায় আসামি দেখানো হয়েছে মোট ৪৫ জনকে। মসজিদের মধ্যে এমন অপ্রীতিকর ঘটনায় জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

 

শুক্রবার (২৩ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের বাইতুল মামুর জামে মসজিদে একটি কাঁঠালের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। নিলামকে কেন্দ্র করে উপজেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি মাওলানা সুয়েব ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাওছার আহমদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নিলে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে মসজিদ অঙ্গন ও আশপাশের এলাকা। এ ঘটনায় উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাসহ ১৭ জন আহত হন। খবর পেয়ে উমরপুরের ৮ ইউপি সদস্য ও স্থানীয় প্রবীণরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সালিশের আশ্বাসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এরপর আহত সবাইকে সিলেটের এমএজি ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

 

এদিকে শনিবার গভীর রাতে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা রেকর্ড করা হয়। মাওলানা সুয়েবের পক্ষ থেকে মামলার বাদী হয়েছেন উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল আহমদ। এ মামলায় ১৩ জনের নামোল্লেখ করে আরও সাতজনকে অজ্ঞাত (দেখলে চিনব) আসামি করা হয়েছে। অন্যদিকে কাওছার আহমদের পক্ষে মামলায় বাদী হয়েছেন সংঘর্ষে আহত আবু বকর সিদ্দিকীর ছেলে সাইফুল আলম। তার মামলায় মোট ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে অজ্ঞাত ৮ জন। মামলার পর থেকে উভয়পক্ষ এলাকা ছাড়া। পাশাপাশি মামলার অভিযুক্ত নন, এমন অনেকেও ভয়ে আত্মগোপন করেছেন। রোববার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সিলেটের এডিশনাল এসপি (ওসমানীনগর সার্কেল) মো. রফিকুল ইসলাম। এ সময় ওসি (ইনচার্জ) শ্যামল বণিক, দুটি মামলার ইনভেস্টিগেশনের দায়িত্বে থাকা ওসি (তদন্ত) মাছুদুল আমিন ও এসআই স্বাধীন চন্দ্র তালুকদার তার সঙ্গে ছিলেন।   

 

সরেজমিনে কামালপুর গ্রামে গেলে স্থানীয়রা জানান, প্রায় দেড় বছর আগে মাওলানা সুয়েবের সাহায্য নিয়ে যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল আহমদ প্রতিবেশী আবু বকর সিদ্দিকী গং ও তার বাড়ির উঠোনের মধ্যখানে ১০ ফুট উচ্চতার একটি আড়াআড়ি দেয়াল নির্মাণ করেন। এতে আবু বকর সিদ্দিকী গংদের চলাচলের রাস্তা ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ করে দেন। গ্রামের সালিশানরা দেয়াল নির্মাণ না করার অনুরোধ করলেও তাতে কর্ণপাত করা হয়নি। গত ১৮ জুন বাইতুল মামুর জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লি মাওলানা সুয়েব আহমদের মরহুম পিতার নামে বাড়ি বাড়ি শিরনি বিতরণ করা হয়। সে সময় শিরনি গ্রহণে অপারগতা জানান আবু বকর গংরা। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে মাওলানা সুয়েব গংরা আবু বকর সিদ্দিকী, কাওছার আহমদ, শাহীন মিয়া, মুজিব মিয়া ও প্রবাসী সামসুল ইসলামের পরিবারকে ‘একঘরে’ ঘোষণা করেন। এতে গ্রামের লোকজন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন হেফাজতে ইসলামের নেতা ও উপজেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি মাওলানা সুয়েব ও অন্য পক্ষের নেতৃত্বে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাওছার আহমদ। গত ১৬ জুলাই মসজিদের একটি কুমড়ার নিলাম নিয়ে দুই পক্ষ বাগ্বিতণ্ডায় লিপ্ত হলে অন্যদের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। ২৩ জুলাইয়ের সংঘর্ষের পর আতঙ্কে মসজিদে কমে গেছে মুসল্লির সংখ্যা।

 

একপক্ষের মামলার বাদী সাইফুল আলম শ্যামল বলেন, ‘আমার আব্বা, চাচারা জুমার নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলেন। নামাজ শেষে বৃষ্টি থাকায় সবাই মসজিদে আটকা পড়েন। এরপর কাঁঠালের নিলামকে কেন্দ্র করে কথাকাটাকাটির জেরে বিবাদিরা মসজিদের উঠোনে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। বিবাদীদের এই হামলা আমরা পূর্বপরিকল্পিত হিসাবেই মনে করছি। কারণ, হঠাৎ করে এত লাঠি, রড, পাইপ আসার কথা না। তাদের বাড়ি মসজিদ পার্শ্ববর্তী হওয়ায় তারা আমাদের চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছিল। আমরা সবাই আওয়ামী পরিবারের সন্তান। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হচ্ছে- উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির নেতৃত্বে আমাদের ওপর এই হামলা চালানো হয়েছে।’

 

ধারণকৃত ভিডিও চিত্রে তাকে লাঠি হাতে দেখা যাওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন অপর মামলার বিবাদী উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইকবাল আহমদ। তিনি বলেন, সংঘর্ষের সময় আমি উভয়পক্ষকে সামলানোর চেষ্টা করছিলাম। এ সময় একজন আমার মাথায় আঘাত করলে আমি তার হাত থেকে লাঠি কেড়ে নেই। ভিডিও চিত্রে সেই লাঠিসহ আমায় দেখানো হয়েছে। বিবাদীদের হামলায় আমাদের বেশ কয়েকজন রক্তাক্ত হয়েছেন। আমার মাথার দুটি ৮টি সেলাই ও হাতে আঘাত রয়েছে।

 

স্থানীয় ইউপি সদস্য (১নং ওয়ার্ড) জুয়েল আহমদ বলেন, ‘সংঘর্ষের খবর পেয়ে আমিসহ ৮ ইউপি সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ করি। উভয়পক্ষকে সালিশে বসার অনুরোধ করলে মাওলানা সুয়েব গংরা আমাদের কাছ থেকে এক দিন সময় নেন। কিন্তু পরবর্তীতে কাউকে কিছু না জানিয়ে এ বিষয়ে তার পক্ষ থেকে থানায় মামলা দিলে অপর পক্ষও পাল্টা মামলা দিয়েছে। মসজিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

 

ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শ্যামল বণিক বলেন, মসজিদে সংঘর্ষের ঘটনায় এলাকার জনমনে ক্ষোভ বিরাজ করছে। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় উভয় অভিযোগ মামলা আকারে নিয়ে আসামি ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অধিকতর তদন্ত করে উভয় মামলার চার্জশিট দ্রুত প্রদান করা হবে। কাউকে ছাড় বা মিথ্যে হয়রানি করা হবে না। 

 

যাযাদি/এস